Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তান-পাকিস্তান-চীন জোট ভারতের জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ

ভারতের মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়াবে নতুন তালেবান সরকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ব্যর্থ ‘জাতি গঠন’ প্রচেষ্টরার ২০ বছর পর তালেবানদের বিজয় তাদের সহযোদ্ধাদের শুধু ব্যাপকভাবে উৎসাহিতই করবে না, পাশাপাশি, এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকেও নড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, আফগানিস্তান-পাকিস্তান-চীন জোটের সমন্বিত অক্ষ নীতি ভারতের জন্য একটি বড় ধরণের ঝুঁকির প্রতিনিধিত্ব করবে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘প্যাক্স ইন্ডিকা:ভারত ও একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব’-এর লেখক জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য শশী থারুর। সম্প্রতি প্রজেক্ট সিন্ডিকেট-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে থারুর একথা বলেন। শশী থারুরের লেখার চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হ’ল।

আফগানিস্তানে নতুন তালেবান শাসনের বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে, তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে যাওয়া ‘দাসত্বের বেড়ী’ ছুঁড়ে ফেলার সমতুল্য যা ইতিমধ্যেই জানা ছিল: তালেবান পরিচালিত আফগানিস্তান পাকিস্তানের পোষ্য হবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ যে, চীন একটি নাজুক পরিস্থিতিকে সর্বোত্তম করার জন্য কাজ করছে। চীনারা চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরে (সিপিইসি) ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা তার আন্ত:দেশীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একক বৃহত্তম প্রকল্প। এবং তারা উদ্বিগ্ন যে, তালেবান চরমপন্থীরা এটিকে বিপদে ফেলতে পারে। উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জুলাইতে তালেবান প্রতিনিধি দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন।

অর্থনৈতিক ও কৌশলগত লাভ পোক্ত হওয়ার সাথে সাথে চীন ঘোষণা করেছে যে, তারা তালেবানদের সাথে ব্যবসা করবে। তারা আফগানিস্তানের বিপুল খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে বিরল খনিজ এবং মেস আয়নাক তামা খনি পুনরায় চালু করতে চাইছে। এমনকি সিপিইসিকে আফগানিস্তানে সম্প্রসারিত করার কথাও বলা হয়েছে। এতে আফগানিস্তানের নতুন প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গণি বারাদারের মত আছে বলে মনে হচ্ছে। চীনের বিরুদ্ধে তার সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যার উপর পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নতুন তালেবান সরকার চীনকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছে। আফগানিস্তানে চীনের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার কারণ হ’ল, যেনো তালেবানরা শিনজিয়াং থেকে উইঘুর বিদ্রোহীদের সমর্থন বা আশ্রয় না দেয় এবং সিপিইসি-এর কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে কিছু না করে।

পূর্ববর্তী আফগান সরকারের ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের ৮০ শতাংশে তালেবান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার একান্ত প্রয়োজন। এখানে চীন সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য উপযুক্ত দাবিদার পাকিস্তান এবং চীনের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার মধ্যে এই আঞ্চলিক গতিশীলতা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। চীন ভারতের জন্য একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অর্থনৈতিক, সামরিক এবং কৌশলগত হুমকি তৈরি করেছে। যে কোনো আফগানিস্তান-পাকিস্তান-চীন নীতি সমন্বয় জড়িত ভারতের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। আফগানিস্তানে তালেবান শাসন পাকিস্তানকে কেবল তার সামরিক বাহিনীকে কৌশলগত গভীরতা দিয়েছে, যা দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে চেয়েছিল এবং তাদের আরও চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী নিয়োগের জন্য উপযুক্ত জায়গা দিয়েছে, যদি আইএসআই তাদের আবার মোতায়েন করতে চায়।

শেষবার যখন তালেবানরা ক্ষমতায় ছিল, ভারত প্রয়াত আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বে উত্তর জোটের পাঞ্জশির উপত্যকা বিদ্রোহকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার জন্য রাশিয়া এবং ইরানের সাথে জোট করেছিল। এবার চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে ইতিবাচক রাশিয়া আফগানিস্তানের ইস্যুতে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে।

ইরান, তার সদ্য নির্বাচিত কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অধীনে নতুন ইসলামী শাসনকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, যতক্ষণ তালেবানরা শিয়া নিপীড়ন থেকে বিরত থাকবে। আফগানিস্তানের শিয়া হাজারারাদের ওপর এবং সাংস্কৃতিকভাবে পার্সি প্রভাবিত তাজিক ও উজবেকদের ওপর কয়েক দশক আগে আগে তালেবানরা যে আঘাত করেছিল, তারা যদি তা থেকে রক্ষা পায়, তাহলে ইরান নিরপেক্ষ থাকতে পারে। ইরান এবং রাশিয়া উভয়ই, যেকোনো ক্ষেত্রে এতেই খুশি যে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তার কর্মফল পেয়েছে। বারাদার আট বছর পাকিস্তানে বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন এবং অনুমান করা যেতে পারে যে, অন্তরীণকারীদের প্রতি তার খুব বেশি ভালবাসা নেই। কিন্তু যখন কিছু তালেবান কর্মকর্তা ভারতের সাথে সুসম্পর্কের বিষয়ে আলতোভাবে কথা বলেছেন, অন্যরা বলেছেন যে, তাদের ইসলামী আমিরাত ভারতের মুসলমানদের জন্য, বিশেষ করে কাশ্মীরের পক্ষে দাঁড়াবে। ভারত আফগানিস্তানে বাঁধ, মহাসড়ক, বিদ্যুৎ গ্রিড, হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি সংসদ ভবনে নকশায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই সব এখন তালেবানদের হাতে। এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার তার ধারাবাহিক মুসলিম বিদ্বেষী কার্যকলাপে এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে কোন অনুগ্রহ করেনি। এটি ইসলামী বিশ্বে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত চতুর্মাত্রিক অংশীদারিত্ব বা কোয়াড ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক উপস্থিতিকে শক্তিশালী করে। কিন্তু দেশের প্রধান নিরাপত্তা হুমকিটি চীন ও পাকিস্তানের সাথে তার স্থল সীমান্তে রয়েছে, যেখানে কোয়াডের সাফল্যের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। এখন ভারতের উত্তর-পশ্চিমে একটি তালেবান শাসন, তার পশ্চিমে একটি পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত সন্ত্রাসবাদ-সমর্থনকারী রাষ্ট্র এবং তার উত্তর-পূর্বে একটি প্রতিকূল পরাশক্তি রয়েছে এবং এটি দেশটি তার আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে চলমান হুমকির মুখোমুখি। এই পরিবেশে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সামনের মাস এবং বছরগুলিতে ভারতীয় কূটনীতির জন্য একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। সূত্র : প্রজেক্ট সিন্ডিকেট।



 

Show all comments
  • Abul Farah ৯ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৩ এএম says : 1
    কাশ্মীর স্বাধীনতা লাভ করুক এবং ভারত ভেঙ্গে বহু রাষ্ট্র হউক এটাই কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Farah ৯ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৩ এএম says : 1
    কাশ্মীর স্বাধীনতা লাভ করুক এবং ভারত ভেঙ্গে বহু রাষ্ট্র হউক এটাই কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ রহমান ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৫:৫৬ এএম says : 1
    ভদ্রলোক এতো গবেষণা করেও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসঙ্গ অবহেলা করেছেন। তাদের পূর্বে আমাদের সঙ্গে সীমান্ত দৈর্ঘ্যে কি অবহেল করার মতো? আর সেখানে যে অচীরেই কোনো পরিবর্তন ঘটবে না, বা যদি ঘটে সে রক্ষা কবচ যেনো তাদের কাছে আছে? এতোটাই নিশ্চিত হলেন কি করে যে আমরা ধর্তব্যের বাহিরে?
    Total Reply(0) Reply
  • Eben Zalal ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৬ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mosharuf Hossain ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৬ এএম says : 0
    এরকম খবর সব সময় দিবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Ahmad ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৬ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ্ এমনটাই চাই
    Total Reply(0) Reply
  • H MD Faruk Ahmad ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৭ এএম says : 0
    সাথে ইরানও আছে পাশাপাশি তুরস্ক এবং রাশিয়ার সমর্থন
    Total Reply(0) Reply
  • M A Ibrahim Chowdhury ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৭ এএম says : 0
    ভারত প্রতিবেশী সবগুলো দেশের জন্য হুমকি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ