বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কথায় বলে ‘যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপশির ঘুম নেই’। সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে এ আপ্তবাক্যের ঠিক উল্টোচিত্র এখনো বিদ্যমান। এখানে পাড়াপশি তথা ভোটারেদের ঘুম ভাঙ্গাতে পারছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে কোন আমেজ নেই তাদের তনে মনে। তারা নির্বাচন নিয়ে, ভাবতে নারাজ। ভোট দিতে আগ্রহহীন।যেভোটের জন্য সংগ্রাম স্বাধীনতা, এক সাগর রক্ত দান, সেই ভোট যেন এখন ভোটারদের নিকট এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। সিলেট-৩ আসনের ভোটারদের মনের অভিব্যক্তিতে এমন ভাবই পরিলক্ষিত হয়েছে। সেকারনে ভোট কেন্দ্র ভোটার আসবে কি এমন প্রশ্নের উত্তর নেই। বরং এ নিয়ে চরম উন্নাসিকতা ভোটারদের মধ্যে। বেশিরভাগই প্রশ্ন তুলছেন, প্রশাসনের ব্যাপারে। প্রশাসন কি নিরপেক্ষ থাকবে, দমন নিপীড়ন কি করবে না। এই প্রশ্নের উত্তর তারা নিজ্ওে জানে। কোন কিছুতেই আশ^স্ত করা যাচ্ছে না। সেকারনে সচেতন ভোটারদের বক্তব্য হলো, ভোটে গেলে ভোট হবে নয়তো লুট। সেই লুট তারাই করবে যারা ভোটের আগে বিজয় নিশ্চিতে মরিয়া। জাপার একাধিক নেতাকর্মী বলেন, সাধারন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা বিরাট ফ্যাক্টর। তারা ভরসা পাচ্ছে না ভোট নিয়ে। তারা বলছে, পাশ লেখা হয়ে গেছে, ভোট দিয়ে কি লাভ। এই মনোভাব পাকাপোক্ত মানুষের মনে। তারা এও বলছেন, নৌকা নেতাকর্মীর্ওা ভোটার কেন্দ্রে আসুক তা চায় না, তারা মনে করছে ভোট না আসলে তারাই একা খেলবে খেলা। সেকারনে জাপার নেতাকর্মীরা সাধারন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রমুখি করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। জাপার একাধিক নেতাকর্মী বলেন, এ আসনে নির্বাচন স্থগিত হয় ২৬ জুলাই। নির্বাচন ছিল ২৮ জুলাই। ২৮ জুলাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন সহ স্থানীয় আ্ওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা মারাতœক চাপে রেখেছিল জাপার নেতাকর্মীদের। এমনকি আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল ভোট কেন্দ্রে যেন কোন এজেন্ট তারা না দেয়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে জাপার নেতাকর্মীরা। এসময় এক সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ ্ও আ’লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়-ভীতির অভিযোগ তুলেন জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত হ্ওয়ায় সেই ঝাপটায় রক্ষা পায় জাপার নেতাকর্মীরা। তবে সাধারন ভোটার তাদের মনে মধ্যে বিদ্যমান ধারনা ঠিক দেখতে পেয়েছে জাপার নেতাকর্মীদের অবস্থাদৃষ্টে। সময় অনেক বদলেছে পরবর্তীতে ঘোষিত এ আসনের উপ-নির্বাচন কাল (৪সেপ্টেম্বর)। কিন্তু ধরপাকড় বা প্রশাসনিক চাপ নেই জাপা নেতাকর্মীর উপর। আ’লীগের নেতাকর্মীরাও চুপ। বলতে গেলে অনেকটা স্বাধীন ভাবে নির্বাচন করছে জাপা নেতাকর্মীরা। প্রশাসনের হাবভাবে খুশি জাপার নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে আস্থা জন্মেছে ভোটাধিকার প্রয়োগে কেবল আ’লীগকেই মোকাবেলা করতে হবে তাদের। প্রশাসন তাদের উপর ক্ষেপবে না। কিন্তু সেই পরিবেশে এখনো মন ভরছে না সাধারন ভোটারদের। তবে মন ভরবে নির্বাচন দিনের পরিবেশ পরিস্থিতিতে, এমন কথা বলেছেন একাধিক ভোটার। তারা বলছেন, ভোটের দিন বুঝা যাবে, ভোটে না লুটে হয় জয় পরাজয়। কারন বিশ^াস করা কঠিন, কখন উল্টে যাবে হিসেব নিকেষ। সেই হিসেবে যেই সেই। ভোটের কোন দাম থাকবে না ! সাধারন ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে শংকা থাকলেও ভোটের দিন প্রশাসনের সাজানো অবস্থানে সচেতন মানুষের মধ্যে বিরাট আস্থা দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, প্রশাসনের এমন অবস্থান যদি নিরপেক্ষ ্ও সুষ্ট ভোট গ্রহনে কার্যকর থাকে, তা হলে ভোট নিয়ে শংকা থাকবে না আগামীতে। এদিকে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ৫ সেপ্টেম্বর রোববার পর্যন্ত নির্বচনী মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে আসনের ২১টি ইউনিয়নের জন্য ২১জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রাক্ষার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশ আর অঙ্গিভূত আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবেন।
নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে আগামী ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবিলায়। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখা হবে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সংঘটিত অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচার কাজ সম্পন্ন করতে দায়িত্ব পালন করবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সিলেট-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩৯০ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৮৩ জন। ভোট কেন্দ্র ১৪৯টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৮৭৪টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।