Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তদন্তে একাধিক সংস্থা

ভারতে রিমান্ডে সোহেল রানা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে : ডিএমপি কমিশনার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর বনানী থানার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে থাকার পরেও সোহেল রানা কীভাবে ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হলেন এবং ভারতে পালিয়ে গেলেন তা খতিয়ে দেখছে একাধিক সংস্থা। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সোহেল রানা গ্রেফতারের পর ভারতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে ফেরত আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে গতকাল রোববার পুলিশ সদস্যদের পদমর্যদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ভারতে গ্রেফতার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফেরত আনা হবে। তাকে ফেরত আনতে পুলিশের তরফে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি অত সহজ নয়। তবু আমরা আশা করছি, দ্রুত একটি ফল পাওয়া যাবে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বনানী থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে কর্মরত থেকেও সোহেল রানা কীভাবে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হলেন। তার সহযোগী হিসেবে পুলিশে আরো কেউ রয়েছেন কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও বিষয়টি নজরে নিয়ে তদন্ত করছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কারো সহযোগিতা ছাড়া একজন পুলিশ কর্মকর্তা এভাবে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজ নয়। তদন্তে এর সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সব বিষয়েই কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ সদস্যরা শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে গ্রেফতার করে। কোচবিহারের আদালতে শনিবার তাকে হাজির করা হলে আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠার শুরু থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখেন সোহেল রানা। তবে আগে করা দুটি মামলায় তাকে আসামি না করায় তিনি কিছু নির্ভার ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলাটি গ্রহণ করায় কিছুটা চাপে পড়েন তিনি। ওইদিন রাতেই বনানী থানা থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান শেখ সোহেল রানা। মূলত, গ্রেফতার এড়াতেই ভারত হয়েই অন্য কোনো দেশে যেতে চেয়েছিলেন বিতর্কিত এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে শনিবার বলা হয়েছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত জানতে সোহেল রানাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল ফোন এবং এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, যেহেতু ভারতে মামলা হয়েছে এ কারণে তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে কি-না সেটি নিশ্চিত না। তবে ফিরিয়ে আনার রাস্তা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিএসএফকে চিঠি দিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটি অনেক সময় করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি ফিরিয়ে আনার জন্য। যদি এ মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, তার (পরিদর্শক সোহেল রানা) ব্যাপারে গুলশান বিভাগ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রিপোর্ট পেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক সোহেল রানা জানান, তার লক্ষ্য ছিল শিলিগুঁড়িতে যাওয়া, সেখানে কপিল নামে তার একজন বন্ধু রয়েছেন। কপিলের মাধ্যমে নেপালে যাবার কথা ছিল তার। নেপাল থেকে কিছুদিন পর ইউরোপ পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা ছিল সোহেলের।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানার নেতৃত্বেই পুরো কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম চলত। তিনি অভয় দিতেন কোম্পানির কারও কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না। প্রতিদিন মিটিং সিটিং সবকিছুতেই সোহেল রানা উপস্থিত থাকতেন। প্রতিদিনকার গ্রাকদের জমা করা টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেয়া হতো। সেই টাকার কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো কিছু জানা যায়নি। ভারতের পুলিশ এরই মধ্যে সোহেল রানার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়েছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ই-অরেঞ্জ

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ