Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পানি বৃদ্ধি নদীভাঙন

ফুঁসে উঠেছে পদ্মা, দুই নদী তিন স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৬ এএম

অতি বর্ষণে ভারতের ঢল অব্যাহত : নদ-নদীর পানি বাড়ছেই
দক্ষিণাঞ্চলে অতিবৃষ্টির সতর্কতা : পদ্মা-মেঘনার ভাটি হয়ে মোহনায় ঘূর্ণিস্রোত নৌ চলাচলে ঝুঁকি
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে নদ-নদী অববাহিকায় অতি বৃষ্টি হচ্ছে। এরফলে অব্যাহত রয়েছে উজানের ঢল। গঙ্গায় ভারত ফারাক্কা বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ায় পদ্মা নদীর সবক’টি পয়েন্টে হু হু করে বাড়ছে পানি। ফুলে-ফুঁসে উঠেছে পদ্মা নদী। পাশাপাশি পদ্মার শাখা-প্রশাখা নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে। পদ্মা দুটি পয়েন্টে ও গড়াই নদী একটি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেতনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। গঙ্গা, তিস্তা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের সকল পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজানে উৎসস্থলে নদ-নদীসমূহের সব বাঁধ-ব্যারেজ খুলে ভাটির দিকে পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত।

এরফলে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ছেই। উজানের ঢলের তোড়ে ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙন বেড়েছে ভয়াবহ আকারে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল থেকে পদ্মা-মেঘনার ভাটি হয়ে মোহনায় চাঁদপুর, ভোলা-নোয়াখালী-ল²ীপুর পর্যন্ত নদীভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের অগণিত বাসিন্দা। পৈত্রিক ভিটেমাটি, ফসলের জমি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রমত্তা নদীগর্ভে। পদ্মা-মেঘনার ভাটি মোহনা অবধি প্রচÐ ঘূর্ণিস্রোত অব্যাহত রয়েছে। এরফলে সবধরনের নৌ চলাচল ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাসে জানায়, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশেষত আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, হিমালয় পাদদেশ ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম অঞ্চলের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। যা অব্যাহত থাকবে। উড়িষ্যা উপকূলে বিরাজমান লঘুচাপ এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু এখন জোরালো রয়েছে। এই দু’য়ের সক্রিয় প্রভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এদিকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলভাগে বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতাসহ পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ। এছাড়া মধ্য-ভারত, বিহার, নেপাল, তিব্বতসহ চীনের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে ব্যাপক জলীয়বাষ্প ও মেঘমালা নিয়ে মৌসুমী বায়ু বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশমুখী। এরফলে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

নদ-নদী পরিস্থিতি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল বুধবার ৬৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৭টিতে হ্রাস পায়। তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। মঙ্গলবার নদ-নদীর ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস, দু’টি স্থানে অপরিবর্তিত ও তিনটি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। সোমবার ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৭টিতে হ্রাস ও ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল। একটি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। রোববার ৭১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৩টিতে হ্রাস, ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।

নদী প্রবাহ পূর্বাভাস
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, সুরমা ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। ইতোমধ্যে পদ্মা নদী বিপদসীমা অতিক্রম করার কারণে পদ্মা সংলগ্ন রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নি¤œাঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস উল্লেখ করে পাউবো জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ সময়ে কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহের পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে।

নদী প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থা
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, অতিবৃষ্টিতে ভারতের উজান থেকে আসছে ঢল। সেই সাথে উজানে ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে উজান-ভাটিতে গঙ্গা-পদ্মা নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুঁসে উঠেছে। পদ্মা নদীতে পাউবোর ৮টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে বিকাল পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ^র পয়েন্টে ১৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পদ্মার উজানভাগে পাংখায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৯, রাজশাহীতে ৭৮, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ৩২, ভাগ্যকুলে ৩৫, মাওয়ায় ৩৭ সে.মি. এসে গেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়াই নদী মাগুরা জেলার কামারখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গড়াই রেলব্রিজের কাছে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ায় বেতনা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৩৬ সে.মি. ঊর্ধ্বে বয়ে যাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মহানন্দা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪২ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।
পদ্মা ও এর শাখা-প্রশাখা, উপনদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং রাজবাড়ী, শরীয়তপুর জেলাসহ পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে তীব্র নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নি¤œাঞ্চলসমূহ।

উত্তর জনপদে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে থাকলেও আবারো বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ৬৬ ও ৫৮ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের অববাহিকায় সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। যদিও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদে পানি আরো বেড়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদে সবক’টি পয়েন্টে বাড়ছে পানি। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে ৭০, আরিচায় ৩০ সে.মি. নিচে রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলাসিনে ৬৯ সে.মি. নিচে রয়েছে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে পাসিঘাটে ১৩৩, চেরাপুঞ্জিতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে রামগড়ে ৯৪, কক্সবাজারে ৯২, লালাখালে ৮৬, বরগুনায় ৬৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ