Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনাকালে লকডাউনের কারণে দেশে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেরই আয় কমে যাওয়ায় তারা অতি দরিদ্র শ্রেণিতে শামিল হয়েছে। করোনা মহামারি সম্প্রতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে এলেও কর্মহীন মানুষের নতুন কর্মসংস্থান বা আয়বৃদ্ধির ব্যবস্থা হয়নি। উপরন্তু গত কয়েকমাস ধরে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর মূল্য বেড়েই চলেছে। বেঁচে থাকতে নিম্ন আয়ের মানুষকে প্রতিদিনের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতেই মাসিক আয়ের প্রায় পুরোটা খরচ করতে হচ্ছে। আর যাদের এখনো চাকরি বা কর্মসংস্থান হয়নি, তাদের সঞ্চিত সম্পদ খরচ করে অথবা ধারদেনা করেই সংসার চালিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের যে কোনো অজুহাতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েতে দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে নতুন কারণ হিসেবে জ্বালানি তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যুক্ত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে পণ্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির আগে থেকেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেলেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তেমন কোনো গণপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

প্রায় এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য শুধু স্থিতিশীল ছিল তা নয়, কখনো কখনো তেলের দাম হ্রাস পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টির ঘটনাও ঘটেছে। সে সময়ও বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে আগের দামই বহাল রাখা হয়েছে। করোনাত্তোর অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এখন সারাবিশ্বে নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মকান্ড ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হওয়ায়, গ্যাস-বিদ্যুত ও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোতে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। করোনাকালে কোটি মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং লাখ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর পর এখন খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশে এক প্রকার নিরব খাদ্যাভাব সৃষ্টি হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে এবং নিত্যপণ্যের উপর বিশেষ সাবসিডি ও শুল্ক মওকুফের বিষয়গুলোকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের এসব রেয়াত ও প্রণোদনার সুফল যেন সাধারণ ভোক্তারা পায় তা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েলের মূল্য ৮০ ডলার। গ্যাসের দামও ক্রমবর্ধমান। এমতাবস্থায় জ্বালানির মূল্যসহ পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের আরো অনেক কিছু করনীয় রয়েছে।

জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা যে কোনো রাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তার মূল অনুসঙ্গ। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সীমিত ও ক্রমহ্রাসমান উৎপাদনের বিপরীতে বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাত পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। গত এক দশকে দেশীয় গ্যাস ও কয়লাখাতের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ সময়ে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে অধিক মনোযোগী হলেও রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতি উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে লোকসানি মূল্যে বিতরণ করার কারণে সরকারের অর্থনৈতিক খাতে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বার বার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপর টান পড়েছে। প্রায় এক দশক আগে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে দেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও বঙ্গোপসাগরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের খনিজসম্পদ তথা তেল-গ্যাস উত্তোলনসহ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। সেই সাথে জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশীয় গ্যাস কোম্পানির সক্ষমতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে বিজিএফসিএলকে ৭টি ওয়েল কম্প্রেসর বসানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাত বছরেও সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। বিপরীতে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মিটানোর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। এতে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে কর্পোরেট মুনাফাবাজির ছক এবং লুটেরাদের দাপট বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। দেশীয় গ্যাস-কয়লার পাশাপাশি নির্মীয়মান পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে হবে। সেই সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং পণ্যমূল্য বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন