পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রোহিঙ্গা শিবিরে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া শিবিরের ডি ব্লকের আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আলোচিত রোহিঙ্গ নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি এই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার খুনের তিন সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার শেষ রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দারুল উলুম নাদুওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়া মাদরাসায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে ৭ জন নিহত এবং ১২ জনের মতো গুরুতর আহত হয়। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মৌলভি দ্বীন মোহাম্মদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় মাদরাসা শিক্ষক-ছাত্রসহ অন্তত ২৫ জন মসজিদে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে যান। এ সময় অস্ত্রধারীরা মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। মসজিদের বাইরে পাহারায় ছিল আরও একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী। এ হামলার জন্য রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি-আরসাকে দায়ী করছেন। তাদের দাবী, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে ইসলামী মাহাস নেতাদের সঙ্গে আরসার বিরোধ চলছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আরসার অস্তিত্ব রয়েছে বলে স্বীকার করে না। পুলিশের ভাষ্য, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আরসা বা আল ইয়াকিনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করছে। তবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একের পর এক হামলা ও খুনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত বৃহস্পতিবারের সন্ত্রাসী হামলা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও নিন্দনীয়।
সাম্প্রতিককালে দেশে একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলেছে। পূজামন্ডপে কোরআন রাখার মতো গর্হিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মানুষের মৃত্যু সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এর মাঝেই রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনাকে এখন আর বিচ্ছিন্ন বলে মনে করার কারণ নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এসবের পেছনে দেশকে অস্থিতিশীল ও মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্র নেপথ্যে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে বহুদিন ধরেই সরকারের তরফ থেকে মিয়ানমার ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নেয়ার কথা বাংলাদেশ বলে আসছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো কেবল মুখে মুখে লিপ সার্ভিস দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে বলছে। তাদের এসব কথায় মিয়ানমার থোরাই কেয়ার করে চলেছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে স্বদেশে ফিরে যাওয়া এবং বাংলাদেশে থেকে যাওয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝে খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে। মুহিবুল্লাহ এবং গত বৃহস্পতিবারের হত্যাকাণ্ড তারই দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে। ইতোমধ্যে ১৪টি সন্ত্রাসী বাহিনী নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে গত চার বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে ১০৮ জন খুন হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যেসব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না, তাদের একটি অংশকে আন্তর্জাতিক চক্র মদদ দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। গত বৃহস্পতিবারের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও বলেছেন, যারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না, তারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেকটা অগ্রগতি হলেও কিছু লোক চায় না তারা নিজ দেশে ফেরত যাক। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দেরি করবে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধ তত বাড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে, মিয়ানমার সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করে সমস্যার সমাধান করা। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পূজামন্ডপকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকভাবে যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসী হামলা একই সূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনা দেশের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সতর্ক এবং তা প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
রোহিঙ্গা শিবিরে একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত। শিবিরে অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াবে আর হামলা চালিয়ে মানুষ খুন করবে, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এসব সন্ত্রাসী কারা, কোথা থেকে অস্ত্র পায় এবং কারা অস্ত্র সরবরাহ করে, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের নির্মূল করতে হবে। শুধু অস্ত্রধারী দুয়েকজনকে ধরে কোনো লাভ হবে না। এদের মূলে যেতে হবে। নেপথ্যের চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর প্রত্যেক ঘরে ঘরে নিয়মিত তল্লাশী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বেগবান করতে সরকারকে আরও অধিক তৎপর হতে হবে। তা নাহলে, যতই দিন যাবে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।