Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাঙ্গাইলে বন্যায় ভাসছে মানুষ, বাড়ছে দুর্ভোগ

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৩৪ পিএম

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় (বুধবার) যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অনান্য শাখা নদীগুলোর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বেড়েছে অভ্যন্তরীণ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার অর্ধশতাধক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। কালিহাতী উপজেলার আলীপুর ও ভৈরব বাড়ি এবং ভূঞাপুর উপজেলার ভালকুটিয়া ও স্থলকাশি এলাকায় আরো ৩০টি ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বিশেষ করে আমন ধানের ক্ষতি হবার সম্ভবনা রয়েছে বেশি। এতে কৃষক ব্যাপক লোকসানে পড়বে। ইতিমধ্যেই অনেক এলাকায় পানির নিচে চলে গেছে আমন ধান।

সরেজমিনে গিয়ে জেলার ভুঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া-চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায ওই দুইটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বসতভিটা ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। মসজিদের একটি অংশও ভেঙে গেছে। স্থানীয় লোকজন ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের ভালকুটিয়া-গোবিন্দাসী সড়কের কষ্টাপাড়া এলাকায় বন্যার পানির তীব্রস্রোতে পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। এতে করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ ও বিক্রি করছে। এতে বন্যার সময় সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সপ্তাহখানেক ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে অর্ধশত পরিবার। ভেঙেছে মসজিদও।

ভালকুটিয়া গ্রামের আব্বাস প্রামানিক বলেন, বন্যার পানিতে সকালে পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে গ্রামের একমাত্র মসজিদটিও ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে অর্ধশতাধিক নতুন নতুন গ্রাম বন্যার কবলে পড়ছে। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়কের ঢালে আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটায় পানি উঠায় বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগীতা পাননি বলে অভিযোগ বানভাসিদের।

এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে কোথাও কোথাও অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ চলছে। বন্যা শেষে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির নিরুপন করা যাবে।

জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি বলেন, বন্যাকবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে। বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ