মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তান সম্পর্কে সাম্প্রতিক কংগ্রেসের শুনানি সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তিনি অবাক হয়েছেন যে, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিন মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি। পরিবর্তে আমেরিকার ক্ষতির জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেন, ‘আমাকে এটা স্পষ্টভাবে বলতে দিন। ২০০১ সাল থেকে আমি বারবার সতর্ক করেছি যে, আফগান যুদ্ধটি অজেয় ছিল। তাদের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, আফগানরা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী বিদেশী সামরিক উপস্থিতি গ্রহণ করবে না এবং পাকিস্তানসহ বাইরের কেউ এই বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারবে না।’
ইমরান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, ৯/১১-এর পরের পাকিস্তানি সরকারগুলো সামরিক শাসিত পদ্ধতির ত্রুটি নির্দেশ করার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার চেষ্টা করেছিল। বৈশ্বিক এবং দেশীয় বৈধতার জন্য মরিয়া পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ ৯/১১-এর পর সামরিক সহায়তার জন্য আমেরিকার প্রতিটি দাবিতে সম্মত হন। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারি আমেরিকানদের বলেছিলেন যে, পাকিস্তানিদের ওপরও হামলা চালিয়ে যেতে। আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও এর থেকে আলাদা ছিলেন না। এর জন্য পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে যেসব গোষ্ঠীগুলিকে টার্গেট করতে বলেছিল, তারা ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের পরাজিত করার জন্য সিআইএ এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই দ্বারা যৌথভাবে প্রশিক্ষিত ছিল। সেই সময়ে, এই আফগানরা একটি পবিত্র দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এমনকি হোয়াইট হাউসে এই মুজাহিদদের আপ্যায়ন করেছিলেন।
পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোভিয়েত পরাজিত হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করে এবং আমার দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তানে ৪০ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী এবং আফগানিস্তানে একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ রেখে যায়। নিরাপত্তার এই শূন্যতা থেকে তালেবানের উত্থান ঘটে, যারা পাকিস্তানে আফগান শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছে এবং শিক্ষিত হয়েছে।’
যখন ৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্রের আবার পাকিস্তানকে প্রয়োজন পড়েছিল। তখন পাকিস্তান বিদেশী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা সেই মার্কিন প্রশিক্ষিত ও প্রশংসিত যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়েছিলাম। পারভেজ মোশাররফ ওয়াশিংটকে রসদ এবং বিমান ঘাঁটির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানে সিআইএর প্রদচারণার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং এমনকি দেশটির মাটিতে পাকিস্তানিদের উপর বোমা হামলা করা আমেরিকান ড্রোনগুলি দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো, আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের আধা-স্বায়ত্তশাসিত উপজাতীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে, যা আগে সোভিয়েত বিরোধী জিহাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই অঞ্চলের উগ্র স্বাধীনতা প্রবণ পশতুনদের তালেবান এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী গোষ্ঠিদের সাথে গভীর জাতিগত সম্পর্ক ছিল। এই লোকদের চোখে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতদের মতোই আফগানিস্তানের দখলদার; একই আচরণ পাওয়ার যোগ্য। যেহেতু পাকিস্তান মার্কিন সহযোগী ছিল, আমরাও দোষী বলে গণ্য হয়েছিলাম এবং হামলার শিকার হয়েছিলাম।’
পাকিস্তান ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যে মিত্রদের বোমা হামলার শিকার হয়েছে। ৪৫০টিরও বেশি মার্কিন ড্রোন হামলার ফলে দেশটির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এই হামলাগুলি ব্যাপকভাবে বেসামরিক প্রাণহানি ঘটায়, যা যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিরোধী অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তোলে।
ইমরান বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, এই বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে, আফগান এবং পশ্চিমা সরকার দোষারোপ করার জন্য পাকিস্তানকে একটি সুবিধাজনক বলির পাঁঠা বানিয়েছে। অন্যায়ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে তালেবানদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার এবং আমাদের সীমান্তে তাদের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ করেছে। যদি এমনটা হতো, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র এই তথাকথিত অভয়ারণ্যগুলোকে টার্গেট করার জন্য ৪৫০-এর বেশি ড্রোন হামলা করত না?’
কাবুলকে সন্তুষ্ট করার জন্য একসময় পাকিস্তান একটি যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয়। বায়োমেট্রিকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেয়। সীমান্তে বেড়া দেওয়ার (যার বেশিরভাগই তারা নিজেরাই করে নিয়েছে) এবং অন্যান্য ব্যবস্থা পরামর্শ দেয়। প্রতিটি প্রস্তাব আশরাফ গনির সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরিবর্তে তারা পাকিস্তানকে দোষারোপ করাকে আরও তীব্র করে তোলে, যা ভারতের ভুয়া সংবাদ নেটওয়ার্কগুলির শত শত প্রচার কেন্দ্রের সাহায্যে একাধিক দেশে প্রচার করা হয়।
ইমরান খান বলেন, ‘আফগান সেনাবাহিনী এবং গনি সরকারের পতনের বিব্রততা এড়িয়ে আরও বেশি বাস্তবসম্মত পন্থা হত তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করা। আজ, আফগানিস্তানের সাথে আরেকটি মোড়ে, অতীতের দোষারোপের খেলাকে চিরস্থায়ী করার পরিবর্তে, সেই দেশে আরেকটি সহিংস সঙ্ঘাত রোধ করতে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে হবে। আমরা যদি এটি সঠিকভাবে করি, তাহলে আমরা দোহা শান্তি প্রক্রিয়াকে লক্ষ্য করে যা অর্জন করতে পারি। একটি আফগানিস্তান যা বিশ্বের জন্য আর হুমকি নয়, যেখানে আফগানরা চার দশকের সংঘর্ষের পর অবশেষে শান্তির স্বপ্ন দেখতে পারে।’
পাক-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করার বিকল্প আগেও চেষ্টা করা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের মতো, এটি অনিবার্যভাবে একটি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। বিশৃঙ্খলা, ব্যাপক অভিবাসন এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের পুনরুজ্জীবিত হুমকি হবে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। বিশ্বব্যাপী এটি এড়ানো অবশ্যই আমাদের জন্য অপরিহার্য।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।