Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈষম্যহীন শরীয়া অনুযায়ী হবে তালেবান সরকার

নেতৃত্বে সাবেক মার্কিন শত্রু ও পরে মিত্র বারাদার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

তালেবানের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর মিশন গুটিয়ে শেষ মার্কিন সৈন্যটি চলে যাওয়ার পর এখন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আর মোল্লা ওমরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বেই হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার। তালেবানের আমির বা শীর্ষনেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তাদের মরহুম নেতা মোল্লা ওমরের মতোই সবসময় আড়ালে থাকায় বারাদারই দলটির প্রকাশ্য মুখ।

কট্টর এ ইসলামী দলটির অপেক্ষাকৃত নমনীয় নেতা হিসেবেই বারাদারকে দেখে পশ্চিমারা। সংবাদ মাধ্যম দ্য পোস্ট সাবেক এ মার্কিন শত্রু ও পরে বন্দি এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান মধ্যে মধ্যস্থতাকারী মিত্র বারাদার সম্পর্কে বলেছে যে, সমঝোতার ভাষা রপ্ত করেছেন বারাদার। এরফলে, তালেবানরা এমন একটি ইসলামী ব্যবস্থা চাইছে যাতে আফগানিস্তানের সমস্ত শ্রেণির মানুষ বৈষম্য ছাড়াই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ভ্রাতৃত্বের পরিবেশে একে অপরের সাথে সমবেতভাবে বসবাস করতে পারে।

কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বারাদারের ভ‚মিকা প্রচলিত ধারার হবে না। তালেবান নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, তারা শরিয়া আইন অনুযায়ী শাসন করার পরিকল্পনা করেছেন। খুুব সম্ভবত তালেবানরা ইরানের মতোই একটি সরকার গঠন করবে, যেখানে রাজনীতি এবং প্রশাসন সাধারণত একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার তত্ত্বাবধানে থাকে, যিনি সর্বোচ্চ স্তরে সরকারী নীতি অনুমোদন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আফগানিস্তানের নতুন সরকার ব্যবস্থায় শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হিসেবে একই ধরনের ভ‚মিকায় আসীন হতে পারেন তালেবান প্রধান হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। কট্টর ধর্মীয় দল তালেবানে এবং পশ্চিমাদের কাছে বারদারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ার কারণ ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর তার তৎপরতা। তালেবানের পতনের পর দলটির যে ক্ষুদ্রাংশ পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে চিঠি দিয়েছিল, সেই দলে বারাদারও ছিলেন। বলা হয়, মোল্লা ওমরের ‘ব্রাদার’ হিসেবেই দলে সবাই মনে করত তাকে, তার অপভ্রংশ হিসেবে বারাদার যুক্ত হয় মোল্লা আবদুল গনির নামের পেছনে।

শীর্ষ অন্য তালেবান নেতাদের মতো বারাদারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও খুব কমই জানা যায়। দক্ষিণ আফগানিস্তানের উরুজগান প্রদেশে পশতুন গোত্রে ১৯৬৮ সালে বারদারের জন্ম বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। আবার তার জন্ম কান্দাহারে বলেও দাবি করেছেন অনেকে। অন্য অনেক আফগানের মতো গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি।

জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল, তখন মোল্লা ওমর ১৯৯৪ সালে তালেবান গঠন করেন। কান্দাহারে যে মাদ্রাসা থেকে তালেবানের উৎপত্তি, তা প্রতিষ্ঠার সময় মোল্লা ওমরের সঙ্গে বারদারও ছিলেন। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার খবরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।

১৯৯৬ যুদ্ধ চালিয়ে সালে তালেবানকে ক্ষমতায় নিতে মোল্লা ওমরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন বারদার। সেই সরকারে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে উপমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানের মুখে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা হারানোর পর দোহায় তালেবান যে রাজনৈতিক দপ্তর চালাচ্ছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন বারাদার।

২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের নেতারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছিলেন। তখন বারাদারের পেছনে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে করাচিতে তার অবস্থানের তথ্য তারা পেয়ে পাকিস্তানকে জানায়। ২০১০ সালের ফেব্রæয়ারিতে করাচিতে যে অভিযানে বারাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাতে পাকিস্তানির বাহিনীর সঙ্গে মার্কিন বাহিনীও ছিল।

এরপর টানা ৮ বছর তিনি পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের যখন তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর প্রয়োজন পড়ে, তখন বারাদারকেও প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাদের। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, মার্কিন চাপেই ২০১৮ সালে বারাদারকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। মুক্ত বারাদার সোজা চলে যান দোহায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ৯ সদস্যের তালেবান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ আলোচনায় নেতৃত্বে ছিলেন জালমে খালিলজাদ। ২ বছরের আলোচনা শেষে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে সই করেন মোল্লা বারদার।

এরপর, প্রথম কোনো তালেবান নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে সরাসরি কথা বলেন তিনি। কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির আওতায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রস্থানকালীন সময়েই ২০ বছর পর ঝড়ের বেগে দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তবে, এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনায় বারদারই তালেবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সূত্র : ভাইস।



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 3
    People of Bangladesh do have clear idea about SHARIYA. They confuse between SUNNAH and SHARIYA, thinking that they are the same. It is absolutely not the same. SUNNAH is the teachings of Prophet Muhammad (SA) consisting of his words, actions, consents and what he did not prohibit. On the contrary SHARIYA is the collection of Laws Promulgated by the despotic Muslim rulers of Umayyad, Abbasides and Otoman groups. These people were not Califs they were autocratic rollers of hereditary origin and they promulgated rules for their own benefit. They did never care for Islam. Please brothers be careful when you utter the word SHARIYA, an anti-Islamic laws.
    Total Reply(0) Reply
  • Uttam Sarker ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 2
    মুসলিম দেশে মুসলিম রিতিতে মুসলমান চলবে মুসলিম নীতিতে। আমি আফগানিস্তানের কথা বলছি। বিশ্ববাসীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, যেহেতু এই দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৯৳•৭৫% ভাগ মানুষই মুসলিম, অতএব অন্ততপক্ষে একটি দেশকে সম্পুর্ণ রূপে কুরানের আইন অনুযায়ী চলতে সবাই সহযোগিতা করুন। আমি বিশ্ববাসীর কাছে পুণরায় বিনীতভাবে অনুরোধ করছি! এখানে কোনো ইহুদী, খৃষ্টান ,বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু ,কারো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপক অগ্ৰহন যোগ্য! একেবারে গ্ৰহনযোগ্য নয়!! দয়াকরে ,সমগ্ৰ বিশ্ববাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Shahab Uddin ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৪৯ এএম says : 1
    নির্যাতন আর নিপিরনের একমাত্র হাতিয়ার হল গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে আছে মুখে মধু আর অন্তরে বিষ পোষন করে ফাঁকা বুলির ভাণ্ডার। দরিদ্রকে আরো দরিদ্র করা,নির্যাতিতাকে আরো নির্যাতন করা, বাক স্বাধীন বলে নাস্তিকবাদী কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠা করা,আর সুশীল নারী সমাজকে পর্দা ছেড়ে বেহায়াপনা বেশে বেরিয়ে পরার সকল তন্ত্র।
    Total Reply(0) Reply
  • Sojib Ahmed ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৪৯ এএম says : 0
    গণতন্ত্র মানে নৈশভোট, নারীর স্বাধীনতা মানে ধর্ষণের সেঞ্চুরি.. এমন নীতি চলবেনা.....।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী ছাইফুজ্জামান ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ এএম says : 1
    খেলাফত গণতন্ত্র নামের ধোকা থেকে উত্তম। খেলাফত মানুষের পুরোপুরি অধিকার দেয়। আর গণতন্ত্রের মুখোশধারীরা মিছিলে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Ulad Hasan ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ এএম says : 0
    গণতন্ত্র রাজতন্ত্র মানুষের ঘরে সংবিধান কোন কিছুর জায়গা না দেয়াই ভালো একমাত্র সরিয়া আইন চলবে মানুষের ঘরা কোন আইন জায়গা না দেয়াই ভালো সংবিধানে
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Said ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ এএম says : 0
    · খিলাফাহ আর গনতন্ত্রের পার্থক্য বিশ্বের গোটা জাতি দেখবে অতপর সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা জনগনের জানমালের নিরাপত্বা দিতে সক্ষম, খিলাফাহ নাকি গনতন্ত্র?
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Mahmud ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:০০ এএম says : 0
    یُرِیۡدُوۡنَ لِیُطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰہِ بِاَفۡوَاہِہِمۡ وَ اللّٰہُ مُتِمُّ نُوۡرِہٖ وَ لَوۡ کَرِہَ الۡکٰفِرُوۡنَ ﴿۸﴾ ইউরীদূনা লিইউতফিউ নূরাল্লা-হি বিআফওয়া-হিহিম ওয়াল্লা-হুমুতিম্মুনূরিহী ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন। তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফিরেরা তা অপছন্দ করে। They intend to put out the Light of Allah (i.e. the religion of Islam, this Quran, and Prophet Muhammad SAW) with their mouths. But Allah will complete His Light even though the disbelievers hate (it).
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ইব্রাহীম মোঃ ইব্রাহীম খলিল ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:১৮ এএম says : 0
    পশ্চিমা বা অন্য দেশ, গুষ্টি ও জাতির সমথর্ন নিয়ে সরকার গঠন করলে,সে সরকার ইসলামী সরকার হবে না। ইসলামী সরকার গঠন করতে হলে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক হতে হবে, এতে অন্য কোন দেশ বা জাতি গোষ্ঠীর সমথর্ন থাক বা না থাক তা দেখার বিষয় না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ