Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হঠাৎ নেমে আসতে পারে খোদায়ী মহাগজব জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৯ পিএম

নগরীর মহাখালীস্থ গাউছুল আজম মসজিদ কমপ্লেক্সের খতীব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান আজ খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিগত দু’বছর ধরে উপর্যপরি বিশ্বব্যাপী যে সকল দুর্যোগ নেমে এসেছে তা’মহাগজবের হুঁশিয়ারী। হঠাৎ নেমে আসতে পারে সেই খোদায়ী মহাগজব। তাই আমাদের সাবধান হতে হবে তাওবা করতে হবে, আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে। তাঁর দরবারে এঁর থেকেনাজাতের জন্য দোয়া মোনাজাত করতে হবে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্যোগ সমূহের সংক্ষিপ্ত ববরন তুলে ধরেন। করোনা ভাইরাস খরা, পানির তীব্র সঙ্কট, দাবদাহ, জলোচ্ছ্বাস, ভায়াবহ তুষারপাত, আবারো করোনা ভাইরাসের হানা, যুদ্ধ, জ্বালানী সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে খতীব বলেন, এগুলো সেই খোদায়ী মহাগজব নেমে আসার আলামত। আল্লাহ চান, বান্দারা এসব দেখে যেন সতর্ক হয়, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তিনি বলেন, সূরা রুমের ৪১ ও ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের কৃত কর্মের দরুন জলে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার দ্বারা তাদেরকে কোন কোন কাজের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান যাতে তারা ফিরে আসে। বল, ’ তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন কর এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে’। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা মহাম্মদের ১৮ নং আয়াতে বলেন, তা’হলে তারা কি সেই চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে, যা তাদের উপরে অকস্মাৎ আবির্ভূত হবে ? তাই যদি হয়, তা’ হলে তার লক্ষণ তো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা’ দেখেও চেন না হলে যখন তাদের উপরে মহাবিপদ আসবে, তখন আর কি করার থাকবে ? মহান আল্লাহ সূরা ইউনুসের ১০২ আয়াতে আরো বলেছেন, এরাও কি সেই চরম দুর্দিনের জন্য অপেক্ষা করছে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের উপর আপতিত হয়েছিল। যে সব পূর্ববর্তীদের অবাধ্যতার চরম পরিণতির কথার প্রতি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে কওমে নূহের (আ.) খথা তাদেরকে মহাপ্লাবন দিয়ে হালাক করে দেয়া হয়েছিল। রয়েছে লুতের বিবরণ, যাদেরকে বৃষ্টিধারার মত প্রস্তর নিক্ষেপ করে নিস্তানাবুদ করে জনপদকে উল্টে দিয়ে ক্ষুদ্র সাগরে পরিণত করা হয়েছিল, ডেডসি’ বা মরুসাগর রূপে যা এখনও বিদ্যমান। তাদের মধ্যে রয়েছে, কওমে আদ, সামুদ, আসহাবে উখদুদ, যাদেরকে প্রচ- অনল কু-দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। রয়েছে প্রবল প্রভাবশালী মিসর স¤্রাট ফেরাউন ও তার সদলবলে অথৈ সমুদ্রে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করার কথা। যার লাশ এখনো বিদ্যমান মিসরের যাদুঘরে। রয়েছে দাম্ভিক কাফের বাদশা নমরুদের কথা, যাকে তার বাহিনীকে ক্ষুদ্র মশক বাহিনী দ্বারা বরবাদ করা হয়েছিল। সূরা ফীলে রয়েছে, আবরাহা ও তার হস্তিবাহিনীকে নির্মূল করে দেয়ার বিবরণ, যাদেরকে ক্ষুদ্রকায় আবাবিল পাখির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর নিক্ষেপের দ্বারা চর্বিত, তক্ষিত তৃণ সদৃশ্য করে দিয়েছিলেন। আর এ ঘটনা ঘটেছিল বিশ্বনবী (সা.) জন্ম গ্রহণের মাত্র কিছু দিন পূর্বে। খতীব বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো সায়েন্স ট্যাকনোলজিতে বিশ্বের সেরা শক্তি। কৈ তারা কি ঠেকাতে পারলো তাদের দেশের প্রচন্ড দাবানল ? তুষারপাত, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ? তিনি বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর হচ্ছে উত্তর আমেরিকা জুড়ে এখন বয়ে চলছে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। এতে মারা গেছে এ পর্যন্ত ৬৫ জন লোক। গভর্ণর ক্যাথি হচুল একে বলেছেন, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। নিউইয়র্কের বাফেলোর অবস্থা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো’। তুষার ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন ১৮ লাখ মার্কিন নাগরিক। গ্রীষ্মের সময়ে এসব অঞ্চলে ভয়াবহ দাবদাহে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মাইলের পর মাইল বনভূমি। চীন থেকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস। বর্তমানে নবরূপ ধারণ করে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস সেদেশেই মারাত্মকভাবে হানা দিয়েছে। ঠেকাতে পারলো কী সেই ধ্বংসাত্মক রোগজীবানু ? যে দেশ যত উন্নত সে দেশ তত পর্যুদস্ত। এসব আসমানী বিপর্যয় থেকে আমাদেরকে সব হাসিল করতে হবে।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতীব মুফতী সুলতান মহিউদ্দিন আজ জুমার বয়ানে বলেছেন, নববর্ষ উদযাপনের নামে সারা বিশ্বে চলছে নগ্নতা-বেহায়পনা, অশ্লীলতা আর পাপাচারের মহোৎসব। আতশবাজি ও বোমা ফোটানোতে যে ভয়ঙ্কর শব্দ দূষণ হয় তাতে অসুস্থ, বৃদ্ধ, হার্টের রোগী ও শিশুরা সাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। গত বছর বাংলাদেশে একটি শিশু বোমার শব্দে মারাগেছে। পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি করা এসব অপসংস্কৃতি কোন সভ্য মানুষ পালন করতে পারে না । তিনি আরো বলেন, নববর্ষ উদযাপনের নামে নির্লজ্জতা, নগ্নতা-বেহায়াপনা,অশ্লীলতাসহ যুব সমাজের চরিত্র নষ্ট করার সব আয়োজন থাকে এসকল অনুষ্ঠানে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং কোন মুসলমান এধরনের নাজায়েয, নির্লজ্জ ও অশ্লীল অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারেনা। আমাদের দেশের সরকারেরও উচিৎ যুব সমাজের চরিত্র রক্ষায় অসামাজিক,অশ্ললীতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি আরো বলেন, আমাদের নির্ধারিত জীবন থেকে একটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। আমাদের অনুশোচনা করা উচিত বিগত বছরটি কিভাবে কাটালাম, কতগুলো পাপ-পূণ্য করলাম, ভাল কাজের চেয়ে মন্দ কাজ বেশি হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামী দিনে পাপ বর্জন করে নেক কাজ বেশি বেশি করার সংকল্প করা। কেননা দিন যত চাচ্ছে আমরা মৃত্যুর দিকে তত এগিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদেরকে ইহুদী-খৃস্টানদের পাতা ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন!



 

Show all comments
  • Usama Ajhar ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৫০ পিএম says : 0
    অশ্লীলতা গোটা জাতির জন্য আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে জাতি নিজেদেরকে বিপদ থেকে মুক্ত রাখতে চায় তাদের উচিত সমাজে অশ্লীলতা ছড়াতে না দেয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Chowdhury ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪৯ পিএম says : 0
    আবার যখনই মানুষ কুরআন বিমুখ হয়ে যাবে। কুরআনের বিধান অনুসরণ না করে নিজেদের মনগড়া বিধানে বিচার কাজ করে তখন মানুষ জুলুম অত্যাচারের শিকার হবে। আর তখন মাজলুম ও আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না। আর তাতে আল্লাহর আজাব ও গজব দুনিয়াতে নেমে আসে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৩ পিএম says : 0
    বর্তমান প্রেক্ষাপট যেভাবে চলছে অসম্ভব কিছু নয়!! যখন কোন জাতী আল্লাহ তার রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মহামারী গজব আসতে শুরু করে!!! রাষ্ট্রের শাসক অত্যাচারী জুলুমকারী হয়।।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Dk Rasel ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪৮ পিএম says : 0
    যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪৮ পিএম says : 0
    যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪৮ পিএম says : 0
    যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Safiqul Alam ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৪৯ পিএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য জীবন ব্যবস্থা হিসেবে দিয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। এ কুরআনের বিধান মেনে চলা প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য আবশ্যক। যা মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে ছোট নির্দেশও ছেড়ে দিচ্ছে। অথচ আল্লাহর বিধানের ব্যতিক্রম হলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়া নেমে আসে শাস্তি। সাধারণ নিরাপরাধ মানুষও এ শাস্তি ভোগ করে। তাদের ওপর নেমে আসে জুুলুম-অত্যাচার। হাদিসের ঘোষণাও এমনই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ