Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাচ মিসেই সর্বনাশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বসেরা ইউনিট হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু একটা সময় মনে হচ্ছিলো, বাংলাদেশ ফিল্ডিং ইউনিট হিসেবে অন্তত বিশ্বমানের হয়ে উঠেছে। সেই মনে হওয়াটাকে একেবারেই ভ্রান্তি বানিয়ে ২০২১ সালে ছেলেমানুষী স্তরের ফিল্ডিং শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এই বছর জুড়েই বিশেষ করে আকাশে ওঠা ক্যাচ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নামকরা ফিল্ডাররা শিশুতোষ সব ভুল করেছেন। আর বছরের শেষ প্রান্তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটানা ক্যাচ মিস করেই খাদে পৌঁছে গেছে দল।
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এখনও ‘ক্যাচ মিস খেলার অংশ’ স্লােগান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দলের এই শিশুতোষ ফিল্ডিংয়ে উচ্চতর কতৃপক্ষ যে নাখোশ, সেটা বোঝা গেছে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের কথায়। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, এটা একেবারে মেনে নেওয়ার মত ব্যাপার নয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ পর্যন্ত চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নয়টি ক্যাচ মিস করেছে; যার ৭টিই আকাশে ওঠা রেগুলেশন ক্যাচ ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মেহেদী হাসান এক রোস্টন চেজের ক্যাচ ফেলেছেন দু’বার। আফিফ জেসন হোল্ডারের ক্যাচ ফেলেছেন। হোল্ডার এরপর দুই ছক্কা মেরে ক্যারিবিয়ানদের স্কোর ১৪২ রানে নিয়ে গেছেন। ফিল্ডিং মিসের আরও নজীর এই ম্যাচেই ছিলো। লিটন দাস নিকোলাস পুরানের স্ট্যাম্পিং মিস করার পর তিনি ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিটন দুটো ক্যাচ ফেলেছেন আউটফিল্ডে। ভানুকা রাজাচ্ছে ১৪ রানে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। আর আসালঙ্কার ক্যাচ ফেলেন লিটন ৬৪ রানে। এই জুটি পরেন পঞ্চম উইকেটে ৮৬ রান যোগ করে। ৪ উইকেটে ৭৯ রান তুলতে পারা শ্রীলঙ্কা ১৭২ রান তুলে ফেলে এই ফিল্ডিং বদান্যতায়। পাঁচদিন আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিচে ওমানের যতিন্দর সিংয়ের একেবারে সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন। সেটা অবশ্য খুব প্রভাব ফেলতে পারেনি।
এই ৯টি ক্যাচের মধ্যে ৭টিই ছিলো আকাশে ওঠা বল। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, আফিফ হোসেন এই ক্যাচগুলো ফেলেছেন। মজার ব্যাপার হলো, এরা সবাই ভালো ফিল্ডার বলে পরিচিত।
সাধারণত এরকম ধারাবাহিক ক্যাচ ফেলার ঘটনাকে দলের সমন্বয়হীনতা ও সকলের মনোযোগ হারিয়ে ফেলার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বোলিং কোচ ওটিস গিবসন এই ক্যাচ মিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজী হননি। তিনি সেদিন বলছিলেন, একটা-দুটো ক্যাচ ড্রপ হতেই পারে, ‘ক্যাচ তো ড্রপ হয়ই। প্রত্যেক ক্রিকেট ম্যাচেই একটা দুটো ক্যাচ পড়ে। অবশ্যই ক্যাচ ধরনা বা না ধরা খেলার ফলাফলে প্রভাব ফেলে। তবে এখন এটা নিয়ে বেশিই কথা হচ্ছে। আমরা অনেক ক্যাচিং অনুশীলন করছি। ছেলেরা শেষ পর্যন্ত মাঠে অনেক চাপে থাকে। ফলে ক্যাচ ফেলার মত ভুল হয়ে থাকে।’
গিবসন অন্তত এই ক্যাচ ফেলার ব্যাপারটিকে বিশেষ দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখতে চাইলেন না, ‘এটা দুশ্চিন্তা কিনা? আমি বলবো না যে, এটা বিশেষ দুশ্চিন্তার ব্যাপার। কারণ, আমরা প্রতিদিন অনুশীলন করছি। তবে ঘটনা হচ্ছে, ক্যাচ পড়লে শেষ পর্যন্ত খেলায় তার প্রভাব পড়ে, এটা নিয়ে কথা হয়। আমরা আমাদের এসব স্কিল নিয়ে কাজ করছি, ক্যাচিং নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছি।’
বাংলাদেশ দল অবশ্য গত ক’বছর কয়েক ধরেই খুব বাজে ফিল্ডিং করছে এবং আকাশে ওঠা ক্যাচ মিস করছে। ২০১৮ সাল থেকে এটা বাংলাদেশের নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরের কথা ধরলে বাংলাদেশ অন্তত আটটা ম্যাচে লড়াই থেকে ছিটকে গেছে এই ক্যাচ মিস করার কারণে।
একটা ধারণা করা হচ্ছে যে, খেলোয়াড়রা আসলে খেলায় মনোযোগ রাখতে পারছেন না। সেটা মাঠের বাইরে অনেক বেশি কথার কারণেও মনোযোগ হারাতে পারেন তারা। আবার অনেকে বলছেন, বায়ো বাবলে টানা দিন কাটানোর ফলে খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে গেছেন। এর ফলেই খেলায় মন রাখতে পারছেন না তারা।
কারণ শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, এটা আসলে বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ, স্কিল নয়, স্রেফ মনোযোগের অভাবে বাংলাদেশ হেরে চলেছে ক্যাচ ফেলে দিয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: "টি২০ বাংলাদেশ"

৩ নভেম্বর, ২০২১
২ নভেম্বর, ২০২১
৩১ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ