Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভিয়েতনামের সায়গন বনাম আফগানিস্তানের কাবুল : মিল-অমিল

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:২৫ এএম

আরও একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে পরাজিত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক ভিয়েতনামের মতই তারা আফগানিস্তানে পরাজয় বরণ করেছে। মাথা নিচু করে যেমনিভাবে ভিয়েতনাম ছেড়েছে তেমনি আফগানিস্তানও ছেড়েছে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহার এবং এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ওপর সোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের ছবি, ভিডিও ইত্যাদি পোস্ট করা হচ্ছে।

তার মধ্যে একটি ছবি নিয়ে আলোচনা চলছে ব্যাপক। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস থেকে হেলিকপ্টারে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

কারো কারো কাছে এটা খুবই পরিচিত এক ছবি।

১৯৭৫ সালে ফটোগ্রাফার হিউবার্ট ফন এস একটি ছবি তুলেছিলেন যা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছিল, ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে সায়গন শহরের মানুষ হুড়োহুড়ি করে একটি হেলিকপ্টারে উঠে পালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়দলের রাজনীতিকরা এখন তালেবানের কাবুল দখলকে সায়গনের পতনের সাথে তুলনা করছেন।

সায়গন পতনের সময় কী ঘটেছিল?
ভিয়েতনামের যুদ্ধ হয়েছিল উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকারের সাথে দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং তার সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ওই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় ২০ বছর ধরে। ব্যয়বহুল ওই যুদ্ধ নিয়ে পুরো আমেরিকা ছিল দু'ভাগে বিভক্ত।

'সায়গনের পতন' মানে হলো ভিয়েতকং নামে পরিচিত পিপলস আর্মি অফ ভিয়েতনামের হাতে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গনের দখল। ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল সায়গনের পতন ঘটে।

শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে ঘটা ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামকে সমর্থন করছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার কমিউনিস্ট মিত্র দেশগুলো। আর দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করছিল পশ্চিমা দেশগুলো। এই যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর লক্ষ লক্ষ সৈন্যকে ভিয়েতনামে মোতায়েন করা হয়েছিল।

আমেরিকা ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছিল। দুই বছর পর উত্তর ভিয়েতনামের বাহিনী সায়গন দখল করলে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার আত্মসমর্পণ করে।

সায়গনের নতুন নাম দেয়া হয় হো চি মিন সিটি। হো চি মিন ছিলেন উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট নেতা।

কাবুলের মতোই সায়গনের পতনও ঘটেছিল অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে, যা যুক্তরাষ্ট্র একেবারেই কল্পনা করতে পারেনি।

সায়গনের পতনের সময় যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি করে তাদের দূতাবাস থেকে সব কর্মচারীকে সরিয়ে নিয়েছিল। 'অপারেশন ফ্রিকোয়েন্ট উইন্ড' নামে বিশেষ পরিকল্পনার অধীনে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সাত হাজারেরও বেশি মার্কিন নাগরিক, দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং বিদেশি নাগরিককে শহর থেকে বের করে আনা হয়েছিল।

শেষের দিকে ভিয়েতনামের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে এক অ-জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত কোটি ডলার ব্যয় হয়। শুধু তাই না, ৫৮ হাজারেরও বেশি মার্কিন নাগরিক এই লড়াইয়ে প্রাণ হারায়।

কেউ কেউ মনে করেন, সায়গন পতনের মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।



এর পরের দশকগুলোতে 'ভিয়েতনাম সিনড্রোম' নামে নতুন একটি শব্দ চালু হয় যার মধ্য দিয়ে বিদেশে সৈন্য প্রেরণে আমেরিকান জনগণের অনীহার কথাই প্রকাশ করা হয়।

এখন অনেক মার্কিন নীতিনির্ধারকই সায়গনের সাথে কাবুলের তুলনা করছেন।

'এটা হচ্ছে জো বাইডেনের সায়গন,' লিখেছেন রিপাবলিকান হাউস কনফারেন্সের চেয়ারম্যান এলিস স্টোফানিক, 'আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ এক বিপর্যয়কর পরাজয় যা কখনই ভোলা যায় না।'

গত মাসে মার্কিন সামরিক বাহিনীর যৌথ স্টাফ প্রধানদের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি কাবুলের সাথে সায়গনের তুলনাকে নাকচ করে দেন।

'এমনটা ঘটবে বলে আমি মনে করছি না,' জেনারেল মিলি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার হয়তো ভুল হতে পারে, কে জানে। ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা আপনি বলতে পারেন না...তবে তালেবান আর উত্তর ভিয়েতনামিজ বাহিনী এক না। এটা সে ধরনের পরিস্থিতি না।'

প্রতীকী তুলনা ছাড়াও সায়গন এবং কাবুলের পরিস্থিতির মধ্যে তারতম্যও রয়েছে।

সায়গনের পতন ঘটেছিল ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারের দু'বছর পর। অন্যদিকে কাবুলে থেকে আমেরিকাকে সরে আসতে হচ্ছে যখন তারা আফগানিস্তান ত্যাগ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া ১৯৭৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের ওপর ছিল বেশ সীমিত। কিন্তু আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে আর জনপ্রিয় না হলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা এখনও পরিষ্কার না।

ব্রিটেনের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ফেলপ্স বলছেন, 'আমার কোনো সন্দেহ নেই যে এই ঘটনায় বাইডেনের ক্ষতি হবে।'


'একে একটি পরাজয় হিসেবে দেখা হবে, দেখা হবে অপমান হিসেবে। ন্যায্য বা অন্যায্য যাই হোক, এই সিদ্ধান্ত ছিল তারই।'
সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ