মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি পাহাড়ি পাড়ায় গুরুদুয়ারা বাগ-ই-বালায় ছোট শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যরা তালেবান শাসনের অধীনে তাদের মাতৃভূমিতে বসবাসের অঙ্গীকার করলেও মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।
কাবুলের স্থানীয় গুরুদুয়ার কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনমোহন সিং শেঠি বলেন, গজনী, জালালাবাদ, খোসত এবং কান্দাহার প্রদেশের সাথে এখনও কাবুলে বসবাসরত ছোট শিখ ও হিন্দু স¤প্রদায়ের আফগানিস্তানে তাদের মাতৃভূমি ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং তালেবান শাসনের অধীনেও বসবাস করতে ইচ্ছুক। আফগানিস্তানের প্রায় সাড় ৩ কোটি বাসিন্দার প্রায় ৯৯.৭% মুসলিম।
আনাদোলু এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে শেঠি বলেন, দেশে মাত্র ১৫০টি শিখ এবং হিন্দু পরিবার বাকি আছে, যাদের অধিকাংশ সদস্যই গত ২০ বছরে ভারতে চলে গেছে।
ব্যবসায়ী শেঠির মতে, শিখ এবং হিন্দুরা হাজার বছর ধরে আফগানিস্তানে বসবাস করছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যে কেউ ক্ষমতায় আসুক না কেন আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। ‘সর্বোপরি, এটি আমাদের দেশ’।
এ গোষ্ঠীর কিছু সদস্য অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ধর্মীয় সম্পর্কের কারণে ভারত ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেন এবং বলেন, তারা কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে আমাদের মাতৃভ‚মিতে ফিরে যাব’।
যদিও আফগানিস্তানে শিখ ও হিন্দু পরিবার একসময় হাজার হাজার ছিল, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক আফগানিস্তান আক্রমণের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে শুরু হওয়া কয়েক দশকের সংঘর্ষের সময় সিংহভাগ চলে যায়।
তালিবিন্দর সিং চাওলা বলেছেন, আফগানিস্তানের শিখ স¤প্রদায়ের সদস্যদের তালেবান শাসনের অধীনে বসবাস করার কোন সমস্যা নেই। তিনি সারা দেশ থেকে অন্যান্য শিখ এবং হিন্দুদের সাথে কাবুল ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘তারা যা চায় তা হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের অধিকার রক্ষা করা’।
তালেবানরা যখন সা¤প্রতিক ঝড়ের বেগে অগ্রসর হয়েছে, তখন দুই স¤প্রদায়ের সিংহভাগ কাবুলে এসে কাট্রে পাভরণ পাড়ার একটি মন্দিরে অবস্থান করেছিল। রাজধানী পতনের পরে, তালেবানদের একটি দল মন্দিরে গিয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়।
চাওলা বলেন, ‘আমি কাবুলের গুরুদুয়ারা কমিটির সভাপতির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি ... আজও তালেবান নেতারা গুরুদুয়ারা সাহেবের কাছে এসে হিন্দু ও শিখদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন’। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে তুরস্ককে সংখ্যালঘুদের সহায়তা এবং দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
আফগানিস্তানে হিন্দু ও শিখ
হিন্দু ও শিখরা শত শত বছর ধরে আফগানিস্তানে বসবাস করছে। সম্প্রদায়ের অনেকেই বাণিজ্য এবং ভেষজ ঔষধের কাজ করে। ১৯৪০-এর দশকে আফগানিস্তানের শিখ এবং হিন্দু জনসংখ্যা বেড়ে আড়াই লাখ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত দখল এবং পরবর্তী গৃহযুদ্ধের ফলে স¤প্রদায়গুলো উল্লেখযোগ্যভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে বসতি স্থাপন করে আর অধিকাংশই ভারত ও পাকিস্তানে চলে যায়।
তালেবানদের প্রথম শাসনের সময় ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শিখ এবং হিন্দুদের হলুদ আর্মব্যান্ড পরা এবং তাদের বাড়ির উপরে হলুদ পতাকা উত্তোলনের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তালেবানরা তাদের দেশে বসবাস করতে এবং তাদের ধর্মের রীতি অনুসারে পূজা করার অনুমতি দিয়ে তাদের ‘জিম্মা’ বলে উল্লেখ করে। একটি ইসলামী দেশে বসবাসকারী অমুসলিমদের জন্য ব্যবহৃত এটি একটি ঐতিহাসিক শব্দ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগান শিখ এবং হিন্দুরা সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য আফগান ঐতিহ্য গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে পশতু বা দারিতে কথোপকথন করে, যা আফগানিস্তানের সরকারী ভাষা, কিন্তু শুধুমাত্র বাড়িতে পাঞ্জাবি বলে।
২০১৮ সালে, পূর্ব জালালাবাদ শহরে হিন্দু ও শিখদের একটি কনভয়কে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছিল। গত বছর, কাবুলের শোরবাজার পাড়ায় একটি শিখ মন্দিরে সশস্ত্র হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছিল, যার জন্য পরে দায় স্বীকার করেছিল আইএস বা আইএস।
অর্থনৈতিক সংকট : জালালাবাদ এবং কাবুলে হামলার কথা উল্লেখ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া বা যুদ্ধে মারা যাওয়া আত্মীয়দের বিদায় জানানোর সময় একজন শিখ বলেন, ‘এখানে কেউ নেই, আমি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ছাড়া কিভাবে বাঁচব’?
তিনি বলেন, এখানে টাকা ছাড়া কিছুই করার নেই, কারণ চাকরি বা ব্যবসার সম্ভাবনা নেই। শিখ স¤প্রদায়ের কিছু সদস্য বাঘ-ই-বালা মন্দিরের কাছে খাবারের মালিক, যদিও তারা বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কম ব্যবসা করছে বলে মনে হয়।
কাবুলের রাস্তায় দারিদ্র্য দেখা যায়, যেখানে মানুষ রুটি ভিক্ষা করে। তবে, এখানে উচ্চমানের শপিং মল, রেস্তোরাঁ এবং অ্যাপার্টমেন্টসহ উঁচু ভবন রয়েছে, যা ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান প্রদর্শন করে। কারণ সরকারের সম্পদ দেশের বাইরে রাখা হয়েছে, তালেবানদের নগদ অর্থের অভাব রয়েছে এবং জনগণের আগত প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে।
দেশের ভবিষ্যত শাসন কাঠামোকে ঘিরে স্পষ্টতার অভাবের কারণে আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সম্পদ অ্যাক্সেস করতে বাধা দিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৪ কোটি ডলার নতুন আর্থিক মজুদ রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন যে, আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার সম্পদ তালেবানদের নাগালের বাইরে থাকবে। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সী, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।