মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে প্রখ্যাত অভিনেতা এবং সমাজ সেবক সোনু সুদের বাড়িতে কর পরিদর্শকরা অভিযানের নামে তিন দিন অবস্থান করে চলে যাবার সময় তাকে ও তার পরিবারকে ভিতরে আটকে রেখে যান এবং সাথে করে তাদের ফোন ও ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিয়ে যান। তারা বলেন যে, সোনু ‘জাল’ কারবারের চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন, যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া বিদেশী অনুদান সংগ্রহ করেছেন এবং তার কাছে ২.৭ মিলিয়ন ডলার কর পাওনা হয়েছে সরকারের, যদিও এর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ তারা শেষ পর্যন্ত দেখাতে পারেননি।
অনেক ভারতীয় ধারণা করছেন, যদি কিছু জালিয়াতি থাকে, তবে তা এই অভিনেতার অ্যাকাউন্টে নয় বরং কর অভিযানের পেছনের উদ্দেশ্যটির মধ্যে রয়েছে। কারণ, করোনা মহামারির আগে সোনু ছিলেন দ্বিতীয় সারির তারকা, মূলধারার হিন্দির চেয়ে আঞ্চলিক ভাষার ছবিতে বেশি অভিনয় করতেন। কিন্তু মহামারি তাকে সত্যিকারের সর্বভারতীয় নায়ক করে তোলে। তিনি প্রথমে তার নিজের টাকা দিয়ে, তারপর ভক্তদের দান করা লাখ লাখ টাকা দিয়ে অভাবীদের সাহায্য করার জন্য ছুটে যান। গত বছর ভারতের বিভিন্ন শহরে লকডাউনে আটকে পড়া কর্ম ও অর্থহীন ৯০ হাজার শ্রমিককে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করেন তিনি এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন খাবারের যোগান দেন।
সোনু যে ফাউন্ডেশনটি শুরু করেছিলেন, তা শেষ পর্যন্ত এত নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছে যে, এখন সেটি কোভিড এতিমদের বৃত্তি প্রদান করছে, চাকরি স্পন্সর করছে, চিকিৎসা সেবার জন্য অর্থ প্রদান করছে, একটি ব্লাড ব্যাংক চালাচ্ছে এবং একটি হাসপাতাল তৈরি করছে। স্পষ্টতই ভারতের করোনা বিপর্যয়ে সরকারের লাগাতার উদাসীনতা ও ব্যর্থতার মধ্যে ত্রাণ বিতরণ এবং জনসেবায় সোনুর কার্যকারিতা ক্ষমতাসীন বিজেপির রাজনীতিবিদদের ভাবমর্যাদা খারাপ করে দিয়েছে। ফলে সোনু তাদের রোষাণলের শিকার হয়েছেন এবং বিজেপি নেতারা নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এ ধরনের অপব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে মোদির ভাবমর্যাদার জন্য অপ্রীতিকর সোনুর মতো আরো অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। একই সপ্তাহে ভারতের কর পরিদর্শকরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য দেশটির সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হর্ষ মান্দারের সাথে যুক্ত ঠিকানাগুলোতে অভিযান চালায়। হর্ষের উদ্যোগগুলোর অন্যতম কারওয়ান-ই-মহব্বত বা ভালোবাসার কাফেলা, একটি স্বেচ্ছাসেবী দল যারা ঘৃণাবাদী হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার আক্রমণের শিকারদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে থাকে। রানা আইয়ুব, যিনি মোদিকে মুসলিমবিরোধী সহিংসতার জন্য দায়ী করেছিলেন, তাকে এখনও অনেক কর পরিদর্শক তার শুরু করা কোভিড-ত্রাণ নিয়ে হেনস্থা করে যাচ্ছেন।
ভারতের কর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রতিও বিশেষ আগ্রহী। মোদি সরকারের সমালোচনা করে ফেব্রæয়ারিতে এর শিকার হয় স্বাধীন ওয়েবসাইট নিউজক্লিক। জুলাইয়ে বড় হিন্দি দৈনিক প্রকাশক মিডিয়া হাউস দৈনিক ভাস্কর গোষ্ঠীর পালা আসে। কোভিড মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা লুকাতে সরকারের হঠকারিতাকে উন্মোচন করার জন্য একটি শক্তিশালী সিরিজ পরিচালনা করেছিল তারা, যা মোদি সরকারের দেয়া ৪ লাখ ৫০ হাজার সংক্রমণের তথ্যের থেকে অনুমানিক তিন থেকে দশগুণ বেশি। সেপ্টেম্বরে মোদির ট্যাক্স হায়নারা আবারও নিউজক্লিকের পাশাপাশি নিউজলন্ড্রিতেও হামলা করে, যাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রায়ই মোদিকে বিব্রত করে। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত কর্মীদের তাদের অফিসে আটকে রাখে, ফোন বাজেয়াপ্ত করে এবং তথ্য কপি করে নিয়ে যায়।
বিদেশী তহবিল সীমাবদ্ধ করে এবং যা গত বছর আরো কঠোর করা হয়েছিল, এমন আইন ব্যবহার করে মোদির সরকার ১৯ হাজারেরও বেশি এনজিও বন্ধ করে দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছে মোদির কাছে অপ্রীতিকর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ছাড়াও দারিদ্র্যমুক্তি ও পরিবেশরক্ষার কাজে নিয়োজিতরাও। আশ্চর্যের বিষয় হ’ল, সমালোচকদের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তা মোদির নিজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তার সরকারের প্রণীত আইনগুলো অতীতে অবৈধভাবে বিদেশী অনুদান গ্রহণের জন্য তার রাজনৈতিক দলের দায়মুক্তি দিয়েছে এবং একটি বিশেষ সংস্কার করে দলকে সীমাহীন, বেনামী উপহারের সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে, করোনা ত্রাণের জন্য মোদির প্রতিষ্ঠিত বিশাল পিএম কেয়ার্স ফান্ডের অ্যাকাউন্ট, যেখানে লাখ লাখ সরকারী কর্মচারী অনুদান দিতে বাধ্য ছিলেন, তার হিসাব ও কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অস্বচ্ছ রয়ে গেছে। তবে, তহবিলের ওয়েবসাইটে মাত্র একটি বোতাম চাপলেই বিদেশী শুভাকাক্সক্ষীরা টাকা ঢালতে পারেন। প্রহসন এই যে, মোদি যখন গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতকে গণতন্ত্রের জননী হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন, প্রমাণ হিসেবে দারিদ্র্য থেকে তার নিজের উত্থানের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে দিল্লির এক বুদ্ধিজীবি মোদিকে প্রহসনের জনক বলে অভিহিত করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।