মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তালেবান বলছে, পাঞ্জশির প্রদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন পুরো আফগানিস্তান তাদের হাতে রয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, যে এলাকাটি সর্বশেষ প্রতিরোধ বাহিনীর দখলে ছিল, সেটি ‘সম্পূর্ণভাবে জয় করা হয়েছে’ এবং ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক’ নিহত হয়েছে, এবং ‘বাকিরা পালিয়ে গেছে’।
তালেবান জানায়, পাঞ্জশিরে প্রতিরোধ বাহিনীর অন্যতম নেতা আহমদ মাসুদের বাড়িরও দখল নিয়েছে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মাসুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। এ মুহূর্তে পাঞ্জশিরে একটি গোপন ডেরায় আমরুল্লাহ সালেহ্ ও মাসুদ রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
এদিকে আফগানিস্তানে গঠিত হতে যাওয়া নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে মোল্লা হাসান আখুন্দকে মনোনীত করেছে তালেবান। তালেবানের জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতার বরাত দিয়ে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
খবরে জানানো হয়, সোমবার সরকার গঠনের ঘোষণার জন্য তালেবান প্রস্তুতি নিলেও ‘অনিবার্য কিছু কারণে’ তা স্থগিত করা হয়েছে। তালেবান নেতারা জানান, বুধবার বা আরো কিছুদিন বিলম্বে সরকার গঠন হতে পারে।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে তালেবানের এক নেতা বলেন, ‘মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে রইস-ই-জমহুর বা রইস-ই-ওজারা অথবা আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রস্তাব করেন আমিরুল মুমিনীন শেখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। মোল্লা বারাদার ও মোল্লা আবদুস সালাম তার সহকারী হিসেবে কাজ করবেন’।
মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ বর্তমানে তালেবানের ক্ষমতাশালী সিদ্ধান্ত দানকারী কাঠামো রাহবারি শুরার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। কান্দাহারের বাসিন্দা মোল্লা হাসান সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। তালেবানের অপর এক নেতা বলেন, মোল্লা হাসান দীর্ঘ ২০ বছর রাহবারি শুরার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সামরিক তৎপরতার বদলে ধর্মীয় নেতা হিসেবেই তিনি পরিচিত।
এর আগে তালেবানের প্রথম আমলে প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ।
এদিকে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তালেবানের আগের আমলের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকিকে নিয়োগ করা হচ্ছে। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে যথাক্রমে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি ও মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে গঠিত হতে যাওয়া সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদকে আগে মনোনয়ন দেয়া হলেও তা পরিবর্তন করে নতুন করে সরকার প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের মুখপাত্র হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
গতকাল সকালে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, ‘আফগানিস্তানের শেষ প্রদেশ হিসাবে পাঞ্জশির এখন আমাদের দখলে। গোটা আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালেবান।’ যদিও এ দাবির পাল্টা উত্তরের জোট জানিয়েছে, মিথ্যা দাবি করছে তালেবান। ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্স অব আফগানিস্তান’ টুইট করে বলে, ‘তালেবানের পাঞ্জশির দখলের দাবি মিথ্যা। এখনও সেখানে প্রতিরোধ বাহিনী রয়েছে। আমরা লড়াই করছি। আমরা আফগানদের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি, যত দিন না স্বাধীনতা ও নিজেদের অধিকার ফিরে পাব তত দিন লড়াই চলবে।’
উত্তরের জোট যা-ই দাবি করুক, সোমবার বেলা বাড়তেই পাঞ্জশিরের সরকারি ভবনে তালেবানি পতাকা উড়তে দেখা যায়। বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির খবরও আসতে থাকে। এদিকে রোববারই যুদ্ধবিরতির ডাক দেয় উত্তরের জোট বা নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দেয় তারা। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে তালেবান।
তালেবানদের অগ্রযাত্রার মুখে পাঞ্জশির উপত্যকায় বিরোধীদের প্রতিরোধ প্রায় ভেঙে পড়েছে। কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর তালেবানরা প্রদেশের রাজধানী বাজারকসহ সাতটি জেলার চারটি দখল করে নিয়েছে।
গতকাল কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে যেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে, সেই এই দেশ ও দেশের মানুষের শত্রু। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। যুদ্ধ শেষে তিনি আশা করছেন এক স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবে। মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র হাতে নেবে, তাদেরকে দেশ ও দেশের জনগণের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে। তালেবান মুখপাত্র বলেন, জনগণের জানা থাকা প্রয়োজন আগ্রাসনকারীরা আমাদের দেশ গঠন করতে পারবে না। সুতরাং আমাদের জনগণের নিজেদেরই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাঞ্জশিরের তালেবানবিরোধী আহমদ মাসুদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলেম ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের সাবেক নেতাদের সহায়তায় তারা শুরুতে আলোচনার মাধ্যমেই বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ার জেরে তালেবান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। মুজাহিদ বলেন, তবে তারা চাইলে তালেবানের সাথে একত্রে দেশ গঠনের কাজে অংশ নিতে পারেন। তালেবান নেতৃত্ব তাদেরকে ক্ষমা করে দেবে।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধানের সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, পাকিস্তান এর আগে এমন একটি সফরের জন্য বার্তা পাঠালেও তালেবান স¤প্রতি এতে সম্মতি জানায়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয় দেশের সীমান্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। সূত্র : দ্য সান, রয়টার্স, টোলো নিউজ, আল-জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।