পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাণিজ্য ঘাটতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে। চলমান স্বাভাবিক জ্বালানি আমদানিতে এখনো ছেদ না পড়লেও ফার্নেস অয়েল, ডিজেল ও এলএনজির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র গ্রহণে বিপিসির সাথে জটিলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা যে কোনো দেশের উন্নয়ন, কৃষি ও শিল্পোৎপাদনের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং রফতানি আয়ে সরাসরি বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টির প্রভাব পড়েছে সারাবিশ্বে। বিশেষত জ্বালানি ও খাদ্যে আমদানিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশগুলো হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে বাণিজ্য ঘাটতি এবং ডলারের রির্জাভে অত্যাধিক চাপ সৃষ্টির কারণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে আনা ও জ্বালানিসহ সর্বক্ষেত্রে সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণের নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি সমন্বয়ের জন্য সারাদেশে লোডশেডিংয়ের রুটিন শিডিউল ঘোষণা করেছে সরকার। এতে ডিজেল আমদানির চাপ কমে আসার পাশাপাশি মজুদ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দেশে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার পর পেট্ট্রোল পাম্পগুলোতে ডিজেলের চাহিদা ২০ ভাগ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন হঠাৎ ডিজেলের এই চাহিদা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে না পারলেও সামনের দিকে আরো মূল্যবৃদ্ধি বা আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ সম্ভবত প্যানিক বায়িং করছে এবং ব্যক্তিগতভাবে মজুদ গড়ে তুলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় ডিজেল চালিত জেনারেটরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণেও ডিজেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে। আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকার ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করলেও সাধারণ মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির কারনে ডিজেল আমদানি খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও রিজার্ভে স্থিতির নিম্নগামিতা রুখতে ডিজেল ব্যবহারে লাগাম টানার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। পেট্টোল পাম্পগুলোকে বর্ধিত চাহিদা সরবরাহ না করতে বলা হয়েছে। পদ্মা, মেঘনা ও যমুলা তেল কোম্পানির তরফ থেকে ডিজেলের বর্ধিত চাহিদার যোগান সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং ঘোষিত রুটিন শিডিউলের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে বলে জানা যায়। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য অব্যাহত গতিতে বেড়ে চললেও রফতানি আয় এবং প্রবাসিদের রেমিটেন্স আয়ে তেমন কোনো সুখবর নেই। পরাশক্তিগুলোর অবস্থান স্পষ্টত: বিভাজিত হয়ে পড়ায় ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। এহেন বাস্তবতায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও উৎপাদন ব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে জ্বালানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত রাখতে দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস ও কয়লার উৎসগুলোর উন্নয়ন ও সরবরাহ বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ীতার নীতি বাস্তবায়নে সর্বাগ্রে সরকারের মন্ত্রী-আমলা ও সরকারি দফতরগুলোকেই দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে। অপ্রয়োজনে ও যত্রতত্র সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলা হলে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। শহরের মার্কেট, শপিংমলগুলো রাত আটটার পর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও সরকারি অফিস আদালতেও এর প্রতিফলন থাকা দরকার। প্রয়োজনে অফিসের সময় কমিয়ে আনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি জ্বালানির মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি ক’টনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ফসিল জ্বালানির দেশীয় উৎসগুলোর উন্নয়নে জরুরি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের সাথে সাথে সৌর ও বায়ু শক্তিসহ নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানিব্যবস্থা সম্প্রসারণের উদোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।