Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাথা খাটাতে মাথাব্যথা

| প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

লেখাপড়া, গবেষণা, কোনো যন্ত্র পরিচালনা ও মেরামতে মাথা খাটানো হয়। কোনো নতুন কিছু আবিষ্কার করতেও মাথা পরিচালনা করতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও মাথা খাটাতে হয়। এ জন্য মাঝে মধ্যে মাথায় নানা সমস্যা হয়। ফলে আমরা কষ্ট পাই। নানাভাবে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আজ এক তরুণী ছাত্রীর মাথাব্যথার কথা বলব। লুনা একজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী। বয়স আঠারো। সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী ও মেধাবী। এজন্য সে গর্বিত। মা-বাবাও গর্বিত হওয়া স্বাভাবিক। কত ছাত্র তার পাণিপ্রার্থী। কতজন তার চার পাশে ঘুরঘুর করে। লুনার দিনগুলো হাসি আনন্দেই কাটছিল হঠাৎ একদিন মাথায় ব্যথা। তখন তার সেকেন্ড সেমিস্টার শুরু হবে। লুনা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। ডাক্তার ইতিহাস শুনে এবং কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু ওষুধ দেন, কিন্তু কোনো কাজ করল না। মাথাব্যথা চলছে। ডাক্তার বললেন, এটা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। নিউরোলজিস্টকে রেফার করেন। নিউরোলজিস্ট ইতিহাস শুনে বললেন, এটা বাইলেটারাল মাথাব্যথা। তিনি প্রশ্ন করেন, মাথাব্যথার সময় কি বমি ও হাত-পা অবসবোধ হয়? লুনা জবাব দিলো- হ্যাঁ। তিনি বললেন তাহলে এটা মাইগ্রেন। তিনি লুনাকে পরামর্শ দেন, বেশি বেশি ঘুমাও। সকাল- বিকেল ব্যায়াম করো। সুষম খাবার খাও। কোনো পুষ্টিবিদের কাছ থেকে এই খাবারের তালিকা নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করো। খেতে বললেন তিন মাস। তিন মাস পর আবার সাক্ষাৎ করতে বলেন। এই ওষুধে কাজ না হলে ওষুধ ইরগোটামিন টারট্রেট নিতে বলেন। লুনার বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাদের পরিবারে কারো কখনো মাইগ্রেন ছিল না। লুনা ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে থাকে। এক রাতে ওষুধ খেতে ভুলে যায়। তখন আবার মাথাব্যথা শুরু হয়। সাথে পানির পিপাসা বেড়ে যায়। ওষুধ নিয়মিত খেয়ে কোনো কাজ হলো না, বরং মাথাব্যথা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেল। তখন তার পরীক্ষা চলছিল। এমন অবস্থা হলো যে, পরীক্ষা শেষ করতে পারে না। ব্যথায় যেন মাথা ফেটে যায়। পরবর্তী তিন মাস মাথাব্যথা জেঁকে বসল।
লুনা মোটা হচ্ছে। ওজন প্রায় ৬ কেজি বেড়ে গেল। নিজের চেহারা অন্য রকম হয়ে গেল। তার প্রেমপ্রত্যাশীরা মুচকি হাসে। আবার নিউরোলজিস্টের কাছে যায়। নিউরো বিশেষজ্ঞ বললেন, তার মাথার এমআরআই করাতে হবে। মাথার ভেতর অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না তিনি নিশ্চিত হতে চান। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক এমআরআই করানো হলো, কিন্তু রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেল না। পরিবারের সদস্য ও ডাক্তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

এবার কিন্তু সমস্যা লুনা নিজেই আবিষ্কার করল। একবার ছুটির সময় লুনা ওষুধ খেতে ভুলে যায়, কিন্তু মাথাব্যথা হয়নি। তখন তার কলেজে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। লুনা সেই প্রতিযোগিতায় একটা আইটেমে প্রতিযোগিতা করে প্রথম হলো। তখন কোনো ওষুধ খায়নি। তার ফলে কোনো মাথাব্যথাও হয়নি। লুনা ও তার পরিবার ভাবে সমস্যা বিদায় নিয়েছে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। কিন্তু সমস্যা লুকিয়ে ছিল। তাই কিছু দিন অতীতের পর আবার ফিরে এলো মাথাব্যাথা। আবার নিউরো ডাক্তারের শরণাপন্ন। ডাক্তার বললেন, দেখা যাচ্ছে, রোগটা আঙ্গিক নয়, মানসিক। যখন মস্তিষ্ক পরিচালিত হয়, তখন ব্যথা থাকে না। যখন মস্তিষ্ক সমস্যা অল্প থাকে তখন নানা আজেবাজে চিন্তা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে ব্যথা সৃষ্টি করে। তাই এটা কোনো চিকিৎসাযোগ্য রোগ নয়। দৈহিক ও মানসিক ক্রিয়ার সংমিশ্রণে এই রোগের সৃষ্টি হয়। যারা দুশ্চিন্তামুক্ত বা যারা মানসিকভাবে সুস্থ তাদের সাধারণত মাথাব্যথা হয় না। তবে যত রোগ সৃষ্টি হয়েছে, স্রষ্টা সব রোগের চিকিৎসা বা ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, চিত্তবিনোদনের জন্য বইপড়া, গানবাজনা, খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত হতে পরামর্শ দেন। লুনা ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করেই সুস্থ হয়ে যায়।

পাঁপড়ি রাণী রায়
শিক্ষিকা-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭৪৩-৫৫৩৪১৫
ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়, মিরের ময়দান, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন