Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপালে পালাতে গিয়ে আটক হলেন ভারতের কোচবিহারে

গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে থানায় যাননি এবং ছুটিও নেননি ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানাকে ভারত-নেপাল সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেন।
অন্যদিকে ডিএমপির গুলশান বিভাগে ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অফিস করেছেন। এরপর গতকাল পর্যন্ত দু’দিন তিনি থানায় যাননি, ছুটিও নেননি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে খবর পাচ্ছি তিনি নেপাল-ভারত সীমান্তে বিএসএফর হাতে আটক হয়েছেন। তবে আমরা এখনো তা নিশ্চিত হতে পারিনি। বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ও আটক সোহেল রানা একই ব্যক্তি কি না তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে গত শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল এবং এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সোহেল রানা গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ডিউটি করেছেন। এরপর তিনি আর থানায় আসেননি। এখন তিনি কোথায় আছেন সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই।

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভারত-নেপাল সীমান্তে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশি আটক হয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা বিএসএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এরকম কোনো তথ্য পাইনি। সত্যি সোহেল রানা আটক হয়ে থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। বনানী থানার এই পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।

গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়। আসামিরা হলেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।
ওই সূত্র জানায়, শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা। তবে অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠান থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যম বলেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বিএসএফ কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। সম্ভবত গা ঢাকা দেয়ার লক্ষ্যে তিনি ভারতে প্রবেশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সোহেল রানাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বিএসএফ। বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের ডিআইজি সঞ্জয় পান্থসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা শনিবার চ্যাংরাবান্ধায় পৌঁছেছেন।

ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোহেল রানা আর তার বোন মেহজাবিন মিলে গ্রাহকদের টাকা অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছেন এবং বিদেশে কিছু টাকা গিয়েছে বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

পুলিশ পরিদর্শক সোহেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা: গ্রাহকের ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন: ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ, নাজনিন নাহার বিথি, কাওসার, কামরুল হাসান, আব্দুল কাদের, নূরজাহান ইসলাম সোনিয়া ও রুবেল খান।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আদালতের আদেশে বৃহস্পতিবার মামলাটি নেয়া হয়। বর্তমানে তদন্ত চলছে। গ্রাহকের ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় ভারতে আটক বনানী থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সোহেল রানাকে দশ নম্বর আসামি করা হয়।

সূত্র জানায়, গত শুক্রবার গুলশান থানায় দায়ের করা মামলাটি আদালতে পৌঁছালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান এজহার গ্রহণ করেন। এরপর তদন্ত করে আগামী ১০ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। গত ৩১ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে ইসতিয়াক হোসেন টিটু নামে এক ভুক্তভোগী সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ই-অরেঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারী ও সহযোগী। তারা ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ ও বিক্রি করেন। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য নগদ/বিকাশ/ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ও তারিখে অর্থ প্রদান করে। যার পরিমাণ ৭৬ লাখ ৪১ হাজার ১০২ টাকা টাকা। টাকা প্রদানের পর পণ্য না দিয়ে আসামিরা এ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

বিজিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গত রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা বিএসএফকে জানিয়েছেন, তিনি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বাসযোগে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে যান। পরে সেখান থেকে গত শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটায় স্থানীয় দালাল বাবুর মাধ্যমে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হন। তিনি ভারত থেকে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তিনি ২০০৩ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবার নাম শেখ আব্দুস সালাম।



 

Show all comments
  • Yousuf Parvez ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৬ এএম says : 0
    বুঝাই যায় চেহারা দেখে। মাথাটা অরেঞ্জ কালার।
    Total Reply(0) Reply
  • Mijanur Islam Mojnu ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৬ এএম says : 0
    যে যা পারিস লুটেপুটে খা
    Total Reply(0) Reply
  • Ripon Howlader ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৮ এএম says : 0
    তদন্ত করলে বের হবে ওর সাথে বড় বড় রাঘব বোয়াল জড়িত প্রশাসনকে অনুরোধ করবো সঠিক তদন্ত করে গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দিন এটা প্রশাসনের দায়িত্ব
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mojammel ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৮ এএম says : 0
    বর্তমান সরকারের আমলে ব্যবসার নামে শুধু গরিব দুঃখী মানুষের টাকা পয়সা মেরে দেশ ছেরে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে কারন কি
    Total Reply(0) Reply
  • Sharif Khan ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৯ এএম says : 0
    পুলিশই তাকে পালাতে দিয়েছে। বেরসিক বিএসএফ। ঠিক মত ম্যানেজ করতে না পারায় তাকে আটক করেছে। ডি এম পি কমিশনার কিছুই জানেন না। বাংলাদেশ থেকে নাকি অনেক জংগী তালেবানের সাথে যোগ দিতে আফগানিস্তানে গেছে।এত বড় খবর জানলেন কিন্তু সোহেল রানা ভারতে বা অন্য কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে এটা জানলেন না? আপনার তো পদত্যাগ করা উচিত। সভ্য দেশ হলে তাই করতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Pavel Ahmed ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৯ এএম says : 0
    এতো কিছু হয়ে যাবার পর কি করে সে সিমান্ত অতিক্রম করলো জাতি জানতে চায়
    Total Reply(0) Reply
  • Sifur Rahman ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৯ এএম says : 0
    সরকারের আরো অনেক কর্মকর্তা চোর আছে একদিন তারাও ধরা পরবে। ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shahdat ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৯ এএম says : 0
    তাহলে আমাদের দেশের বিডিআর কি করছে ও জেদিক দিয়ে গেছে ঔ জাগাতে জুদি কোনো বিডিআর থাকে তাহলে যে কয়েকজন ছিলো তাদের চাকরি কি কারণে থাকবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ই-অরেঞ্জ

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ