মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তালেবানরা গত শুক্রবার আফগানিস্তানের কান্দাহারের বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয়। এর পরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ব্ল্যাক হক এবং সোভিয়েত-নির্মিত এমআই -১৭এস এর মতো সামরিক হেলিকপ্টার নিয়ে তালেবান যোদ্ধাদের তোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।
এই সপ্তাহান্তে গ্রুপটি মাজার-ই-শরীফ বিমানবন্দরের দখল নেয়ার পর, এমন আরও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সে সময় তালেবান সদস্যদেরকে এ-২৯ যুদ্ধ বিমান এবং এমডি-৫৩০ ইউটিলিটি হেলিকপ্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এখন, আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে, ফলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগান বিমান বাহিনীর জন্য সরবরাহকৃত প্লেন এবং হেলিকপ্টারগুলোও তাদের হাতে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তালেবানরা এগুলো নিয়ে কী করার পরিকল্পনা করছে-এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য বিশেষ মহাপরিদর্শকের জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগান বিমান বাহিনী মোট ২১১ টি বিমান পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে ৩০ জুন অবধি প্রায় ১৬৭ টি বিমান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহারের উপযোগী রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বিভাগ নিশ্চিত করেনি যে, তালেবানের হাতে কতগুলো বিমান পড়েছে, তার মধ্যে কতগুলো এখনও চালু আছে এবং কতগুলো বিমান নিয়ে আফগান বিমান বাহিনীর পাইলটরা নিরাপদে প্রতিবেশী দেশে উড়ে গেছে।
সোমবার পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ের সময় আঞ্চলিক অপারেশনের যুগ্ম স্টাফ ডেপুটি ডিরেক্টর মেজর জেনারেল হ্যাঙ্ক টেইলর বলেন, তালেবান দ্বারা বিমান বা অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম আটক বা ব্যবহার রোধে মার্কিন সামরিক বাহিনী পদক্ষেপ নেবে কিনা সে সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। ব্র্যাডলি বোম্যান, একজন সাবেক ব্ল্যাক হক পাইলট, যিনি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের তীব্র সমালোচনা করেছেন, তিনি ডিফেন্স নিউজকে বলেন, ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে তারা শত শত হামভি, আর্টিলারি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম এবং বিমান দখল করেছে।’
তালেবানের অগ্রযাত্রার কথা বিবেচনা করে বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত আফগানিস্তান থেকে আমেরিকানদের নিরাপদ সরিয়ে নেয়া, বোম্যান বলেন। তারপরে, আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সরঞ্জামগুলো, সেইসাথে আফগান বিমান বাহিনীর রেখে যাওয়া সমস্ত বিমান এবং হেলিকপ্টার ধ্বংস করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এখন তা করি, তাহলে আমি দেখতে পাবো যে তালেবানরা কাবুল থেকে উচ্ছেদ অভিযানের দিকে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং সকল আমেরিকানদের বের করে আনুন, যতটা সম্ভব আমাদের আফগান অংশীদারদের বের করে আনার চেষ্টা করুন। একবার এটা হয়ে গেলে আমরা তালেবানদের দখল করা প্রতিটি হেলিকপ্টার এবং বিমান কেন ধ্বংস করব না? আমি মনে করি আমাদের এটি করা উচিত।’
বিশেষ পরিদর্শকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান বিমান বাহিনী ২৩টি এ-২৯ যুদ্ধ বিমান, চারটি সি-১৩০ কার্গো প্লেন এবং ৩৩টি সেসনা বিমানের সামরিক সংস্করণ পরিচালনা করেছে। তারা প্রায় ১৫০টি হেলিকপ্টারও ব্যবহার করেছে। যার মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক ইউটিলিটি হেলিকপ্টার এবং সশস্ত্র এমডি-৫৩০এস হেলিকপ্টার। সেইসাথে ছিল সোভিয়েত এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, যা আফগান বিমান বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ছিল।
আফগান বিমান বাহিনীর ইনভেন্টরির মধ্যে, সম্ভবত সবচেয়ে উন্নত হল এ-২৯ সুপার টুকানো। এটি একটি টার্বোপ্রপ অ্যাটাক প্লেন যা ব্রাজিলিয়ান মহাকাশ নির্মাতা এমব্রেয়ার দ্বারা নির্মিত এবং একটি আমেরিকান প্রতিরক্ষা সংস্থা সিয়েরা নেভাদা দ্বারা উন্নীত করা হয়েছে। তারা বিমানটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উন্নত সেন্সর এবং অস্ত্র যুকত করেছে। যুদ্ধের সময় গতি ও কৌশলের জন্য নির্মিত ফাইটার জেট থেকে এই ধরণের বিমানগুলো আলাদা। এ-২৯ প্রতি আক্রমণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে, একটি বিমানকে মাটিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ধীর এবং কম উচ্চতায় উড়তে হবে। উড়োজাহাজটি তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ পাইলটদের দ্বারা উড়ানো যায় এবং কঠোর পরিবেশে পরিচালিত হয়।
বিমান যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মার্কিন জেনারেল মার্ক কেলির মতে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিমানটিকে আফগান বিমান বাহিনীর জন্য দুর্দান্ত উপযোগী করে তোলে, যাদেরকে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এটি এমন প্রযুক্তি নয় যা, ভবিষ্যতে তালেবানদের সাথে লড়াইয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘কারো হাতে কোন ক্ষমতা পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া বোধগম্য যেখানে আমরা জানি না যে তারা কীভাবে এটি ব্যবহার করতে যাচ্ছে, কারা এটি ব্যবহার করতে যাচ্ছে, সেটা এম১৬ (রাইফেল) হোক বা একটি এ-২৯।’
এ বিষয়ে টিল গ্রুপের একজন মহাকাশ বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, যদিও তালেবানরা আটককৃত বিমান বিক্রির চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু আফগান বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত কোন প্লেন বা হেলিকপ্টারে এমন সংবেদনশীল প্রযুক্তি নেই যা চীন বা রাশিয়ার মতো দেশের জন্য উপযোগী হবে। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, যদি রাশিয়ান বা চীনারা সুপার টুকানো বা প্রাথমিক মডেলের ব্ল্যাক হক সহজেই হাতে পেতে পারে। কারণ, সেগুলো স্বল্প প্রযুক্তিতে সজ্জিত।’
তালেবানরা যদি অবশিষ্ট বিমান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে একটি অ্যাড-হক বিমান বাহিনীর ভিত্তি তৈরি করতে ও সরঞ্জামগুলো পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তাদেরকে অসংখ্য বাধার মুখোমুখি হতে হবে। কেলি বলেন, ‘প্রথমত, তালেবানদের প্রশিক্ষিত পাইলট নেই যারা বিমানগুলোকে তার সেন্সর ব্যবহার করে এবং অস্ত্র লোড ও মোতায়েন করে নিরাপদে উড়াতে সক্ষম। তবে তারা একসময় যোগ্য পাইলট খুঁজে পেতে পারে। কিন্তু, তাহলেও আমি মনে করি না বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু রয়েছে।’
তালেবানদের জন্য আরও বড় বাধা হবে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত খরচ, দক্ষতা এবং রসদ। এটি একটি ব্যয়বহুল প্রস্তাব যার মধ্যে উড্ডয়নের আগে ও পরে বিমানের সার্ভিসিং, মেরামত করা এবং খুচরা যন্ত্রাংশ কেনা জড়িত। তবে এটিও তালেবানের পক্ষে সমাধান করা অসম্ভব নয় বলে মনে করেন বোম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা সম্ভবত পাইলট খুঁজে পেতে পারে, সম্ভবত আফগান বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলটদের তাদের পাশে আসতে বাধ্য করা হবে। এবং এটাও অসম্ভব নয় যে, বিদেশী শক্তি যারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত নয় তারা সাহায্য করতে পারে।’
কিন্তু আবুলাফিয়া উল্লেখ করেছেন যে বিমানের অস্ত্রের ব্যবহার - আফগানিস্তানের নাগরিকদের উপর অথবা অঞ্চলের অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে - শেষ পর্যন্ত তালেবানদের দেশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তালেবানদের পুনরুদ্ধারের জন্য আফগানিস্তানে সমস্ত সামরিক বিমান অবশিষ্ট ছিল না। রোববার রাতে, আফগান বিমান বাহিনীর তিনটি বিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার - যা ১৪৩ সেনা পরিবহন করছিল - দেশটির কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর নিরাপদে তাজিকিস্তানে অবতরণ করে। আফগান বিমান বাহিনী উজবেকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়ও চেয়েছে, যদিও গত কয়েক দিন ধরে কতগুলো বিমান ও কর্মী সেই দেশে গিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
সোমবার, উজবেকিস্তানের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, ২২ টি সামরিক বিমান এবং ২৪ টি হেলিকপ্টার - সম্মিলিতভাবে ৫৮৫ সৈন্য নিয়ে উজবেকিস্তানে গিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আরও তিনটি এ-২৯ যুদ্ধ বিমান ১৫ আগস্ট অবতরণের অনুমতি চেয়েছিল এবং উজবেক সেনাবাহিনী তাদেরকে মিগ-২৯ দিয়ে এসকর্ট দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় একটি মিগ-২৯ এবং একটি এ-২৯ এর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয় বিমানের পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। তবে ১৬ আগস্ট, তারা এই বিবৃতি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে। কতগুলো আফগান বিমান উজবেকিস্তানে অবতরণ করেছে সে সম্পর্কে তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি। সূত্র : ডিফেন্স নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।