পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
খাদ্য উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ধান, শাক-সবজি, মৎস্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রফতানি করে বছরে আয় হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। এসব ফসলের পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি দুর্লভ ফলও দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। একটা সময় কল্পনাও করা যেত না আমাদের দেশে বিদেশি খেজুর, স্ট্রবেরি, মাল্টা, ড্রাগন, এভোকাডো কিংবা জাপানের দুর্লভ বিশেষ প্রজাতির আম উৎপাদিত হবে। এখন বিশ্বের এমন কোনো ফল নেই যা দেশে স্বল্প ও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদিত না হচ্ছে। এসব ফল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে সমতল অঞ্চলে কিংবা বাসার ছাদ বা আঙ্গিনায় ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত মানের ফল উৎপাদন করছে। এসব ফলের স্বাদ ও গুণগত মান বিশ্বমানের। দেশি ফলের পাশাপাশি এসব বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে পার্বত্য ও সিলেট অঞ্চলে অনাবাদি জমিতে দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমতল ভূমিতে ফলের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে নীরব বিপ্লব শুরু হয়েছে।
একটা সময় বিদেশি ফল হিসেবে আপেল, নাসপাতি, আঙ্গুর, কমলা, খেজুর, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ইত্যাদি ফল সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। এখন সেই সময় নেই। এমন কোনো গ্রাম-গঞ্জ নেই যেখানে এসব ফল পাওয়া যায় না। যদিও এসব ফল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়। শুধু ফল আমদানি নয়, প্রচুর বিদেশি জুসও আমদানি হচ্ছে। এতে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। তবে বিগত এক দশক ধরে উল্লেখিত ফল শুধু নয়, বিদেশের দুর্লভ ও সুস্বাদু নানা জাতের ফল দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুস্বাদু করতে কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সফল হয়েছেন এবং হচ্ছেন। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং দ্রæত বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে কাঠাল উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনের দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ফল উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশে এক ধরনের বিপ্লব ঘটছে। সীমিত জমি এবং সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকা সত্তে¡ও প্রতি বছর ফল উৎপাদন শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এক দশক আগে দেশে ৫৬ প্রজাতির ফল উৎপাদিত হতো। এখন ৭২ প্রজাতির ফল উৎপাদিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়ির আঙ্গিনা, সড়কের পাশে কিংবা অনাবাদি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাষ করছে। শহরের অনেক মানুষ ছাদ বাগান করে বিদেশি ফল উৎপাদন করে সাফল্য পাচ্ছে। অনেকে একই জায়গায় মিশ্র পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের ফলের চাষ করছে। এসবের বেশিরভাগই হচ্ছে, ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে সমতল অঞ্চলে মানুষ যে আগ্রহ-উৎসাহ নিয়ে ফলের চাষ করছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে এ খাতটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বিদেশ থেকে ফল আমদানির পরিবর্তে রফতানি করা সম্ভব হবে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ফল উৎপাদন ও রফতানিতে বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমাদের দেশও ফল রফতানির ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। এ খাতটিকে রফতানির অন্যতম খাতে পরিণত করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপক পরিকল্পনা।
বর্তমানে দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন ফলের যে উৎপাদন প্রয়াস শুরু হয়েছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে অনাবাদি জায়গায় এসব ফলের উৎপাদন রীতিমতো বিস্ময়কর। দুর্গম এসব অঞ্চলের পাশাপাশি সমতলের অনাবাদি জমিতে যদি কৃষকদের প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেয়া হয়, তবে ফল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা অসম্ভব নয়। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, তেমনি পাহাড়ে যারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত তারাও উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের উন্নত মানের সুস্বাদু আম বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। আমরা যদি দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল উৎপাদন করে রফতানি করতে পারি, তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এজন্য ফল উৎপাদনকারিদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি উৎপাদিত ফল যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, এজন্য ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ফলের উৎপাদন ও রফতানির যে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে আমরা মনে করি, ফল উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও আহবান অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি যদি আহবান জানান এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে মানুষ ফল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।