Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বরিশালে সড়ক ও নৌ অবরোধ প্রত্যাহার, বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৫ পিএম | আপডেট : ৮:০২ পিএম, ১৯ আগস্ট, ২০২১

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও’র বাসার সামনে থেকে প্রতিপক্ষের ব্যানার খুলতে গিয়ে বুধবার রাতে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের সাথে পুলিশ ও আনসারের সংঘর্ষ সহ দু দফা গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে কোতয়ালী থানার ওসি ছাড়াও বিসিসি’র প্যানেল মেয়র সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এব্যাপারে ইউএনও মুনিবুর রহমান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে হুকুমের আসামী করে একটি মামলা করেছেন। পুলিশও বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন মামলা করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। রাতেই ঘটনাস্থল থেকে দুজন ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ জনের মধ্যে ৮ নেতা কর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যরা রাতেই পালিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ১০ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও ১০জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক বার্তা ঢাকায় পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউএনও’র বাসভবনের সামনে পুলিশ ও আনসার দু দফা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাতেই ইউএনও’র সামনের বরিশাল-ঢাকা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক সিটি করেপারেশনের গার্বেজ ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় রাস্তায় ময়লা আবর্জনার ফেলা সহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থানও নেয়।

রাত দেড়টার পরে বিভাগীয় কমিশনার, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক উপজেলা কমপ্লেক্স সহ ইউএনও’র বাসভবন পরিদর্শন করেন। ভোর থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং সকাল ৮টার পরে নৌযোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। মহানগরী থেকে বাইরে কোন যানবাহনই বের হতে বা প্রবেশ করতে পারছিলনা। বিমান বন্দরের যাতায়াতকারী যাত্রীরা পর্যন্ত চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে দুপুর ১টা পরে সড়ক ও নৌ অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিগত কিছুদিন ধরেই বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল(অব:) জাহিদ ফারুক শামিমের সাথে মেয়র সাদেক আবদুল্লাহর মনান্তর অনেকটা প্রকাশ্যে চলে আসে। নগরীতে মেয়র ও এমপি’র ভিন্ন ভিন্ন ব্যানার টানান ও তা খোলার একটি প্রবণতাও চলছিল। ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নগরীতে উভয় গ্রুপই ব্যানার ও প্লাকার্ড লাগায়।

বুধবার রাতে যুবলীগ ও ছাত্র লীগের কিছু নেতা-কর্মী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার খোলার কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা নগরীর সিএন্ডবি রোডে সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে-এর অভ্যন্তরে ও ইউএনও’র বাসভবনের সামনের ব্যানারও খুলতে যায়। এসময় নিরাপত্তা রক্ষী আনসার সদস্যরা এলাকাটি সংরক্ষিত বিধায় দিনের বেলায় তা খোলার অনুরোধ করলে নেতা কর্মীরা ফিরে গিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ জনের একটি দল সেখানে চড়াও হয়।

এসময় ইউএনও মুনিবুর রহমান তার বাসার দোতালা থেকে নিচে নেমে নেতা কর্মীদের বোঝাবার চেষ্টা করলে কয়েকজন তার বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ ইউএনও’র। নিরাপত্তা কর্মীরা বাস ভবনে ঢুকতে বাধা দিলে তা অমান্য করে আনসার সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে।

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় কোতয়ালী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে সিটি করপোরেশনের দু নম্বর প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকন ছাড়াও ওসি ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম সহ অন্তত ৩৫জন আহত হয় বলে জানা গেছে। আহত অন্যদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই পুলিশ সদস্যকে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনি বাস টার্মিনাল থেকে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি বরিশাল - ফরিদপুর - ঢাকা এবং বরিশাল - পটুয়াখালী - কুয়াকাটা ও বরিশাল - পিরোজপুর - খুলনা মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল ৮টার পরে বরিশাল নৌ বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সব রুটের নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে দুপুর ১টার পরে মেয়রের নির্দেশে সড়ক ও নৌপথের অবরোধ প্রত্যাহার হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়।

সকাল থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সিটি মেয়র সাদিক অবদুল্লাহর কালীবাড়ী রোডের বাস ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ প্রত্যাহার করা হলেও আরো বেশ কিছু সময় সেখানে র‌্যাব অবস্থান করছিল।

বুধবার রাতে ইউএনও’র বাস ভবনে গোলযোগের মধ্যেই সেখানে সিটি মেয়র হাজির হলেও তার উপস্থিতিতেই গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন তিনি দুঃখ ও লজ্জায় বাসায় চলে আসেন বলে জানিয়ে ঐ সংঘর্ষে তার আহত হবার খবরটি সঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। শেষ রাতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ‘তাকে কেউ সহযোগিতা করছে না’ বলে জানিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত আছেন’ বলেও জানিয়েছেন সিটি মেয়র।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল মেয়রের বাসভবনে আহুত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস ও মহানগর সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর সহ নেতৃবৃন্দ বুধবার রাতের ঘটনায় তাদের তরফ থেকে ব্যাখ্যা প্রদান করে এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেছেন।

মহানগরীর পরিস্থিতি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থমথমে থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহল



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বরিশাল

২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ