পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত রোববার ভারত এনসিবিকে চিঠি পাঠানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার আবারও অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদরদফতর সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সোহেল রানার বিষয়ে তদন্ত করছেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ডিএমপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। যার বেশির ভাগই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে গড়ে তুলেছেন বাড়ি, গাড়ি, হোটেল, রিসোর্ট ও অন্যান্য ব্যবসা। গ্রাহকদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকার একটি বড় অংশ তিনি সরিয়ে ফেলেছেন। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য এরই মধ্যে পাওয়া গেছে এবং এ সব তথ্য তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
পুলিশ সদরদফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত রোববার ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত এনসিবিকে সে দেশে গ্রেফতার রাজধানীর বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানাকে (সাময়িক বরখাস্ত) ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত দিল্লি এনসিবির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তবে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই তথ্য সংগ্রহ করছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
এনসিবির এআইজি আরো বলেন, গুলশান পুলিশের উপ-কমিশনারের একটি চিঠি ডিএমপি কমিশনারের মাধ্যমে ফরওয়ার্ডিং হয়ে আমাদের কাছে এসেছে। সেখানে বরখাস্ত হওয়া সোহেল রানার ব্যাপারে মামলাসহ নানা তথ্য উপাত্ত রয়েছে। সেগুলো সংযুক্ত করে আমরা মঙ্গলবার দুপুরে আরেকটি চিঠি দিল্লি এনসিবিকে পাঠিয়েছি। যেহেতু সোহেল রানা সেখানে গ্রেফতার হয়েছেন। সে দেশের আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার, বাংলাদেশ পুলিশ টু ভারত পুলিশ সেটা আমরা করছি। তবে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০/১২ বছর ধরে ডিএমপিতে চাকরি করছেন সোহেল রানা। কখনো বনানী, কখনো গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা আবার কখনো ভাটারা ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় চাকরি করেছেন। সবসময় তিনি রাজনৈতিক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একজন নেতার আশীর্বাদে অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। সবচেয়ে বেশি চাকরি করেছেন বনানী আর গুলশান থানায়। কখনো তার ওসি হওয়ার স্বপ্ন ছিল না। একটু ছোট পদে থেকে ক্ষমতা বেশি খাটানো এবং নিজের জন্য বেশি সময় দেয়া যায়- এই বিশ্বাসেই তিনি ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রচুর সময় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে তিনি একাই প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই তিনি দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পত্তি করেছেন। তদন্ত সংস্থার সদস্যরা বলছেন, অবৈধভাবে আয় করা অর্থ তিনি অবৈধভাবিই বিদেশে পাচার করেছেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, থাইল্যান্ডের পাতায়ায় হিলটন হোটেলের পাশে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বাংলাদেশেও একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে তার। এই অঙ্কও প্রায় একশ কোটি টাকার কাছাকাছি। এছাড়া পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সুপারশপ, বার ও রেস্টুরেন্টও রয়েছে সোহেল রানার।
তদন্ত রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, পূর্বাচলে ৩ নম্বর সেক্টরে প্লট ও নিকেতনে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে সোহেল রানার। একটি ফ্ল্যাটে তার ছোট খালু মো. সাগর থাকেন, অন্যটি ভাড়া দেওয়া আছে। একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তিনি। তার অফিস গুলশান-২ নম্বরে ডিসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারের পেছনে। এছাড়া গুলশানের শাহজাদপুরে আছে তার তিনটি ফ্ল্যাট। খাগড়াছড়িতে একটি রিসোর্টের জন্য জায়গা কেনা রয়েছে সোহেলের। গোপালগঞ্জে প্রায় ৫০০ বিঘারও বেশি জমির মালিক তিনি। এছাড়া তিনি বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আমেরিকান, জার্মান ও কোরিয়ান ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। বিদেশে সম্পদের মধ্যে রয়েছে- থাইল্যান্ডের পাতায়ায় জমি, ফ্ল্যাট ও সুপারশপ। সেখানে হিলটন হোটেলের পাশে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, পর্তুগালে দোকান ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, প্যারিসে রেস্টুরেন্ট ও বার ব্যবসা, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় স্ট্রিট বার এবং নেপালেও নানা ব্যবসায় তার বিনিয়োগ আছে। তার রয়েছে বিদেশি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল এখন পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় ১০ বছর হলো প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী একজন অভিনেত্রী। লন্ডনে উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে তিনি তৃতীয় বিয়ে করেন। আর চতুর্থ স্ত্রীর নাম নাজনীন নাহার বিথী। এই বিথীও অর্থ আত্মসাৎ মামলার একজন পলাতক আসামি। সোহেল সর্বশেষ শাহজাদপুরের সুবাস্ত নজরভ্যালির টাওয়ার-৩ এর ফ্ল্যাট ১০/বি-এ বসবাস করতেন। উল্লেখ্য গত শুক্রবার ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। বর্তমানে ভারতে পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।