মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ১৫ আগস্ট তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের পতন হওয়ার পর ১১ দিন পার হয়েছে। সারাদেশে আফগানদের জীবনযাত্রাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু কাবুল বিমানবন্দরের হুড়োহুড়ি, ভিড়সহ অরাজক পরিস্থিতি যেন আগের অবস্থাতেই রয়েছে। বিমানবন্দর ও এর আশপাশে এলাকায় খাবারের দাম এখন আকাশচুম্বী। এক প্লেট ভাত বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আট হাজার টাকায়। আর এক বোতল পানির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। দাম আকাশচুম্বী হলেও ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়েই তা কিনতে হচ্ছে মানুষকে। দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজার হাজার আফগান এই মুহূর্তে ভিড় করছে কাবুল বিমানবন্দরে। এ কারণেই এই এলাকায় নজিরবিহীন ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিমানবন্দরের চারদিকে কেবলই আশাহীন মানুষের ছোটাছুটি। রোদ-গরমে ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মানুষ রয়েছেন বিরামহীন অপেক্ষায়। মানুষের আস্থা-ভরসাও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, কাবুল বিমানবন্দরের আশপাশে এক বোতল পানি বিক্রি হচ্ছে ৪০ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া এক প্লেট ভাতের মূল্যও চাওয়া হচ্ছে ১০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮ হাজার ৫০০ টাকারও বেশি।
খাবার ও পানির উচ্চ মূল্যে কার্যত দিশেহারা বিমানবন্দরে অপেক্ষারত মানুষেরা। এক আফগান নাগরিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’কে জানিয়েছেন, তিনি এক বোতল পানি কিনেছেন যার দাম পড়েছে ৪০ মার্কিন ডলারের মতো।
ফজল-উর-রেহমান নামে এক ব্যক্তি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘কাবুল বিমানবন্দরে এখন এক বোতল পানি ৪০ মার্কিন ডলারে এবং এক প্লেট ভাত ১০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে আফগানি মুদ্রার বদলে কেবল মার্কিন ডলারে বেচাকেনা চলছে। এই উচ্চমূল্যের কারণে সেখানে খাবার ও পনীয় এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।’
এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে অবস্থানরত মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে অন্যান্য স্থানে থাকা নাগরিকদের বিমানবন্দরের উদ্দেশে না আসতেও সতর্ক করে দিয়েছে দেশ দুটি।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির কারণে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বুধবার রাতে উভয় দেশ নিরাপত্তা সতর্কতা নিয়ে নির্দেশনাও জারি করেছে।
বুধবার এক নিরাপত্তা বিষয়ক সতর্কবার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাবেই গেট, পূর্ব গেট এবং উত্তর গেটে অপেক্ষারত মানুষকে ‘অবিলম্বে সরে যেতে’ বলা হয়েছে।
এর আগে একই ধরনের পৃথক একটি নির্দেশনায় যুক্তরাজ্য সরকারও সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দেয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং যেকোনো সময় সেখানে সন্ত্রাসী হামলার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে উদ্ধার অভিযানের গতি আরও বেড়েছে। তালেবানের কাবুল দখলের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৩ হাজার জনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই ঘটিবাটিসহ আফগানিস্তান ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে অবশিষ্ট সেনাদেরও সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক হাজার হাজার আফগানের স্বপ্ন সফল না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যুৎ গতিতে রাজধানী কাবুল দখলে নিলেও এখন পর্যন্ত একটা গুলিও খরচ করেনি তালেবান। তারপরও অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত। আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দর এখন অরাজক পরিস্থিতির কেন্দ্রস্থল। যে যার মতো এখানে-সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশ ছাড়তে প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। লোকজন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খোদ মার্কিন সেনারা। ৩১ আগস্টের মধ্যে বিদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার শেষ সময়। হাতে সময় আছে আর মাত্র পাঁচদিন। বিদেশি নাগরিকদের বহনকারী বিমানে যেন একটু ঠাঁই হয়, তারই জোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে সাধারণ আফগানদের মধ্যে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।