পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কলাবাগানস্থ তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়েছে। মাঠটি এলাকার মুক্তাঙ্গন বা শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবেই থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, মাঠটিতে আর কোনো নির্মাণকাজ হবে না। জায়গাটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। এটি আগের মতো এলাকাবাসী ব্যবহার করবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণের জন্য দেয়াল তোলা শুরু হলে এক মা ও তার কিশোর ছেলে প্রতিবাদ করে। এতে পুলিশ মা ও ছেলেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসী আন্দোলন শুরু করে। এতে নাগরিক সমাজের লোকজনও অংশগ্রহণ করে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তবে এর কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। পরিস্থিতি দিন দিন জটিলতার দিকে যাচ্ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দাবী করছিল, এটি পুলিশের জায়গা। সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে, এলাকাবাসী ও নাগরিক সমাজ এ মাঠ কিছুতেই দেয়া হবে না বলে অনড় থাকে। এ সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচার হয়। এমতাবস্থায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠটি যেভাবে আছে সেভাবে রাখার নির্দেশ দেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আমরাও এই সুচিন্তিত নির্দেশের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই।
তেঁতুলতলা মাঠটি খুব বেশি বড় নয়। তবে এলাকাবাসীর জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে এক টুকরো ফাঁকা স্থান এবং নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা হয়ে আছে মাঠটি। মাঠটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের খেলার স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানেই পুলিশ থানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সরকার তাদের বরাদ্দ দিয়েছে এবং কিনেছে বলে দাবী করে। সমস্যা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছর ধরে পুলিশের মধ্যে এমন প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো জায়গায় তারা তাদের স্থাপনা নির্মাণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ অনুমতির বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশের প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে কারো আপত্তি নেই। তবে তা জনস্বার্থের বিপরীতে যায়, এমন হওয়া কাম্য নয়। রাজধানীতে খোলা জায়গার সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এক সময় রাজধানীর প্রতি পাড়া-মহল্লা, সরকারি কলোনির ভেতর একাধিক খেলার মাঠ, খোলা জায়গা ও পুকুর দেখা গেছে। এখন এগুলো ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে সেখানে হাইরাইজ বিল্ডিং গড়ে উঠেছে এবং উঠছে। শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জায়গা বলতে কিছু থাকছে না। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাঠ না থাকলে শিশু-কিশোরদের সার্বিক বিকাশ ঘটবে না। আজ যে কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে উঠেছে, তার অন্যতম কারণ মাঠ না থাকা এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকা। এ ব্যবস্থা না থাকলে এ ধরনের গ্যাং গড়ে উঠত না। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, রাজধানী ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে খোলা জায়গা অত্যন্ত জরুরি। মানুষ যাতে ঘর থেকে বের হয়ে খোলা জায়াগায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে, এ ব্যবস্থা প্রত্যেক এলাকায় থাকা দরকার। দুঃখের বিষয়, প্রায় সব এলাকায় খোলা জয়গা বলতে কিছু নেই। গায়ে গায়ে ঘেঁষে হাইরাইজ ভবন গড়ে উঠেছে। এ এক ভয়ভাহ শঙ্কার বিষয়। তেঁতুলতলা মাঠকে এলাকার সাধারণ মানুষ একাত্ম হয়ে যেভাবে রক্ষা করেছে, তা কল্যাণের জন্যই করেছে। মাঠটি ছোট, তবে তা রক্ষার আন্দোলনটির প্রতিক্রিয়া ছিল অনেক বড়। এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। সর্বস্তরের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল। জনপ্রিয় এই আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থন দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এতে তাঁর ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, যেকোনো জনসম্পৃক্ত গ্রহণযোগ্য দাবী বা প্রতিবাদের ক্ষেত্রে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে এবং নির্দেশনা প্রদান করতে হচ্ছে। এটা প্রশাসন পারছে না কেন? কেন এমন হবে? বরং সমস্যা সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তার গ্রহণযোগ্য সমাধান করে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করলে তা প্রশংসিত হতে পারে। আমরা দেখছি, প্রায়ই জনসম্পৃক্ত ও জনপ্রিয় কোনো ইস্যু নিয়ে আন্দোলন বা প্রতিবাদ হলে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকেই সিদ্ধান্ত দিতে হয়, প্রশাসন সুরাহা করতে পারে না, যা খুবই দুঃখজনক। তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জায়গাটি পুলিশেরই থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণ পুলিশই করবে। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। যদি এমন হয়, পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, ছয় মাস বা একবছর পর পুলিশ আবার সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করতে শুরু করবে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মাঠটি জনগণেরই থাকতে হবে। পুলিশের থাকবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।