পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস সঙ্কট নিরসন ও জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরিতে এলএনজি নির্ভরতার কোন বিকল্প নেই। তরলীকৃত প্রাকৃতিক এই গ্যাস আমদানির জন্য একটি ভাসমান টার্মিনাল এবং তিনটি স্থল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর যেমনি চাপ কমবে, তেমনি চাহিদার একটি বড় অংশ মেটানো সম্ভব হবে আমদানি করা গ্যাসের মাধ্যমে। ইতোমধ্যেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য কক্সবাজারের মহেশখালাীতে দেশের প্রথম টার্মিনাল স্থাপনে মার্কিন এক্সিলেটর এনার্জি লিমিটেডের সাথে চুক্তি সই হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিবেশ ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে। ছাড়পত্র পেলেই কোম্পানী ফিজিক্যাল অন্যান্য কাজ শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, সাগরবক্ষে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ, নির্দিষ্ট জাহাজ নিয়ে আসা এবং ওই জাহাজ থেকে পানির নিচ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা। এই পাইপলাইনের সাথে যুক্ত করা হবে আনোয়ারা থেকে মহেশখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা পাইপ লাইনটিকে। আর সংযোগস্থলে যুক্ত করা হবে মিটার স্টেশন যার মাধ্যমে পরিমাপ করা হবে কী পরিমাণ গ্যাস ভাসমান টার্মিনাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এসংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, সরকার ২০১৮ সালের শুরুতেই দেশের প্রথম ভাসমান টার্মিনাল থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই প্রত্যাশা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে। সরকারের এমন নির্দেশনার মূল কারণ হচ্ছে বিদেশ থেকে তরল গ্যাস আমদানির মাধ্যমে সঙ্কট মোকাবিলা এবং দেশীয় গ্যাসের উপর চাপ কমানো।
একটি দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে পৌঁছতে হলে অবশ্যই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নতি দূরে থাক, স্বাভাবিক জীবন যাপনও অসম্ভব। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক জ্বালানি সংকটের কথা আলোচিত হয়ে আসছে। প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হতে পারছে না। গ্যাসের অভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানা স্থাপন করেও মালিকরা উৎপাদনে যেতে পারছে না। বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে যানবাহন, বাসা-বাড়ি সর্বত্রই এখন জ্বালানি সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে দীর্ঘ হচ্ছে ফিলিং স্টেশনে গাড়ীর লাইন। অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রান্নার চুলা জ্বলছে না। দিন দিনই জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। দেশে কী পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংকট যে ঘনীভূত হয়ে আসছে তাতে সন্দেহ নেই। এ প্রেক্ষিতে, জ্বালানি সংকট মোকাবেলা ও নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা অপরিহার্য। গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার গৃহস্থালী ও যানবাহনে প্রাকৃতিক গ্যাসের পুরোপুরি ব্যবহার বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। বলা দরকার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের দামের সাথে বাংলাদেশে দাম সমন্বয় করা হয়নি। জ্বালানি তেলের দাম কমলে সঙ্গতভাবেই গ্যাসসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। সরকার গৃহস্থালি এবং যানবাহনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করলে তার নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই অর্থনীতির উপর পড়বে। গৃহস্থালিতে গ্যাস বন্ধ হলে তার চাপ হয় জ্বালানি তেল নয়ত কাঠের উপর পড়বে। দুটোই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী জ্বালানি কয়লার ব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানামাত্রিক প্রশ্ন। সবচেয়ে কম মূল্যের হাইড্রো বিদ্যুৎ দেশে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না ভারতের বৈরী পানি নীতির কারণে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিক জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তুলতে হবে। এলএনজির যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। আমাদের গ্যাস পাইপলাইন করা আছে। দেশের উপর দিয়ে ত্রিদেশীয় যে পাইপলাইন বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সেখান থেকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। ত্রিপুরার গ্যাস পাবার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করতে হবে।
জাতীয়স্বার্থে জ্বালানি নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে সুষমভাবে গড়ে উঠে এদিকে নজর দিতে হবে। সারাদেশে বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মূল্যের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ আমদানি ব্যয় বেশি হলে তা মানুষের জীবনযাপন ও অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করবে। জ্বালানি নিরাপত্তার ভাবনাকে একমুখী না করে সম্ভাব্য সকল দিকেই নজর দিতে হবে। বিশ্বের বহুদেশই প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করছে। এমনকি সম্পর্কের বৈরিতাও এতে কোন প্রভাব বিস্তার করছে না। সামগ্রিকভাবে একটি শক্তিশালী জ্বালানি নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।