পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি জন্মলাভ করেন। আমরা এ উপলক্ষে তাকে আন্তরিক ও অকুণ্ঠ শুভেচ্ছা জানাই। আমরা জানি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে তিনি এখন ওয়াশিংটন রয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন। তাই এবারের জন্মদিন তিনি সেখানেই কাটাবেন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ইতোমধ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। পার্টির শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা জোরদার করার সদিচ্ছাও ব্যক্ত করা হয়েছে ওই বার্তায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এযাবৎকালে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে দলীয় সভানেত্রী। একই সঙ্গে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তিনি দেশ ও সরকার পরিচালনা করছেন। তাঁর, তাঁর দল ও সরকারের সঙ্গে এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শুভেচ্ছা তারই সাক্ষ্য বহন করে। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। এরপর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি অতীতে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। জাতীয় নেত্রী হিসেবে এ দীর্ঘ সময়কালে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন, প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যে বিরল ও অভূতপূর্ব কৃতিত্ব তিনি দেখিয়েছেন, দেশে তার কোনো দ্বিতীয় নজির নেই। বহির্বিশ্বের অনেক দেশেও এমন নেতৃগুণসম্পন্ন, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা দেখতে পাওয়া যায় না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার পাশাপাশি বিশ্বনেতা হিসেবেও তাঁর অনিবার্য স্বীকৃতি মিলেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য, সন্দেহ নেই, অত্যন্ত গৌরবজনক ও মর্যাদাকর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা। বাংলাদেশের সৃষ্টি ও বাঙালি জাতির নবোত্থান ও পুর্নগঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ইতিহাসের অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। কথায় বলে: বৃক্ষের পরিচয় ফলে। এক্ষেত্রেও সেটা বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য। শেখ হাসিনাকে দেখে বুঝতে মোটেই অসুবিধা হয় না যে, তিনি বঙ্গবন্ধুরই কন্যা। ব্যক্তিত্ব, আচার-আচরণ, সভ্যতা-ভব্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, আদর্শনিষ্ঠা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ করার দৃঢ় প্রত্যয় ইত্যাদি দিক দিয়ে তাঁর সঙ্গে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই তুলনা করা যায়। বাংলাদেশ মানেই যেমন বঙ্গবন্ধু, তেমনি শেখ হাসিনাও তাঁর পিতার মতো প্রতীক ও পরিচয়ের পতাকা হিসেবে নিজেকে বিভূষিত করেছেন। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে, তাঁর পরিচিতির সঙ্গে শেখ হাসিনাও এক অপরিহার্য নাম। শেখ হাসিনা নানা উপলক্ষে প্রায়ই বলে থাকেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য। জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ ছাড়া তাঁর আর কোনো অভিপ্রায় নেই। উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা তার সমস্ত কর্মের অনুপ্রেরণা। দেশ ও জাতীয় উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ছাড়া কোনো জাতীয় নেতার আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। এজন্য জীবন দিতেও তিনি সদাপ্রস্তুত থাকেন। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারের শাহাদত বরণ এরই প্রমাণ। দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন সময় হামলার শিকার হতে হয়েছে। প্রতিটি হামলা থেকেই মহান আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। এটা আল্লাহপাকের একান্ত রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেকে বলে থাকেন, প্রতিটি মানুষের জীবনেই এমন একটা সময় আসে, যখন আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস দৃঢ় ও নিষ্ঠ হয়। দুনিয়ার আকাক্সক্ষা ও কামনা-বাসনা হ্রাস পায় এবং শোক-দুঃখের অনুভূতিও কমে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে অনেক কিছুই দেশ ও জাতির জন্য করেছেন। দেশ-উন্নয়নের ক্ষেত্রে, মানবিক উৎকর্ষের ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে বিশ্বে তা বিশেষ অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে, অনেক ক্ষেত্রেই পরিণত হয়েছে রোল মডেলে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দেশে উন্নয়নের রীতিমত জোয়ার এসেছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পরমাণু প্রকল্প ইত্যাদি মেগাপ্রকল্পের পাশাপাশি হাজার হাজার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে দেশ উন্নয়নের একটা বিশেষ উচ্চতা অতিক্রম করে যাবে। এইসঙ্গে মানুষের জীবনমানের প্রভূত উন্নতি হবে। এটা বলা বাহুল্য যে, করোনা মহামারির কারণে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, উৎপাদন ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যাবতীয় উন্নয়ন ও উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম শ্লথতার শিকার হয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে সরকার সর্বোতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হলো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও তাকিদ ছাড়া কোনো কিছুই ঠিকমত হয় না। এমতাবস্থায়, দেশের সংকট ও বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরাবরের মতোই অগ্রবর্তী ভূমিকায় অবর্তীণ হতে হবে। এখন মেগা প্রকল্পসহ সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি আনতে হবে এবং দ্রুত শেষ করতে হবে, যাতে জনগণ দ্রুত সুফল পেতে পারে। বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ ইতোমধ্যেই ব্যাপকহারে কমেছে। দেশি বিনিয়োগও এযাবৎকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। সার্বিক বিনিয়োগের এই খরা কাটাতে হবে। বিনিয়োগ ছাড়া শিল্পায়ন, উৎপাদন, কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের আহবান জানিয়েছেন। এই যেমন ক’দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিও একই আহবান জানিয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সউদী আরব সফরে গিয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে সাড়া পেয়েছেন সেটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিদেশি বিনিয়োগ-আগ্রহ দ্রুত কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনা বিদেশি কোনো বিনিয়োগকে যাতে ব্যহত না করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বিদ্বৎ সমাজ বলে থাকে, অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক উন্নয়ন আবশ্যক। মানবাধিকারের উন্নয়নও জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতঃপর এসবদিকে নজর দেবেন ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেবেন, এটা আমরা একান্তভাবেই আশা করি। দেশে-বিদেশে তাঁর যে প্রশংসনীয় ইমেজ গড়ে উঠেছে, তা আরও বিকশিত হোক, তিনি দীর্ঘজীবী হোন, আজকের দিনে এই কামনাই করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।