মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০০১ সালের ১ এপ্রিল চীনের উপকূলে একটি মার্কিন ইপি-৩ পরিক্রমণকারী বিমানের সঙ্গে একটি চীনা যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষ হয়, যার ফলে মার্কিন বিমানটি চীনা ভূখণ্ডে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। চীনারা বিমানের মার্কিন ক্রুকে ১১ দিন আটক করে রাখে এবং অত্যাধুনিক বিমানটি হস্তান্তর করার আগে সূক্ষ্মভাবে পরিদর্শন করে। ওয়াশিংটন চীনের বিরুদ্ধে বেপরোয়া উড়ানের অভিযোগ আনে এবং বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করে। ঘটনাটি বুশ প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয় যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রধান প্রতিপক্ষ।
কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর আল কায়েদার উগ্রবাদীরা চারটি বিমান ছিনতাই করে এবং তাদের মধ্যে তিনটি নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং ভার্জিনিয়ার পেন্টাগনে বিধ্বস্ত হয়। এরফলে আমেরিকার দৃষ্টি চীনের দিক থেকে আকস্মিকভাবে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এর দিকে ঘুরে যায়। আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে সেনা মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের উত্থাপিত চ্যালেঞ্জ থেকে প্রায় দুই দশক ধরে সরিয়ে রাখে। সিঙ্গাপুরের সাবেক জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ও সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট ফেলো কিশোর মাহবুবানি বলেছেন, ‘এটি ছিল চীনের জন্য একটি অবিশ্বাস্য ভূ-রাজনৈতিক উপহার।’
ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসি-এর ক্রেইগ সিঙ্গেলটন বলেন, ‘৯/১১ এর পর চীন খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে, ওয়াশিংটনের কৌশলগত মনযোগ ৩ হাজার মাইল দূরে, পূর্ব চীন সাগর থেকে তাইওয়ান প্রণালী থেকে দূরে এবং আফগানিস্তানে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘এটি পূর্ব এশিয়ায় নিরবে পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার ক্ষমতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অত্যন্ত জবরদস্ত সামরিক সক্ষমতা বিকাশের একটি সুযোগ ছিল।’
আফগানিস্তান, ইরাক এবং অন্যান্য স্থানে কট্টর ইসলামপন্থী সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘর্ষের সুযোগে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, এই সময়ের মধ্যে বেইজিং তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার তৈরি করেছে, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করে দক্ষিণ চীন সাগরে তার আধিপত্য বাড়িয়েছে, ব্যাপক পরিমাণে মেধা সম্পদ জড়ো করেছে এবং বাণিজ্যে শিকারী কৌশল অবলম্বন করেছে। চীনের মোট দেশীয় উৎপাদন ২০০০ সালে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ইভান মেডিরোস বললেন, আরে, সবাই এখনও চীনে অর্থ উপার্জন করছে, তাহলে নৌকায় দোল দেবে কেন? চীন এখন নিশ্চিতভাবে ওয়াশিংটনে কর্মসূচির শীর্ষে রয়েছে এবং উভয় মার্কিন শীর্ষ রাজনৈতিক দলই চীনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার সম্পর্কে একমত। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহাল করা চীনের উপর শুল্ক অপরিবর্তিত রেখেছেন। মাহবুবানি তার ‘চায়না কি জিতে গেছে?’ বইতে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘যখন আপনি যুদ্ধ লড়তে ব্যস্ত ছিলেন, চীন বাণিজ্যে ব্যস্ত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মনোনিবেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ভুল ছিল, কারণ আসল চ্যালেঞ্জটি চীনের দিক থেকে আসতে চলেছে।’
মার্কিন আইনপ্রণেতাগণ এবং কর্পোরেশনগুলো বর্তমানে মার্কিন মাইক্রোচিপ শিল্পকে উন্নত করতে, গবেষণায় বিনিয়োগ করতে এবং গুপ্তচরবৃত্তি থেকে মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস লুইস বলেন, ‘ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘যুদ্ধ প্রকল্পের খরচ’ এর অনুসন্ধান অনুযায়ী ‘আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যান্য ফ্রন্টে আনুমানিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশের অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ, উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরির জন্য এবং গত ২০ বছরে আমরা যেসব কাজ করতে পারতাম সেগুলোতে এই অর্থ ব্যয় করা যেত।’
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ফরেন সার্ভিসের এশিয়া স্টাডিজের পেনার ফ্যামিলি চেয়ার ইভান মেদিইরোস চীন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা তাদের ২০ বছর দিয়েছি এবং আজকের প্রধান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি যুদ্ধের জন্য আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে পুনর্নির্মাণ করেছি।’ তবে, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফ্রিম্যান স্পগলি ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সেন্টার ফেলো ওরিয়ানা স্কাইলার মাস্ট্রো বলেন, ‘এটা একেবারেই সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ বঞ্চিত হওয়ায় চীন ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। কিন্তু এমনটাও নয় যে, ৯/১১ না ঘটলে আমরা ইতোমধ্যেই এ প্রতিযোগিতা জিততাম।’
১৯৭০-এর দশকে আকাশচুম্বী তেলের দাম ও অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে লজ্জাজনক মার্কিন প্রস্থানের পর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বাস করেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। এখন চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অনিবার্যভাবে অবনতিশীল ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হিসেবে চিত্রিত করে চলেছে। সূত্র: এনবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।