পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা-যমুনার পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে হেলে পরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরুপে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে হাতিঘাটার জনমনে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়াও লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ীসহ চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, একে একে সকল সরকারি বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত রাতে আজিমনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীতে চলে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। এখন তারা কি ব্যবস্থা নেন এটাই দেখার বিষয়। জানা যায়, গত চার দিন আগে পদ্মার ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে হেলে পড়েছিল আজিমনগর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দোতলা ভবন। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি চালু করা হয়। কিন্তু গতকাল রাতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বর্তমান নদীর তীরবর্তীতে অবস্থিত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিঘাটা আশ্রয়ন কেন্দ্র, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম, ৫৭নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদরাসা, হাতিঘাটা বাজারসহ পাকা আধাপাকা একাধিক রাস্তা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে নদী ভাঙনের কবলে পরে সুতালড়ী ইউনিয়নের ৩৭নং রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটির একাংশ ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একখোলা বার্তায় ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা গ্রামের যুবক মো. নাসির উদ্দিন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গতকাল রাতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দোতলা ভবনটি। চরাঞ্চলে নদী ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সরকারি ব্যয়ে নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়াও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ আবার ঠিকানাবিহীন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে।
জানা যায়, চরাঞ্চলে আজিমনগরের হাতিঘাটায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠত হয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময় বিদ্যালয়টি এডিবির অর্থায়নে টিনশেডের ১৫টি রুম তৈরির মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে চারতলা ফাউন্ডেশনে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় শিক্ষা অধিদফতর থেকে ওই একতলার ওপরেই আরও তিনতলা ভবনের অনুমোদন দেয়। নতুন অনুমোদিত ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে আচমকাই নদীভাঙন শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর তীর হতে ১৩০ মিটার দূরে রয়েছে।
আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন বিপ্লব জানান, বিদ্যালয়টিতে চরাঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় চারশ’ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর অতি সন্নিকটে। তাই দ্রুত ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না করলে অথবা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনে সরেজমিনে যাই এবং ভাঙনের অবস্থা দেখে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসক বরাবর বিদ্যালয়টি রক্ষায় নদী ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করেছি।
এছাড়া ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিয়নের ৭নং ও ৮নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটায় ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র। ৭নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটা পশ্চিমপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র ১০০টি পরিবার ও ৮নং ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার আশ্রয়ন কেন্দ্রে ৯০টি পরিবারসহ মোট ১৯০টি পরিবার বসবাস করে এই দুই আশ্রয়ন কেন্দ্রে। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বন্যার পরে ২০০০ সালে তেরদোনা থেকে স্থানান্তর করে হাতিঘাটা আনা হয় এই আশ্রয়ন কেন্দ্র দুটি। বর্তমান নদীর তীরবর্তী থেকে আশ্রয়ন কেন্দ্র দুটি ৪০০ গজ দূরে রয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশ্রয়ন কেন্দ্রের ১৯০টি পরিবারের প্রায় ১ হাজার মানুষ।
৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম জানান, আজিমনগরসহ পুরো চরাঞ্চলের মানুষই এখন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। হাসপাতাল তো গেছেই। এরপর স্কুল, আশ্রয়ন কেন্দ্র, হাতিঘাটা বাজার, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম সবই এখন ঝুঁকির মধ্যে। তাই নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বিষয়টি আমাকে জানালে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এছাড়াও গত সপ্তাহে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অধিদফতরের একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্ত ভাঙনরোধে তীব্র স্রোতের কারণে ওখানে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কিছু করার চেষ্টা করলেও থাকবে না। এখন উপায় যে সকল স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে অথবা নিলামে দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।