Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তাকওয়া অর্জন করতে হবে -জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:২৯ পিএম

মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে। অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি.সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তাকওয়ার ভূমিকা অপরিহার্য। আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।” আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মসজিদের খতিব এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলিফারূপে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ আমি যমীনে খলিফা সৃষ্টি করব। সূরা বাকারা : ৩০। এ কথা বলাবাহুল্য যে, যিনি খলীফা হবেন তিনি অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন,‘ আমি মানুষ ও জ্বীনকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ মানুষ সৃষ্টি করেই আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। দায়িত্বের যখন জবাবদিহীতা থাকে তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা সুচারুরূপে ও সঠিকভাবে আদায় করার প্রয়াস চালায়।
জবাবদিহি হ্রাস পেলে মানবজীবনে অধঃপতন নেমে আসে। মানবজীবনে দুটি জবাবদিহিতা, মানুষের কাছে জবাবদিহি এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহি। মানুষের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি কমে গেলে বা বিলুপ্ত হলে মানুষ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি হারিয়ে গেলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে যমীন ও আসমানের কোনো কিছুই গোপন থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ৫। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোন ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন দায়িত্ব পালনে সচেতন হব। তেমনি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে হতে হবে প্রত্যয়ী । সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট হব। এছাড়া পরষ্পর হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, মিথ্যা, ধোকা, প্রতারণা, এবং গুজব ছড়ানোর মত দায়িত্বহীন আচরণ হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকব । একজন দায়িত্বশীল মানুষকে অবশ্যই সচেতনার পরিচয় দিতে হয়। কোন কথা-কাজ না জেনে, না বুঝে শুধু লোকমুখে শুনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা কখনও কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এমনকি কোন সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না।
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনাররি খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল সুন্দর চরিত্র। আর সুন্দর চরিত্র অর্জনের বিষয়টি একান্তভাবে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তা হল তাকওয়া। মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে। খতিব বলেন,তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা বা সতর্ক থাকা। আত্মশুদ্ধি, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা, সংযত হওয়া, ভয় করা প্রভৃতি। তবে সাধারণভাবে তাকওয়া ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহভীতি’ অর্থে। ইমাম গাযালি বলেন, “আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে যাবতীয় অসৎকর্ম বর্জন করে সৎকর্ম সম্পাদনই হলো তাকওয়া।” সুফিগণ বলেন, “পরকালীন জীবনে ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে এমন সবরকমের বস্তু ও বিষয় থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া।” মোটকথা, তাকওয়া হলো প্রথমত, শিরক থেকে বিরত থেকে স্থায়ী শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, গুনাহে লিপ্ত করে বা গুনাহের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং চূড়ান্তভাবে যে সকল বস্তু ও বিষয় মানুষকে আল্লাহ্র ব্যাপারে গাফিল করে দেয়-তা বর্জন করা । তাকওয়া বা খোদভীতির প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা দরকার ঠিক তেমন ভয় করতে থাকো এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’ (আলে ইমরান : ১০২)
আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৭৬) তাকওয়াবিহীন ইবাদত মূল্যহীন ও কবুলের অযোগ্য। আল্লাহ বলেন “আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।” ( সূরা হাজ্জ ২২: ৩৭) কাজেই ইবাদতের মূল বিষয় হলো তাকওয়া। তাকওয়া ব্যক্তিকে তার সকল দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে। তাকওয়া মানুষকে সুশীল, শোভন ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। যা তাকে সবার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে। তাকওয়াবান মানুষ অন্যায়, অবিচার, পাপাচারমুক্ত জীবনযাপন করে বলে তাদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাকওয়া ব্যক্তিকে কর্তব্যে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে বলে সমাজের উন্নতি সাধিত হয়। তাকওয়া ব্যক্তিকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন- “তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটি তাকওয়ার অতি নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫:৮) । তাকওয়া অবলম্বনকারীর পুরস্কার ও ফজিলত ঘোষণা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।’ (আনফাল : ২৯) তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন “যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এব প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে তার স্থান হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯: ৪০-৪১) সুতরাং তাকওয়া জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা দেয়।
খতিব বলেন, অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেও তাকওয়ার ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ একজন মুত্তকী ব্যক্তি সর্বাবস্থাই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিয়োজিত থাকে। যে কোনো কাজ করার পূর্বে সে চিন্তা করে মহান আল্লাহ এ কাজ পছন্দ করেন কিনা। ব্যক্তির এই চিন্তা ব্যক্তিকে অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত রেখে নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে, যা সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত কার্যকর। মহান আল্লাহ আমাদের তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররামুল হারামের আজ শেষ জুমা। সফর মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। আরবি ‘সফর’ অর্থ শূন্য, খালি, রিক্ত। ক্রিয়াভেদে কেউ কেউ অর্থ করেছেন ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ ইত্যাদি। সে সময় আরবে সফর মাসে প্রচন্ড খরা হতো। ফলে মঙ্গা, খাদ্যাভাব দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাতে রক্তশূন্যতা ও ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হতো। এজন্য অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তারা এই মাসকে ‘আস সাফারুল মুসাফফার’ অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস বলতো। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করে এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকতো। অথচ ইসলামের বিধান হচ্ছে, সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এটাই ঈমান। এর উপর দৃঢ. বিশ্বাস এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। কারণ শিরকযুক্ত ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। শিরক ফলাফল বা পরিণতিতে কুফরের সমান। আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে শরিক করে। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে, সে যেন আল্লাহর প্রতি মারাত্মক অপবাদ আরোপ করলো।’ (সুরা-নিসা, আয়াত: ৪৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র শিরককে মহা জুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। খতিব আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু সু-লক্ষণ ও কু-লক্ষণ বের করে তার উপর মানুষ আমল করে যা ক্ষেত্রভেদে শিরক বা কুফরের পর্যায়ে পড়ে। যেমন, হাতের তালু চুলকালে অর্থকড়ি আসবে মনে করা, যাত্রা পথে পিছন থেকে কেউ ডাকলে যাত্রা অশুভ হবে মনে করা, পেঁচা ডাকলে ঘরবাড়ী বিরান হয়ে যাবে কিংবা আপনজন মারা যাবে মনে করা, জিহ্বায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিচ্ছে মনে করা, দোকান খুলে প্রথমেই বাঁকি দিলে সারাদিন বাঁকি বা ফাঁকি যাবে মনে করা, কোন লোকের আলোচনা চলার সময় তার আগমন হলে এটাকে তার দীর্ঘজীবী হওয়ার লক্ষণ মনে করা, ঝাড়–র আঘাত লাগলে শরীর শুকিয়ে যাবে মনে করা, কোন প্রাণী বা প্রাণীর ডাককে অশুভ লক্ষণ মনে করা, চোখ লাফালে বিপদ আসবে মনে করা ইত্যাদি। শিরকযুক্ত এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। এছাড়া গাইরুল্লাহর নামে মান্নত করা, মাজারে সেজদা দেয়া, পীরের কাছে সস্তান চাওয়াও মারাত্মক শিরক ও কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা যেন এসব কাজে থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন, আমীন।

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তাকওয়া অর্জন করতে হবে -জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানমানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে। অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি.সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তাকওয়ার ভূমিকা অপরিহার্য। আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।” আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মসজিদের খতিব এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলিফারূপে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ আমি যমীনে খলিফা সৃষ্টি করব। সূরা বাকারা : ৩০। এ কথা বলাবাহুল্য যে, যিনি খলীফা হবেন তিনি অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন,‘ আমি মানুষ ও জ্বীনকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ মানুষ সৃষ্টি করেই আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। দায়িত্বের যখন জবাবদিহীতা থাকে তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা সুচারুরূপে ও সঠিকভাবে আদায় করার প্রয়াস চালায়। জবাবদিহি  হ্রাস পেলে মানবজীবনে অধঃপতন  নেমে আসে। মানবজীবনে দুটি জবাবদিহিতা,  মানুষের কাছে জবাবদিহি এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহি। মানুষের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি কমে গেলে বা বিলুপ্ত হলে মানুষ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি হারিয়ে  গেলে। পবিত্র   কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে যমীন ও আসমানের  কোনো কিছুই  গোপন থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ৫। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল,  সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।  কোন ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল;  সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং  তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন দায়িত্ব পালনে সচেতন হব। তেমনি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে হতে হবে প্রত্যয়ী । সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট হব। এছাড়া পরষ্পর হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, মিথ্যা, ধোকা, প্রতারণা, এবং গুজব ছড়ানোর  মত দায়িত্বহীন আচরণ হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে  বিরত  থাকব । একজন দায়িত্বশীল মানুষকে অবশ্যই সচেতনার পরিচয় দিতে হয়। কোন কথা-কাজ না জেনে, না বুঝে শুধু লোকমুখে শুনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা কখনও কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এমনকি কোন সচেতন নাগরিকের  কাজ হতে পারে না। ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনাররি খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল সুন্দর চরিত্র। আর সুন্দর চরিত্র অর্জনের বিষয়টি একান্তভাবে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তা হল তাকওয়া। মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে।  খতিব বলেন,তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা বা সতর্ক থাকা। আত্মশুদ্ধি, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা, সংযত হওয়া, ভয় করা প্রভৃতি। তবে সাধারণভাবে তাকওয়া ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহভীতি’ অর্থে। ইমাম গাযালি বলেন, “আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে যাবতীয় অসৎকর্ম বর্জন করে সৎকর্ম সম্পাদনই হলো তাকওয়া।” সুফিগণ বলেন, “পরকালীন জীবনে ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে এমন সবরকমের বস্তু ও বিষয় থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া।” মোটকথা, তাকওয়া হলো প্রথমত, শিরক থেকে বিরত থেকে স্থায়ী শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, গুনাহে লিপ্ত করে বা গুনাহের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং চূড়ান্তভাবে যে সকল বস্তু ও বিষয় মানুষকে আল্লাহ্র ব্যাপারে গাফিল করে দেয়-তা বর্জন করা । তাকওয়া বা খোদভীতির প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা দরকার ঠিক তেমন ভয় করতে থাকো এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’ (আলে ইমরান : ১০২) আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৭৬) তাকওয়াবিহীন ইবাদত মূল্যহীন ও কবুলের অযোগ্য। আল্লাহ বলেন “আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।” ( সূরা হাজ্জ ২২: ৩৭) কাজেই ইবাদতের মূল বিষয় হলো তাকওয়া। তাকওয়া ব্যক্তিকে তার সকল দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে। তাকওয়া মানুষকে সুশীল, শোভন ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। যা তাকে সবার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে। তাকওয়াবান মানুষ অন্যায়, অবিচার, পাপাচারমুক্ত জীবনযাপন করে বলে তাদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাকওয়া ব্যক্তিকে কর্তব্যে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে বলে সমাজের উন্নতি সাধিত হয়। তাকওয়া ব্যক্তিকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ  করে। আল্লাহ বলেন- “তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটি তাকওয়ার অতি নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫:৮) । তাকওয়া অবলম্বনকারীর পুরস্কার ও ফজিলত ঘোষণা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।’ (আনফাল : ২৯) তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন “যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এব প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে তার স্থান হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯: ৪০-৪১) সুতরাং তাকওয়া জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা দেয়।খতিব বলেন, অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেও তাকওয়ার ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ একজন মুত্তকী ব্যক্তি সর্বাবস্থাই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিয়োজিত থাকে। যে কোনো কাজ করার পূর্বে সে চিন্তা করে মহান আল্লাহ এ কাজ পছন্দ করেন কিনা। ব্যক্তির এই চিন্তা ব্যক্তিকে অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত রেখে নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে, যা সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত কার্যকর। মহান আল্লাহ আমাদের তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররামুল হারামের আজ শেষ জুমা। সফর মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। আরবি ‘সফর’ অর্থ শূন্য, খালি, রিক্ত। ক্রিয়াভেদে কেউ কেউ অর্থ করেছেন ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ ইত্যাদি। সে সময় আরবে সফর মাসে প্রচন্ড খরা হতো। ফলে মঙ্গা, খাদ্যাভাব দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাতে রক্তশূন্যতা ও ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হতো। এজন্য অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তারা এই মাসকে ‘আস সাফারুল মুসাফফার’ অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস বলতো। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করে এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকতো। অথচ ইসলামের বিধান হচ্ছে, সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এটাই ঈমান। এর উপর দৃঢ. বিশ্বাস এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। কারণ শিরকযুক্ত ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। শিরক ফলাফল বা পরিণতিতে কুফরের সমান। আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে শরিক করে। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে, সে যেন আল্লাহর প্রতি মারাত্মক অপবাদ আরোপ করলো।’ (সুরা-নিসা, আয়াত: ৪৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র শিরককে মহা জুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। খতিব আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু সু-লক্ষণ ও কু-লক্ষণ বের করে তার উপর মানুষ আমল করে যা ক্ষেত্রভেদে শিরক বা কুফরের পর্যায়ে পড়ে। যেমন, হাতের তালু চুলকালে অর্থকড়ি আসবে মনে করা, যাত্রা পথে পিছন থেকে কেউ ডাকলে যাত্রা অশুভ হবে মনে করা, পেঁচা ডাকলে ঘরবাড়ী বিরান হয়ে যাবে কিংবা আপনজন মারা যাবে মনে করা, জিহ্বায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিচ্ছে মনে করা, দোকান খুলে প্রথমেই বাঁকি দিলে সারাদিন বাঁকি বা ফাঁকি যাবে মনে করা, কোন লোকের আলোচনা চলার সময় তার আগমন হলে এটাকে তার দীর্ঘজীবী হওয়ার লক্ষণ মনে করা, ঝাড়–র আঘাত লাগলে শরীর শুকিয়ে যাবে মনে করা, কোন প্রাণী বা প্রাণীর ডাককে অশুভ লক্ষণ মনে করা, চোখ লাফালে বিপদ আসবে মনে করা ইত্যাদি। শিরকযুক্ত এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। এছাড়া গাইরুল্লাহর নামে মান্নত করা, মাজারে সেজদা দেয়া, পীরের কাছে সস্তান চাওয়াও মারাত্মক শিরক ও কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা যেন এসব কাজে থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন, আমীন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ