Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালেবানে অবরোধে পাঞ্জশিরে ব্যাপক খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট

দুই মন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধানের নাম ঘোষণা

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ/ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

তালেবানের অভিযানে অবরুদ্ধ পাঞ্জশিরে ব্যাপক খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নিজেকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট দাবিকারী সালেহ এক টুইট বার্তায় একথা জানিয়েছেন। তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য তালিবানরা শত শত যোদ্ধা পাঠিয়েছে পাঞ্জশিরের আশেপাশের এলাকায়। যোদ্ধা বাড়ানো সত্তে¡ও তালেবান মুখপাত্ররা বলছেন যে, তারা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে পছন্দ করবেন।
ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফোর্স এনআরএফ বলেছে যে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের বিষয়ে তালেবানদের সাথে আলোচনার জন্য তাদের দুয়ার উন্মুক্ত এবং পাঞ্জশির উপত্যকার প্রবীণরা গ্রুপের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছে বলে জানা গেছে। তবে এতে কোনো সাফল্য আসেনি।
তালেবান বলেছে যে, তারা পাঞ্জশিরের কমপক্ষে তিনটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ টুইট করেছেন যে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানবিক সংকট তৈরি হচ্ছে। এনআরএফ যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দীর্ঘদিন অবরোধ সহ্য করার জন্য তাদের কাছে খাদ্য, সরবরাহ এবং গোলাবারুদ আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য বাইডেন প্রশাসনের নির্ধারিত তারিখ ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে হবে। এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তার গ্রুপ কোনো মেয়াদ বাড়াবে না। তিনি বলেন, দেশে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে, কিন্তু বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা সমস্যা রয়ে গেছে। অনেক আফগান দেশ তালেবানদের দখল থেকে পালাতে মরিয়া।
মেধা পাচারের কথা উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দক্ষ আফগানদের সরিয়ে নেওয়া বন্ধ করা। গ্রুপটি বলেছে যে, আমেরিকানরা ‘আফগান বিশেষজ্ঞ’ যেমন ইঞ্জিনিয়ারদের দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ‘তাদের বিমান আছে, তাদের বিমানবন্দর আছে, তাদের উচিত তাদের নাগরিক এবং ঠিকাদারদের এখান থেকে বের করে দেওয়া’ -মুজাহিদ বলেন। তালেবান নেতা আরো বলেন, আফগান সরকারি নারী কর্মীদের দেশে নিরাপত্তা অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সেনারা হাজার হাজার মানুষকে কাবুল থেকে বের করে আনার জন্য অভিযান বাড়িয়েছে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পর তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়ানোর অনুমতি দেবে না।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন যে, তিনি সময়সূচি মেনে চলবেন, কিন্তু প্রত্যাহারের জন্য আরো সময় নিয়ে আলোচনার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হয়েছেন।
জার্মানি মঙ্গলবার বলেছে যে, পশ্চিমা মিত্ররা কেবল আফগানদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে না যাদের কাবুল থেকে নির্ধারিত তারিখের আগে সুরক্ষা প্রয়োজন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বিল্ড টিভিকে বলেন, ‘যদি [প্রত্যাহার] ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে বা কয়েক দিনও বেশিও হয়, তবে আমরা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাঁদের দেশ থেকে নিয়ে যেতে চান তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় যথেষ্ট হবে না’।
এর আগে, ফ্রান্স বলেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সময়সীমার মধ্যে আটকে থাকলে বৃহস্পতিবার তাকে কাবুলের বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার বন্ধ করতে হবে এবং স্পেন বলেছে যে, স্প্যানিশ মিশনে কাজ করা সমস্ত আফগানদের উদ্ধার করতে পারবে না। এদিকে, ব্রিটেন বলেছে যে, তারা ভার্চুয়াল জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে তারিখ বাড়ানোর জন্য তদবির করবে।
ওদিকে গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরে তালেবানরা এখনও নতুন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে পারেনি। তবে এবার তারা দুই মন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধানের নাম ঘোষণা করেছে। মন্ত্রী দুজন অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এদিকে, উন্নত অর্থনীতির দেশসমূহের গ্রুপ, জি-সেভেন নেতারা গতকাল আফগানিস্তান নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তালেবানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে কিনা বা আর্থিক মঞ্জুরি দেবে কিনা সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছে বলে দুটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আফগানিস্তানের বার্তা সংস্থা পাজহোকের খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানের নতুন অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে গুল আগাকে, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদর ইব্রাহিম ও নাজিবুল্লাহ হবেন গোয়েন্দাপ্রধান। এ ছাড়া সোমবার কাবুলের গভর্নর করা হয়েছে মোল্লা শিরিনকে। আর রাজধানীর মেয়র হলেন হামদুল্লাহ নোমানি।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে তারা। এর আগে, আফগানিস্তানে সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি নতুন সরকার গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। গত সপ্তাহে কাবুল দখল করার পর এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকার তিনি বলেন, তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে চান। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নতুন সরকার গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো পরামর্শ চলছে। সব পক্ষের অংশগ্রহণে সরকার গঠন করা হবে। তবে রাজধানী কাবুল হবে নাকি কান্দাহার সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে সম্পর্কের ভিত্তিতে আলোচনা চলছে জানিয়ে তালেবানের এই নেতা বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা কাজ করছেন। বিমানবন্দরের বাইরের চেকপয়েন্টগুলো তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। ভেতরের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে। উভয় পক্ষ সমন্বয় করে কাজ করছে।
অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা এবং জাপানের নেতারা তালিবানকে ঐক্যবদ্ধভাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা তালেবানকে নারীর অধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে নিষেধাজ্ঞা পুনর্নবায়ন করতে পারেন। ওয়াশিংটনে বিদেশী কূটনীতিকরা বলেছেন যে, ১৫ আগস্ট কাবুল পতনের পর মার্কিন মিত্ররা ওয়াশিংটনের আফগান ত্যাগে বিলম্ব এবং সহযোগিতা এই আহ্বানের মূল বিষয় হবে। একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘জি-৭ নেতারা তালিবানকে স্বীকৃতি দেবে কি না বা কখন দেবে সে বিষয়ে সমন্বয় করতে রাজি এবং তারা একসঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্স বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জি-৭ আলোচনার সময় একটি সমন্বিত পদ্ধতির উপর জোর দেবেন, যার মধ্যে ন্যাটো মহাসচিব জেন স্টলটেনবার্গ এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও থাকবেন। পিয়ার্স রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই, যাতে আমরা সবাই নতুন আফগান শাসনকে একত্রিত ও সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে পারি।’ সূত্র : সূত্র : ডন অনলাইন, রয়টার্স, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ