মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তান দখলে নেওয়া তালেবান তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানানোর চিন্তা করছে সংগঠনটির নেতারা। গোষ্ঠীটির একাধিক নেতা আশ্বাস দিয়েছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা থাকবেন। যদিও নতুন এ সরকারের মেয়াদ কতদিনের হতে পারে, সে সম্পর্ক্তি তাৎক্ষণিক কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে।
জাতিগত বৈচিত্র্যই আফগানিস্তানের রাজনীতি ও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংঘাতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটির ৪২ শতাংশ পশতুন, তারাই মুলত দেশটির সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী। প্রধানত সুন্নি মুসলিম এই সম্প্রদায়ের লোকজন পশতু ভাষাভাষী। অষ্টাদশ শতক থেকে আফগান রাজনীতিতে তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তালেবান নেতাদের বরাতে জানা যায়, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একজন ‘আমির উল মোমিনীন’ থাকবেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় আইএসের ‘পরিকল্পনাকারী’ নিহত : আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হামলায় কমপক্ষে ১৭৫ জন আফগান নাগরিক ও ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার এক দিন পর ড্রোন হামলা চালিয়ে আইএসের ‘পরিকল্পনাকারীকে’ হত্যার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চালে ড্রোন হামলা চালিয়ে ‘পরীকল্পনাকারীকে’ হত্যা করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান বলেন, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের নাঙ্গাহর প্রদেশে ইসলামিক স্টেট সদস্যের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, এই হামলায় একজন নিহত হয়েছে এবং কোনো বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়নি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিকভাবে বলা যায়, আমরা আমাদের লক্ষ্য করা ব্যক্তিকে হত্যা করতে পেরেছি। তবে, কোনো সাধারণ মানুষ হতাহত হয়নি’। আইএস গত বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হামলার দাবি করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর আগে কাবুলে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন এবং তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, আইএস এই বোমা হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তোমাদের খুঁজে বের করবো এবং এর জন্য তোমাদের মূল্য দিতে হবে। আমি আমাদের স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষা করব’।
কিন্তু দুই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেন, লক্ষ্য ছিল আইএসআইএস-কে যোদ্ধা যারা ভবিষ্যতে হামলার পরিকল্পনা করছে। তারা জানায়, অজ্ঞাতনামা যোদ্ধা একটি সহযোগীর সাথে একটি গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময় একটি এমকিউ-৯ রীপার ড্রোনচালিত বিমান থেকে হামলার চালানো হয় যাতে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করা যায় এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানো যায়।
জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা দল সতর্ক করেছে যে, কাবুল বিমানবন্দরে বিধ্বংসী আত্মঘাতী বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনার মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর মার্কিন সেনারা আরেকটি সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মধ্যে রয়েছে। মার্কিন সেনারা সম্ভাব্য আরও আক্রমণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করায়, প্রেসিডেন্টকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এক দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে মারাত্মক দিনের পরের প্রতিবাদ কেবল পরিচিত রিপাবলিকান বিরোধীদের কাছ থেকে নয়, বাইডেনের নিজস্ব দলের বিশিষ্ট সদস্যদের কাছ থেকেও এসেছে।
আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার সম্পূর্ণ করতে এবং তথাকথিত ‘চিরকালের যুদ্ধ’র প্রায় ২০ বছরের অবসান ঘটাতে মঙ্গলবারের সময়সীমা পূরণের জন্য মার্কিন বাহিনী ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে। কিন্তু নিরাপত্তার ঝুঁকি ভীতি সৃষ্টি করে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি ব্রিফিংয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতির শেষ ঘণ্টায় চ্যালেঞ্জের একটি ভয়াবহ ছবি এঁকেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা দল বাইডেনকে জানিয়েছিল যে ‘কাবুল বিমানবন্দরে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা রয়েছে’। তিনি যোগ করেন: ‘হুমকি চলছে এবং এটি সক্রিয়। আমাদের সৈন্যরা এখনও বিপদে আছে ... এটি মিশনের সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে, কাবুলে মার্কিন দূতাবাস একটি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে, মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দরে ভ্রমণ এড়াতে এবং বিমানবন্দরের গেট এড়াতে পরামর্শ দেয়। এতে লেখা ছিল: ‘মার্কিন নাগরিক যারা অ্যাবে গেট, ইস্ট গেট, নর্থ গেট বা নতুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেটে আছেন তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে’।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন তালেবানের : দু’দিন আগে একটি প্রাণঘাতী আত্মঘাতী হামলার পর বড় জনসমাগম ঠেকাতে কাবুলের বিমানবন্দরের আশেপাশে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে তালেবানরা। বৃহত্তর মার্কিন নেতৃত্বাধীন এয়ারলিফ্ট ৩১ আগস্টের সময়সীমার আগে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনেক মিত্র তাদের নিজস্ব অপারেশন সম্পন্ন করেছে। গতকাল তালেবানরা বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় চেকপোস্টের নতুন স্তর স্থাপন করে। কিছু কিছু ইউনিভার্সড যোদ্ধা হামভি এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত নাইট-ভিশন গগলস ব্যবহার করে।
যেসব এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে সেগুলো মূলত ফাঁকা ছিল। বৃহস্পতিবার ইসলামিক স্টেটের একটি সহযোগী আত্মঘাতী হামলায় হতাহতের ঘটনার পর এ গ্রæপটি আবারও হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
টেকসই সমাধানে অবশ্যই পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গতকাল বলেছেন, আফগানিস্তানে যেকোনো ‘টেকসই সমাধানের’ জন্য পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলার পর মার্কিন সিনেটর এই বক্তব্য দেন। আফগানিস্তানের যেকোনো টেকসই সমাধান অবশ্যই পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং তালেবানদের একটি পাকিস্তান সংস্করণ আছে যারা পাকিস্তান সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে উৎখাত করতে চায়।
এ অঞ্চলটি ‘অত্যন্ত জটিল’ এবং সময়গুলো ‘বিপজ্জনক’ বলে স্বীকার করে গ্রাহাম জোর দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তান একটি ‘পারমাণবিক শক্তিধর দেশ’ এবং এটি তালেবানদের নিজস্ব সংস্করণ রয়েছে যারা ‘পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনীকে পতন করতে চায়’।
তালেবান দখলের পর কাবুল থেকে মার্কিন নাগরিক, মিত্র এবং অন্যান্য দেশগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তায় পাকিস্তান সরকারের প্রচেষ্টার আরো প্রশংসা করেন। শুধু আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জুনে, গ্রাহাম আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের কৌশলে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন এবং সতর্ক করে দিয়ে বিেছলেন যে, ইসলামাবাদকে উপেক্ষা করা বিপর্যয়কর হতে পারে।
এ বছরের শুরুর দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং মার্কিন আইন প্রণেতার মধ্যে এক বৈঠকে কুরেশি বলেছিলেন যে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
কুরেশি বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে যা ব্যাপক যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত করবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আফগানিস্তানে শান্তি চূড়ান্তভাবে সমস্ত আফগান পক্ষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত দায়িত্ব।
সিনেটর গ্রাহাম আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া গভীর করার জন্য পাকিস্তানের সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার গুরুত্বকে তুলে ধরেছিলেন যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায়ও অবদান রাখবে। সূত্র : এপি, বিবিসি বাংলা, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।