মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অতি প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতির লীলাভূমি আফগানিস্তান। বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ রয়েছে এই অঞ্চলের। একের পর এক সাম্রাজ্য ও সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস। এর মধ্যে পারসিক সম্রাট সাইরাসের সাম্রাজ্য, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের গ্রিক সাম্রাজ্য, ভারতীয় মৌর্য সাম্রাজ্য, কুষাণ যুগ এবং অবশ্যই বিভিন্ন কালপর্বের ইসলামি সাম্রাজ্য অন্যতম। সেই কারণে এই ভূমির উপরে ব্যকট্রিয়ান-গ্রিক, কুষাণ, হুন, ঘোরি, মুঘল এবং দুররানি সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে।
এই সব সাংস্কৃতিক প্রভাবের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে গোটা আফগানিস্তান জুড়ে। সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালায় সযত্নে রাখা রয়েছে গান্ধার শিল্পের নিদর্শন থেকে শুরু করে অতীতের ইসলামি পুরাতত্ত্বের নিদর্শনও। এর বাইরে সারা দেশেই ছড়িয়ে রয়ছে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে। এবং ১৯৯২ সালের মধ্যে বেশ কিছু প্রত্নক্ষেত্রে সোভিয়েত বাহিনী বা স্থানীয় বাসিন্দারা হানা দিতে থাকেন ‘গুপ্তধনের’ সন্ধানে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু নির্দশন-ক্ষেত্র। তালেবান শাসনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে।
পূর্ব আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরের কাছে হাড্ডায় রয়েছে মহাযান বৌদ্ধ আমলের বেশ কিছু প্রত্নক্ষেত্র। কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতাতেই ভারতের সীমা ছাড়িয়ে মহাযানবাদ বিস্তৃত হয় বিশ্বের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। হাড্ডার টাপা শোতোর বৌদ্ধ স্তূপ ও মঠে হানা দেয় তালেবান বাহিনী। সেই প্রত্নক্ষেত্রের বিপুল ক্ষতি করে তারা। হাড্ডায় অবস্থিত অন্যান্য প্রত্নক্ষেত্রেও হানা দিতে থাকে তারা। খাইবার গিরিপথের লাগোয়া এই অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে গান্ধার শিল্পের অজস্র নিদর্শন। পৌত্তলিকতা বিরোধী তালেবান ভাঙতে শুরু করে এই সব মূর্তি। খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে নির্মিত বহু মূর্তিই তালেবানের হাতে ধ্বংস হয়।
উত্তর আফগানিস্তানের তাখার প্রদেশে দিগ্বিজয়ী গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার এক নগরীর পত্তন করেছিলেন বলে জানা যায়। পরে সেই নগরীর উপরে গড়ে ওঠে ব্যাকট্রীয় গ্রিক বা ইন্দো-গ্রিক সভ্যতার কেন্দ্র। উজবেকরা পরে সেই শহরের নাম দেন আই-খানোউম। এখানে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া যায় বিপুল প্রত্নসামগ্রী। স্থানীয়দের হাত ঘুরে আই-খানোউম থেকে বহু কিছুই চলে আসতে শুরু করে পাকিস্তানের বাজারে। ব্যক্তিগত প্রত্ন সংগ্রাহকরা তা বিপুল দামে কিনে নিতে থাকেন। তালেবানের হাতে বেশ ভাল পরিমাণে অর্থ সরবরাহ করে এই আই-খানোউমের প্রত্নভান্ডার।
আফগান-পাক সীমান্তে অবস্থিত মির জাকাহ্ অঞ্চলে ব্যাকট্রীয়-গ্রিক আমলের প্রচুর মুদ্রা পাওয়া যায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫-এর মধ্যে এক কুয়া থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রুপা ও ব্রোঞ্জ মুদ্রার সন্ধান মেলে। সেই দুর্মূল্য মুদ্রার এক বড় অংশ তালেবানের হাত হয়ে চলে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে। সোভিয়েত অধিকার এবং তালেবানের প্রথম শাসনে কাবুলের জাতীয় সংগ্রহালয় থেকে প্রচুর মূল্যবান সামগ্রী লুঠ হয় বলে জানা যায়। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালের বিস্তর পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ এখান থেকে উধাও হয়ে যায়, এ কথা অনেক পুরাতাত্বিকই বলেন। ১৯৯৮-এর ১১ আগস্ট তালেবান ধ্বংস করে পুলি কুমরি গ্রন্থাগার। ধ্বংস করে ৫৫ হাজার বই এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপি।
বামিয়ানের বিশাল বুদ্ধমূর্তিগুলোও ধ্বংস করে তালেবানরা। ২০০১ সালের মার্চে তালেবান নেতা মোল্লা মহম্মদ ওমর এক ফতোয়া জারি করে দেশের যাবতীয় মূর্তি ধ্বংসের নির্দেশ দেন। তার মতে, এই সব কিছুই আফগানিস্তানের প্রাক-ইসলামি পৌত্তলিকতার উদাহরণ। ২০০১-এর মার্চ মাসে কয়েক সপ্তাহ ধরে ধ্বংস করা হয় ষষ্ঠ শতকে নির্মিত ১২৫ ফুট এবং ১৮০ ফুট উচ্চতার দু’টি বুদ্ধ মূর্তি। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয় গান্ধার শৈলীতে নির্মিত সব থেকে বড় শিল্প নিদর্শন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তালেবানের অর্থভান্ডারকে পুষ্ট করেছে আফগান প্রত্নবস্তু বিক্রি ও পরিবহণ থেকে আদায় করা কর। আবার তালেবানের শাসনে আফগানিস্তান। কাবুলের জাতীয় সংগ্রহালয়ের কর্মকর্তা মহম্মদ ফাহিম রহিমি জানিয়েছেন, জাদুঘরের বাইরে সশস্ত্র রক্ষী বসিয়েছে তালেবান। আর যাতে বামিয়ান-কাণ্ড না ঘটে, তেমন নির্দেশও নাকি দেয়া হয়েছে যোদ্ধাদের। আপাতত বিশ্বের প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহ্য সংরক্ষকদের বড় অংশের চোখ আফগানিস্তানের পরিস্থিতির দিকে। শক-হুন-পাঠান-মুঘল যে ভূমিতে সত্যিই এক দেহে লীন হয়েছিল, সেখানে আবার কি ঘটতে চলেছে? আপাতত রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় সকলেই। সূত্র : এবিপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।