Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেলমান্দে দাড়ি কামানোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা

বিমান সংস্থাগুলোকে ফ্লাইট চালু করার আহ্বান তালেবানের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আফগানিস্তানে নতুন করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে অনুরোধ করেছে তালেবান। রোববার তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে এমন অনুরোধ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। এদিকে, দাড়ি কামানো অথবা ছোট করে রাখা ইসলামি আইন লঙ্ঘন করে বলে মনে করে তালেবান। এ কারণে আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে দাড়ি কামানো অথবা ছাঁটার ব্যাপারে নরসুন্দরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা।
আফগানিস্তানের নতুন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এমন বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে তালেবান কর্তৃপক্ষ অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগের জন্য কাবুল বিমানবন্দর খুলে দিচ্ছে। এছাড়া পশ্চিমা মদদপুষ্ট আফগান সরকারের পতনের পর তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া তালেবান কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে যে কাবুল বিমানবন্দরের সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কাবুল বিমানবন্দর থেকে এখন নির্দিষ্ট মানবিক সাহায্য ও যাত্রী নিয়ে কিছু ফ্লাইট যাতায়াত করছে। এর আগে অসংখ্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনা ও পশ্চিমা সমর্থক আফগানদের সরিয়ে সময় চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশের কারণে কাবুল বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে কাবুল বিমানবন্দর অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে কাতার ও তুরস্কের সহযোগিতায় এ বিমানবন্দরটিকে মেরামত করা হয়। এখন এ বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
বর্তমানে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা ও আরো কয়েকটি এয়ারলাইন্সের কিছু বিমান যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, চাহিদার চেয়ে আসন সংখ্যা কম হওয়ার কারণে ভাড়া অনেক বেশি। এ কারণে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বলখী বলেন, (সম্পূর্ণরূপে) আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেবা চালু না হওয়ার কারণে বিদেশে অবস্থানরত আফগান নাগরিক আর দেশে অবস্থানরত সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা সমস্যায় পড়েছেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে কাবুল বিমানবন্দরের সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এখন আফগান সরকার বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোকে পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
এদিকে, রোববার হেলমান্দ প্রদেশে তালেবানরা নরসুন্দরদের আনুষ্ঠানিক নোটিশ দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে চুল ও দাড়ির ক্ষেত্রে ইসলামি আইন অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে এই ব্যাপারে কোন ধরনের অভিযোগ করার অধিকার কারো নেই। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের কঠোর সাজা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
তালেবানদের এমন আদেশে পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নরসুন্দরেরা। কাবুলের বেশ কিছু নরসুন্দরও জানিয়েছেন, তারাও একই ধরনের আদেশ পেয়েছেন। একজন নরসুন্দর জানিয়েছেন, তালেবান যোদ্ধারা প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আসছেন এবং শাসিয়ে যাচ্ছেন যে, যারা আদেশ অমান্য করছে তাদের ধরার জন্য পুলিশ পাঠানো হবে। কাবুলের সবচেয়ে বড় হেয়ার-ড্রেসিং দোকানের মালিক জানিয়েছেন, তিনি একটি ফোন কল পেয়েছেন। নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে তাকে একজন হুমকি দিয়েছেন ‘মার্কিন স্টাইল’ অনুসরণ না করার জন্য। নরসুন্দরেরা জানিয়েছেন তালেবানদের এমন আদেশে তারা পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একজন নরসুন্দর বলেছেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। কিন্তু আমি আর চালিয়ে যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’ তার সেবাগ্রহীতাদের দাড়ি কামানো বন্ধ করে দিয়েছেন। দাম কমিয়েও খদ্দের আকর্ষণ করা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন তিনি।
এমন আদেশ তালেবানের অতীত শাসনামলে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। যদিও তারা আগের মতো অত কঠোর নিয়মকানুন রাখবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়কালে তালেবান শাসনামলে জমকালো চুল না রেখে বরং পুরুষদের দাড়ি রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দাড়ি চেঁছে ফেলা অথবা বিভিন্ন কায়দার চুল-দাড়ি রাখা আফগানিস্তানে জনপ্রিয় হয়েছে। গত মাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেবার পর থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা আরোপ করছে তালেবান। শনিবার হেরাত প্রদেশে বন্দুকযুদ্ধে নিহত চারজন অপহরণকারীর লাশ অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। সূত্র : ডন, বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ