Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গড় ব্যক্তি উপার্জন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে চীন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এটিকে ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’ হিসেবে প্রচার করছেন। যদিও সমালোচকদের ভাষ্য, দেশটির এ উদ্যোগ ব্যবসা ও সমাজকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসছে। এ উদ্যোগের সবচেয়ে দৃশ্যমান ফলাফলের একটি হলো, চীনা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় বাজারকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হবে। খবর বিবিসি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা বিস্তৃত করেছে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা। চলতি বছর সংস্থাটির ওপর নেমে আসে চীনা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খড়্গ। একচেটিয়া বাজার দখল ও ভোক্তাদের তথ্য-উপাত্তের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয় আলিবাবার বিরুদ্ধে। জরিমানা করা হয় ২৭৫ কোটি ডলার। এর পরই সংস্থাটি সাধারণ সমৃদ্ধি উদ্যোগে ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড্যানিয়েল ঝাংয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আলিবাবা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি সুবিধাভোগী। যদি সমাজ ও অর্থনীতির উন্নতি হয়, তবে আলিবাবারও উন্নতি হবে। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্টও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনা এ প্রতিষ্ঠান সাধারণ সমৃদ্ধিতে ৭৭৫ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এভাবে প্রতিটি চীনা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকারের উদ্যোগে শামিল হচ্ছে। বিবিসির এশীয় উপস্থাপক কারিশমা বাসওয়ানি বলেন, প্রথম দিকে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সাধারণ সমৃদ্ধির উদ্যোগে খুব বেশি সাড়া দেয়নি। তবে যখন আরো প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ শুরু হয়, তখন সংস্থাগুলোর পক্ষেও এ উদ্যোগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একটি বড় চীনা কোম্পানির প্রধান ব্যক্তিগত আলাপে আমাকে বলেছিলেন, এরপর আমরা এ ধারণায় বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এ উদ্যোগ ধনীদের ছিনতাই করা নয়। বরং এটি সমাজের পুনর্গঠন এবং মধ্যবিত্তকে গড়ে তোলার মতো একটি বিষয়। অর্থাৎ সাধারণ সমৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার যদি উদীয়মান চীনা মধ্যবিত্তের ওপর আরো বেশি মনোযোগ দিতে চায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আরো বেশি গ্রাহক তৈরি হবে। চীনে ইইউ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট জোয়ার্গ ওয়াটকে বলেন, তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণদের চাকরি পাওয়ার দিকে অধিক মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। যদি সংস্থাগুলো মনে করে যে, তারা সামাজিক গতিশীলতার অংশ, তাহলে এটি আমাদের জন্যই ভালো। কারণ মধ্যবিত্ত বড় হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনেও আরো বেশি সুযোগ তৈরি হবে। যদিও এ উদ্যোগ বিলাসবহুল খাতে যুক্ত ব্যবসাগুলোর জন্য ভালো নাও হতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল পণ্যে ব্যয়ের প্রায় ৫০ শতাংশই আসে চীন থেকে। যদি এ উদ্যোগের পর চীনা ধনীরা সুইস ঘড়ি, ইতালীয় টাই কিংবা বিলাসবহুল গাড়ি কম কেনে, তবে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চীনের অর্থনীতিতে গড় ব্যক্তি উপার্জনের পরিমাণ বাড়াতে জটিল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলেও স্বীকার করেন ওয়াটকে। তার মতে, সাধারণ সমৃদ্ধি গড় উপার্জন বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে না। কমিউনিস্ট পার্টির ভাষ্য অনুযায়ী, চীনের সমাজকে আরো ন্যায়সংগতভাবে গড়ে তোলাই সাধারণ সমৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য। তবে এটিও এখন পরিষ্কার যে, শি জিনপিংয়ের অধীনে চীনের রাষ্ট্র ও সমাজ কীভাবে পরিচালিত হবে তার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে এ সাধারণ সমৃদ্ধি। বিবিসির বাসওয়ানি বলেন, একটি বৃহত্তর ও ধনী মধ্যবিত্ত তৈরির মাধ্যমে ন্যায়সংগত সমাজের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে চীন। অন্যদিকে সংস্থাগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে দেয়া-নেয়ার একটি বিষয় চালু হচ্ছে। তাছাড়া চীন সবসময়ই বিদেশী ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর জন্য কঠিন পরিবেশ ছিল। সুতরাং সাধারণ সমৃদ্ধি ঘোষণার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো কঠিন হয়ে উঠছে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ