গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য, সার্বজনীন কল্যাণময়ী ধর্ম যা সকল ধর্মের মানুষের জান মাল, ইজ্জত আব্রু ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনিত ধর্ম। আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন ধর্ম ( জীবন বিধান, অনুশাসন ) গ্রহণ করে তা আল্লাহর নিকট কখনও গ্রহণ যোগ্য হবে না। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। জুমার বয়ানে পেশ ইমামরা মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে রবিউল মাসের গুরুত্ব ও তৎপর্য তুলে ধরেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, পবিত্র কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে (হে নবী!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার আনুগত্য করো। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান,আয়াত ৩১)। পেশ ইমাম বলেন, কারণ রাসূলের আদর্শ সর্বোত্তম আদর্শ। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১)।
সুতরাং আমাদের স্মরণ রাখতে হবে এই উত্তম আদর্শের অনুসরণ অনুকরনের মাঝেই আমাদের ইহকাল এবং পরকালে শান্তি সফলতা নিহিত আছে। তবে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসতে হবে সেভাবে যে ভাবে সাহাবায়েকেরাম ভালোবেসেছেন। সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে রাসূলকে ভালোবেসেছেন। এজন্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবায়ে কেরাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো তোমরা যে কারো অনুসরণ করবে হেদায়েত পেয়ে যাবে। তাছাড়া কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ঈমান আন যেমনি ঈমান এনেছেন মানুষগণ অর্থাৎ সাহাবাগণ। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৩) সুতরাং তাদের ঈমান ও আমল অনুযায়ী আমাদের ঈমান ও আমল হওয়া উচিত। তাদের ঈমান ও আমলের প্রতি আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বলেন, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দলের অন্তভূক্ত। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। (সূরা মুজাদালাহ, আয়াত ২২)। আল্লাহপাক আমাদেরকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালোবাসায় আমাদের অন্তরকে পূর্ণ করে দিন এবং জীবনের প্রত্যেকটা কাজ সুন্নাত অনুযায়ী করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ জুমার খুৎবার পূর্বে বয়ানে বলেন, নবী কারীম (সা.) এর জন্ম গ্রহণের মাস রবিউল আউয়ালে আমাদের জন্য করনীয় কি ? নবীজী আমাদেরকে কি আমল শিখিয়েছেন? ১ নং আমল হলো প্রতি সোমবার রোজা রাখা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.বলেন, নবী কারীম (সা.) সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন, সোমবার নবুওয়ত লাভ করেন, সোমবার ইন্তেকাল করেন, সোমবার মক্কা হতে হিযরত করে মদিনায় রওয়ানা করেন, সোমবার মদিনায় পৌছান এবং সোমবার তিনি হাজরে আসওয়াদ উত্তোলন করেন। (মুসনাদে আহমদ)। হযরত আবু কাতাদা রা. বলেন নবী কারীম (সা.) কে সোমবার রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, এই দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনই আমি নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছি। (মুসলিম শরিফ)। নবী কারীম (সা.) নিজে প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। আর এই সাপ্তাহিক রোজার আমল সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে গুরুত্বের সাথে ছিল। নবী কারীম (সা.) কে নিখাঁদ ভালবাসার দাবি হলো আমরাও নবী কারীম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মত নবীজীর জন্মদিন সোমবার রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ। প্রতি সোমবারের মত প্রতি বৃহস্পতিবার ও প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩.১৪.১৫ তারিখ রোজা রাখা সুন্নত।
দ্বিতীয় আমল হচ্ছে, রাত দিন বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়া। অন্তত সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. সূত্রে বর্নিত নবী কারীম (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে উত্তম মানুষ আমার নিকট সে, আমার প্রতি যার দরুদ শরীফ বেশি জমা হবে। (তিরমিজি)। তৃতীয় আমল হচ্ছে, নবী কারীম (সা.) এর পুর্ন জীবনী ধারাবাহিকভাবে নির্ভরযোগ্য সিরাতের কিতাব হতে পাঠ করা ও তার উপর আমল করা। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানবতার মুক্তির দিশারী সফল রাষ্ট্র নায়ক মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই সুষ্ঠু ও কল্যাণময়ী রাষ্ট্র পরিচালনা নিশ্চিত করা যায়। কারণ তারই আদর্শ ও নীতিমালার অনুসরণ অনুকরণে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের কাল অমানিষার আধার কেঁটে কলহ বিবাদ, মারামারি কাটাকাটি সন্ত্রাসী রাহজানি সামাজিক অবক্ষয় অধিকার বৈষম্যতা ও সর্ব প্রকারের জুলুম অত্যাচার নির্বাপিত হয়ে মদীনায় ইনসাফ ও অধিকার সমন্নিত বৈষম্যহীন কল্যাণময়ী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসে অবিস্মরনীয় থাকবে। উল্লেখ্য যে, মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমন একটি অবকাঠামোর নাম যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন ভূখন্ডের অধিবাসীরা তাদের আর্থ সামাজিক জীবনের যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করে থাকে । পাশা-পাশি ভূখন্ডকে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়। এর আওতায় রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ সাধন আইন ও প্রশাসনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়। সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নবী-রাসূলদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। আর যুগে যুগে সমাজে শান্তির রাজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আজও সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি, শৃংখলা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম অক্ষুন্ন রেখে রাসূলের আদর্শে আল্লাহ দেয়া নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তাইতো মানবতার নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) “ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন ( রাষ্ট্রের মৌলিক ধর্ম ইসলাম ), মুসলিম অমুসলিম সকলের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও যে কোন সমস্যার সমাধানে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) এর বিধান চূড়ান্ত ফয়সালকারী নির্ধারণ করে ৪৭ মতান্তরে ৫৩ টি ধারা সম্বলিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করত : মদীনায় শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
খতিব আরও বলেন, আজ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত যে, ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য, সার্বজনীন কল্যাণময়ী ধর্ম, যা সকল ধর্মের মানুষের জান মাল, ইজ্জত আব্রু ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যার প্রেক্ষিতে আল্লাহর অশেষ কৃপায় অনেক অমুসলিম ভাইয়েরাও ইসলামের সত্যতা, সভ্যতা ও সৌন্দয্যতা অবলোকন করত : ইসলাম গ্রহণে ধন্য হয়েছেন । কারণ আল্লাহ তায়ালার নিকট মনোনিত ধর্ম ইসলাম। তাই ইসলাম ছিল আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ; নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনিত ধর্ম। আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন ধর্ম ( জীবন বিধান, অনুশাসন ) গ্রহণ করে তা আল্লাহর নিকট কখনও গ্রহণ যোগ্য হবে না। ( সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১৯ , ৮৫ )। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের বিধান পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন। মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম মৃত্যুসহ নানা কারণে রবিউল আউয়ালের মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনঘনিষ্ঠ অনেক পালনীয় বিষয় এ মাসের সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বনবীর সীরাত হলো মানব জীবনের সর্বোত্তম নমুনা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ২১ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, "অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।" এই আয়াতে আল্লাহ পাক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে, তিনি আল্লাহভীরুদের জন্য ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ বা উত্তম আদর্শ। আর শেষ দিবসকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে।
খতিব আরও বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও আত্মমর্যাদা বোধবশত কাউকেই তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি। জাতি ধর্ম বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছিল সদা জাগ্রত। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)। সীরাতের আয়নায় আমাদের আমলকে পর্যালোচনা করে যাবতীয় ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।