Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন ঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি তাজিকিস্তানের, মধ্য এশিয়ায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৫:২৮ পিএম | আপডেট : ৭:০৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

আফগানিস্তানের সাথে নিজেদের সীমান্তের কাছে একটি নতুন চীনা ঘাঁটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে তাজিকিস্তান। কারণ, তাজিক কর্মকর্তারা তাদের দক্ষিণের প্রতিবেশী দেশটি থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

দুশানবেতে তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চীনা দূতাবাস থেকে পাঠানো একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাজিক সরকার দেশটিতে বিদ্যমান একটি চীনা সামরিক ঘাঁটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বেইজিং-এ হস্তান্তর করার এবং চীন থেকে সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ভবিষ্যতের কোনো ভাড়া মওকুফ করার প্রস্তাব দিয়েছে। রেডিও ফ্রি ইউরোপের তাজিক সার্ভিসে (আরএফই/আরএল) এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এই অগ্রগতি মধ্য এশিয়ার দেশটিতে চীনা সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টি চিহ্নিত করে। কারণ, এই অঞ্চলে বেইজিং এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলো আফগানিস্তানের দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো রাফায়েলো প্যান্টুচি বলেছেন, ‘একটি সুবিধা তৈরি এবং যৌথভাবে কর্মী দেয়ার এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বজুড়ে চীনের জন্য কয়েকটি পরিচিত উদাহরণের মধ্যে একটি। তাজিকিস্তানে আমরা যে এই তৎপরতা দেখছি তা আফগানিস্তান ও অঞ্চলের প্রতি চীনের উদ্বেগের মাত্রা দেখায়।’

চীন ইতিমধ্যেই ওয়াখান করিডোরের নিকটবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে আফগান সীমান্তের কাছে মুরঘাব অঞ্চলে তাজিকিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে। এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপের সাম্প্রতিক তদন্তের বিষয় ছিল, ওই অঞ্চলে চীনা কর্মীদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা নিয়ে। চীনা এবং তাজিক উভয় সরকারই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাঁটির অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। তবে এর মালিকানা এবং অপারেশন সম্পর্কে কিছু বিবরণ জানা গেছে। আরএফই/আরএল-এর তাজিক পরিষেবা দ্বারা দেখা নথিগুলো বলছে যে, চীনা কর্মীরা তাজিকিস্তানের ঘাঁটিতে কাজ করছে, তবে এটি বর্তমানে দুশানবের মালিকানাধীন।

নথি অনুসারে, চীনের কাছে ঘাঁটির মালিকানা হস্তান্তর করার প্রস্তাব তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমান চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়েই ফেংহেকে উপস্থাপন করেছিলেন যখন তিনি জুলাই মাসে তাজিকের রাজধানী দুশানবে সফর করেছিলেন। প্যান্টুচি বলেন, ‘এটি হাইলাইট করে যে, কিভাবে মধ্য এশিয়া চীনের মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে। এতে বেইজিংকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমস্যায় নিজেকে আটকে না ফেলার জন্য সংগ্রাম করতে হতে পারে।’

নথিতে উল্লেখ করা হয়নি যে, বেইজিং তাজিক পক্ষের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে কিনা, তবে তারা রাহমনের দেয়া একটি প্রস্তাবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয় যাতে চীন আফগানিস্তানের সীমান্তে তাজিক সামরিক পয়েন্ট তৈরির জন্য বর্ধিত তহবিল সরবরাহ করবে। বিনিময়ে দুশানবে চীনের কাছে বিদ্যমান সুবিধার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করবে এবং কোনো বেসিং ফি আরোপ করবে না। কার্নেগি মস্কো সেন্টারের মধ্য এশিয়ায় চীনের বিশেষজ্ঞ তেমুর উমারভ আরএফই/আরএলকে বলেন, ‘চীনের জন্য, তার সীমান্তে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্য এশিয়ায় তার মূল স্বার্থের অংশ। তাজিকিস্তানে নিরাপত্তা উপস্থিতি সম্প্রসারণ করাই হল তাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার।’

তাজিকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে আইনপ্রণেতারা অনুমোদন দেয়ার কারণে ২৭ অক্টোবর তাজিকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষে নতুন সুবিধাটির নির্মাণ অনুমোদন করা হয়েছিল। তাজিক ফার্স্ট ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুরাহমন আলমশোজোদা বলেছেন যে, সুবিধাটি দেশের প্রত্যন্ত গর্নো-বাদাখশান স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশের ভাখোন গ্রামে অবস্থিত হবে এবং ঘাঁটিটি বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড রিঅ্যাকশন গ্রুপের মালিকানাধীন হবে। আইনপ্রণেতারা বলেছেন যে, তাজিক সেনারাও নিয়মিত সুবিধাটিতে উপস্থিত থাকবে।

তাজিক আইন প্রণেতা টলিবখোন আজিমজোদা সংসদে বলেছেন যে, নতুন ঘাঁটি চীনা অর্থায়নে নির্মিত হবে এবং মোট খরচ হবে ১ কোটি ডলার। এটি আফগানিস্তানে তালেবানদের দখল এবং দেশটির সীমান্তে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকির কারণে নির্মাণ করা হয়েছে।’ নতুন ঘাঁটির সঠিক কার্যকারিতা অজানা। যদিও আইন প্রণেতারা বলেছেন যে, এটি সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পুলিশিং দায়িত্ব পালন করবে এবং এই সুবিধাটিতে চীন থেকে ইনস্টল করা ‘ইন্টারপোল তথ্য ব্যবস্থার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম’ থাকবে। সূত্র: রেডিও ফ্রি ইউরোপ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ