Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তির বার্তা দিয়ে তালেবানের সংবাদ সম্মেলন, বললেন দেশ চলবে শরিয়া আইনে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১১:৫৬ পিএম

রাজধানী কাবুল দখলে নেওয়ার দু’দিন পর প্রথমবারের মতো দেশি-বিদেশি সাংবাদিক আর ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে শান্তির বার্তা ছড়ালেন আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামী গোষ্ঠী তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ত্বরিৎ অভিযানের মাধ্যমে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানী কাবুলের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালেবান শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চায়’ বলে ঘোষণা দেন জাবিহুল্লাহ। -বিবিসি, রয়টার্স

একই সঙ্গে ইসলামি বিধি-বিধান অনুযায়ী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তালেবান অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জানান তিনি। তালেবানের এই মুখপাত্র মুজাহিদ বলেন, নারীরা কাজের এবং পড়াশোনার অনুমতি পাবেন। তারা সমাজে অত্যন্ত সক্রিয় থাকবেন; তবে তা হবে ইসলামি কাঠামোর মধ্যে থেকে। তিনি বলেছেন, সাবেক সৈন্য এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না তালেবান। আফগান সরকারের সাবেক সৈন্যদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাহিনীর হয়ে কাজ করা ঠিকাদার এবং অনুবাদকদের জন্যও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কোনও ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। যেসব তরুণ এখানে বেড়ে উঠেছেন, তাদের আমরা যেতে দিতে চাই না। তারা আমাদের সম্পদ। কেউ তাদের দরজায় কড়া নেড়ে জিজ্ঞেস করবে না, তারা কাদের জন্য কাজ করছেন। তারা নিরাপদে থাকবেন। কেউ তাতে সমস্যার সৃষ্টি করবে না। কেউই আপনাদের ক্ষতি করবে না। কেউ আপনার দরজায় কড়া নাড়বে না।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে বেসরকারি গণমাধ্যম অবাধে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক কাঠামো অনুযায়ী তালেবান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বেসরকারি গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে, তারা সেটা চান। কিন্তু সাংবাদিকদের জাতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত নয়। দেশের ঐক্যের স্বার্থেই তাদের কাজ করা উচিত। জাবিউল্লাহ বলেন, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য তারা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যাতে সমাজের সব পক্ষই আমাদের সাথে থাকে; সেটি আমাদের যোদ্ধা-সমর্থক, আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব। শত্রুপক্ষের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা মারা গেছেন, সেটি তাদের নিজেদের দোষেই হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পুরো দেশ জয় করেছি। সরকার গঠন হয়ে গেছে, সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আল-কায়েদার যোদ্ধা অথবা অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানের মাটি কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যাতে মসৃণভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য তালেবানের যোদ্ধারা কাবুলের প্রবেশদ্বারে তাদের অগ্রযাত্রা থামানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন জাবিহুল্লাহ। কিন্তু নগরীর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরে প্রবেশ করা ছাড়া তালেবানের কোনও উপায় ছিল না, বলেছেন তিনি। জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্বতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বিশ বছর আগের তালেবানের সাথে আজকের তালেবানের বিশাল তফাৎ রয়েছে। আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেব তার সাথে ওই সময়কার ফারাক আছে। আর এটা বিবর্তনের ফসল।

যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা যখন আফগানিস্তান থেকে কূটনীতিক এবং নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সেই সময় তালেবানের প্রথম এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। তালেবানের যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলের চারপাশ ঘিরে ফেলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ‘রক্তপাত এড়াতে’ ওমানে পালিয়ে গেছেন রবিবার। কয়েক দিনের ঝটিকা অভিযানে দেশের মোট ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর পর কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পরদিন সোমবার আফগানিস্তানে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ওইদিন কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন কূটনীতিক এবং নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা বিমানে হুড়োহুড়ি করে ওঠার চেষ্টা করেন তালেবানের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হাজার হাজার আফগান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ