মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তালেবানের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর মিশন গুটিয়ে শেষ মার্কিন সৈন্যটি চলে যাওয়ার পর এখন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আর মোল্লা ওমরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বেই হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার। তালেবানের আমির বা শীর্ষনেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তাদের মরহুম নেতা মোল্লা ওমরের মতোই সবসময় আড়ালে থাকায় বারাদারই দলটির প্রকাশ্য মুখ।
কট্টর এ ইসলামী দলটির অপেক্ষাকৃত নমনীয় নেতা হিসেবেই বারাদারকে দেখে পশ্চিমারা। সংবাদ মাধ্যম দ্য পোস্ট সাবেক এ মার্কিন শত্রু ও পরে বন্দি এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান মধ্যে মধ্যস্থতাকারী মিত্র বারাদার সম্পর্কে বলেছে যে, সমঝোতার ভাষা রপ্ত করেছেন বারাদার। এরফলে, তালেবানরা এমন একটি ইসলামী ব্যবস্থা চাইছে যাতে আফগানিস্তানের সমস্ত শ্রেণির মানুষ বৈষম্য ছাড়াই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ভ্রাতৃত্বের পরিবেশে একে অপরের সাথে সমবেতভাবে বসবাস করতে পারে।
কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বারাদারের ভ‚মিকা প্রচলিত ধারার হবে না। তালেবান নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, তারা শরিয়া আইন অনুযায়ী শাসন করার পরিকল্পনা করেছেন। খুুব সম্ভবত তালেবানরা ইরানের মতোই একটি সরকার গঠন করবে, যেখানে রাজনীতি এবং প্রশাসন সাধারণত একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার তত্ত্বাবধানে থাকে, যিনি সর্বোচ্চ স্তরে সরকারী নীতি অনুমোদন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আফগানিস্তানের নতুন সরকার ব্যবস্থায় শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হিসেবে একই ধরনের ভ‚মিকায় আসীন হতে পারেন তালেবান প্রধান হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। কট্টর ধর্মীয় দল তালেবানে এবং পশ্চিমাদের কাছে বারদারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ার কারণ ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর তার তৎপরতা। তালেবানের পতনের পর দলটির যে ক্ষুদ্রাংশ পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে চিঠি দিয়েছিল, সেই দলে বারাদারও ছিলেন। বলা হয়, মোল্লা ওমরের ‘ব্রাদার’ হিসেবেই দলে সবাই মনে করত তাকে, তার অপভ্রংশ হিসেবে বারাদার যুক্ত হয় মোল্লা আবদুল গনির নামের পেছনে।
শীর্ষ অন্য তালেবান নেতাদের মতো বারাদারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও খুব কমই জানা যায়। দক্ষিণ আফগানিস্তানের উরুজগান প্রদেশে পশতুন গোত্রে ১৯৬৮ সালে বারদারের জন্ম বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। আবার তার জন্ম কান্দাহারে বলেও দাবি করেছেন অনেকে। অন্য অনেক আফগানের মতো গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি।
জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল, তখন মোল্লা ওমর ১৯৯৪ সালে তালেবান গঠন করেন। কান্দাহারে যে মাদ্রাসা থেকে তালেবানের উৎপত্তি, তা প্রতিষ্ঠার সময় মোল্লা ওমরের সঙ্গে বারদারও ছিলেন। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার খবরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।
১৯৯৬ যুদ্ধ চালিয়ে সালে তালেবানকে ক্ষমতায় নিতে মোল্লা ওমরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন বারদার। সেই সরকারে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে উপমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানের মুখে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা হারানোর পর দোহায় তালেবান যে রাজনৈতিক দপ্তর চালাচ্ছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন বারাদার।
২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের নেতারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছিলেন। তখন বারাদারের পেছনে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে করাচিতে তার অবস্থানের তথ্য তারা পেয়ে পাকিস্তানকে জানায়। ২০১০ সালের ফেব্রæয়ারিতে করাচিতে যে অভিযানে বারাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাতে পাকিস্তানির বাহিনীর সঙ্গে মার্কিন বাহিনীও ছিল।
এরপর টানা ৮ বছর তিনি পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের যখন তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর প্রয়োজন পড়ে, তখন বারাদারকেও প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাদের। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, মার্কিন চাপেই ২০১৮ সালে বারাদারকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। মুক্ত বারাদার সোজা চলে যান দোহায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ৯ সদস্যের তালেবান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ আলোচনায় নেতৃত্বে ছিলেন জালমে খালিলজাদ। ২ বছরের আলোচনা শেষে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে সই করেন মোল্লা বারদার।
এরপর, প্রথম কোনো তালেবান নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে সরাসরি কথা বলেন তিনি। কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির আওতায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রস্থানকালীন সময়েই ২০ বছর পর ঝড়ের বেগে দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তবে, এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনায় বারদারই তালেবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সূত্র : ভাইস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।