Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন-আফগান প্রভাবশালীরা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে

আফগানিস্তান পতনের দায় সাধারণ জনগণের নয়

দ্য গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তালেবানদের বিজয়ের জন্য আফগান জনগণকে দায়ী করে বলেছেন, ‘আমরা তাদের প্রতিটি সুযোগ দিয়েছি। আমরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করার স্পৃহা জাগাতে পারিনি।’ কিন্তু আফগান দেশের পতনের জন্য নাগরিকদের দোষারোপ করা ভুল এবং অনৈতিক। বরং তালেবানের আফগানিস্তান বিজয় দেশটির প্রভাবশালীদের সম্মিলিত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফল; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র সামরিক কর্মী এবং আফগান রাজনীতিবিদদের।

আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ১৬ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ এনেছেন তার একজন রাষ্ট্রদূত। আফগান বাহিনী ও নাগরিকরা তালেবানের মতো আরেকটি সরকারের জন্য যুদ্ধ করতে রাজি ছিল না, যারা তাদের ঠকিয়ে ও শোষণ করে লাগাতারভাবে চুরি, চাঁদাবাজি এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং দেশটিকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। ফলে, তালেবানরা যখন দেশটির রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে, তখন তারা প্রায় কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি।

আফগানিস্তানে দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং নিজস্ব নাগরিকদের মধ্যে একটি খোলা বই। ২০২০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আফগানিস্তানকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় স্থান দিয়েছে। মার্কিন সরকারী তহবিল যুদ্ধবাজ এবং অপরাধ সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যাওয়ার ঘটনাগুলি নৈমত্তিক খবরে পরিণত হয়েছিল। জুলাইতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দাবি করেছিলেন যে, আফগান সেনাবাহিনীর ৩ লাখ সৈন্য রয়েছে। কিন্তু পেন্টাগন জানত যে, সংখ্যাটি বহুগুণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। আফগান সামরিক কমান্ডাররা এভাবেই অন্তর্ভূক্তি দেখিয়ে সৈন্যদের জন্য বরাদ্দ করা অতিরিক্ত অর্থ নিজেদের পকেটে ভরতেন। জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়েস্ট পয়েন্ট এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আফগান সরকারের প্রকৃত সৈন্য ছিল মাত্র ৯৬ হাজার। এবং কাবুল পতনের সময় এই সৈন্যরা বেতন তো দূরের কথা, এমনকি খাবারও পায়নি বলে জানা গেছে।

শুধু আফগান সামরিক বাহিনীর অস্তিত্ব শুধুই কাগুজে ছিল তা নয়, মার্কিন সামরিক ঠিকাদারদের মাধ্যমে পেন্টাগন অসাবধানতাবশত তালেবানদেরও অর্থায়ন করেছিল। দ্য নেশনের ২০০৯ সালের একটি প্রতিবেদনে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল যে, আফগানিস্তানে পেন্টাগনের লজিস্টিক্স চুক্তির ১০ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ তালেবানদের কাছে গিয়েছে।

তালেবান অর্থায়নের আরেকটি উৎস ছিল পেন্টাগন এবং আফগান প্রভাশালীদের আফগানিস্তানের ১ ট্রিলিয়ন ডলান মূল্যের খনিজ সম্পদ শোষণ। এপ্রিলে অর্গানাইজ্ড ক্রাইম এন্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, তালিবানরা ক্ষমতা দখলের আগে আফগান আইন প্রতিষ্ঠানগুলিকে ছোট অনিবন্ধিত খনিগুলি থেকে খনিজ কিনতে নিষেধ করেছিল। এর একটি কারণ হল, ওই খনিগুলির অনেকগুলোই তালেবান, অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা স্থানীয় যুদ্ধবাজদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল।

সেই খনি থেকে কেনা মানে শত্রæকে অর্থায়ন করা। কিন্তু দ্য গার্ডিয়ানের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, একটি কোম্পানি এই নিয়মের ব্যতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে, দৃশ্যত সাবেক প্রেসিডেন্ট গনির কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে। ৬ টি আফগান প্রদেশের লাইসেন্সবিহীন খনিগুলি থেকে স্টেইনলেস স্টিলের একটি মূল্যবান উপাদান ক্রোমাইট আহরণের জন্য মার্কিন সামরিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসওএস ইন্টারন্যাশনাল (এসওএসআই)-এর আফগান সাবসিডিয়ারির জন্য তার অফিস অতিরিক্ত আইনী অধিকারে স্বাক্ষর করে।

এসওএসআই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং গোয়েন্দা পরিষেবার সাথে গভীরভাবে যুক্ত। কোম্পানিটি সিআইএর সাবেক পরিচালক এবং আফগানিস্তানে শীর্ষ আমেরিকান কমান্ডারদের অফিস থেকে ব্যাপকভাবে কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিল। কিন্তু এসওএসআই’র আরও গুরুতপূর্ণ একটি সংযোগ ছিল। তিনি হলেন, আশরাফ গনির ভাই হাশত গনি। এসওএসআই’র ২০ শতাংশের মালিক ছিলেন। এই চুক্তিটি তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের পতনের বিস্তৃত কারণগুলি প্রতিফলিত করে। কিন্তু এই চুক্তিতে শুধু গনি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরই নয়, প্রভাবশালী আমেরিকান ব্যাক্তিবর্গ এবং শক্তিশালী মার্কিন কোম্পানিগুলিও জড়িত করে।

তাই আফগানিস্তানের পতনের ব্যর্থতা দায়ভার সাধারণ আফগান নাগরিকদের উপর নেই। আফগানিস্তানের পতন ঘটেছিল কারণ দেশটি থেকে যথাসম্ভব লুটপাট করে নিয়ে আমেরিকান এবং আফগান প্রভাবশালীরা আফগান জনগণকে পিছনে ফেলে পালিয়ে গেছেন।



 

Show all comments
  • Sarwer Morshed ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৩ এএম says : 0
    পরাশক্তি দেশগুলির কবরস্থান আফগান!
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Ahsan ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
    রাতের আধারে পালায়ন করল রাক্ষস বাহিনী,,৷,,৷ আনন্দ উপভোগ করল শান্তিকামী তালেবান
    Total Reply(0) Reply
  • Numan Ahmed ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
    দুই দশকের লুটপাট ও দখলদারিত্ব থেকে আফগান মুক্তি পেলো
    Total Reply(0) Reply
  • Towhid Chowdhury ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৩ এএম says : 0
    ওদের স্বার্থ আদায় হয়েছে, খনিজ সম্পদ যা লুট করার করেছে, তাই চলে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুল মালেক ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
    গার্ডিয়ান পত্রিকা তালিবান কে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে, শুনতে ভালই লাগে। ইহুদিবাদি দের দারা পরিচালিত সংবাদ মাধ্যমগুলি এভাবেই মুসলিমদের উপর নিজেদের কত্রিত্ত্ব করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Anowar ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৪৫ এএম says : 0
    সুস্থ ও সুন্দর থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম।
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Kudruth E Khoda ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:২৬ এএম says : 0
    তালেবান নিয়ে চিৎকার চেচামেচি না করে নিজ দেশের খবররাখা দরকার। হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, দেশের সীমান্তে লাশ পাহাড় সম হচ্ছে। ছেটার্জি, বেনার্জি, কুমারের পাল ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিয়ে মোদির দেশে পারি দিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubur Rahman ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:২৮ এএম says : 0
    তবুও পশ্চিমা আগ্রাসন থেকে আফগান মাটি মুক্ত হল... বদর দেখি নাই তবে আফগানিস্তানের বিজয় দেখলাম। শুধু আফগান নয় মুক্ত হোক সারা বিশ্ব।
    Total Reply(0) Reply
  • Milu ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:০৮ এএম says : 0
    We want to escape from AMERICA. We have an unbounded hatred for America
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ