Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারে যোগ দিন

কাবুলে নতুন গভর্নর নিয়োগ, ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা, সহযোগিতায় প্রস্তুত চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক এবং রাশিয়া নারীদের প্রতি আহ্বান তালেবানের গোটা জাতির গর্বের মুহূর্ত : আজকের তালেবান ২০

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ/ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৮ এএম

আগ্রাসী বাহিনীর নৃশংসতা থেকে জাতিকে মুক্ত করার এই ক্ষণকে ‘গোটা জাতির এক গর্বের মুহূর্ত’ বলে আখ্যায়িত করে ‘আজকের তালেবান ২০ বছর আগের তালেবান নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন বিজয়ী দলের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। ঐতিহাসিক বিজয়ের পর গতকাল কাবুলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মত কথা বলছেন তিনি। তারা ক্ষমতায় আসার পর দেশ কীভাবে চলবে তার বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে ঘোষণা দিয়ে তিনি একটি পরিষ্কার রুপরেখা প্রকাশ করেছেন। এদিকে সরকারে যোগ দেয়ার জন্য নারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে তালেবানের পক্ষ থেকে। একই সাথে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে যোগদানেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্যে এই তালিবান নেতা বলেন, বিশ বছরের সংগ্রামের পর আমরা (দেশকে) মুক্ত করেছি এবং বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। গোটা জাতির জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত- তিনি বলেছেন। আফগানিস্তান যাতে একটা যুদ্ধক্ষেত্র বা সঙ্ঘাতের দেশ না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করেছি। তিনি বলেন, আমরা শত্রুতার অবসান চাই। আমরা ঘরে ও বাইরে কোথাও কোন শত্রু চাই না- বলেন জনাব মুজাহিদ। কাবুলে আমরা কোন বিশৃঙ্খলা চাই না। আমাদের যোদ্ধা, আমাদের জনগণ, সব পক্ষ, সব উপদল, সবার অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করব। তিনি বলেন, যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা মারা গেছে শত্রুপক্ষের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে। তারা প্রাণ হারিয়েছে নিজেদের দোষে। আমরা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গোটা দেশ জয় করে নিয়েছি। সরকার গঠনের পর সব কিছু পরিষ্কার হবে, তিনি জানান। সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং দেশের জনগণকে জানাব দেশ কোন আইনে চলবে, বলেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট বলতে চাই সরকার গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ সম্পন্ন হলে আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা দেব। দেশের সব ক’টি সীমান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে, তিনি বলেছেন।
তালেবান মুখপাত্র বলেছেন, বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমকে তালেবান প্রশাসনের অধীনে কাজ করতে হবে। আমি মিডিয়াকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা চাইব আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে মিডিয়া কাজ করবে। বেসরকারি মিডিয়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। মিডিয়ায় ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই প্রচার করা যাবে না।
মিডিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের যেখানে ঘাটতি থাকবে, দেশের কল্যাণে সেই ঘাটতি আপনারা পূরণ করবেন। কিন্তু মিডিয়াকে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে দেয়া হবে না, তিনি বলেন। সংবাদমাধ্যম দেশ ও জাতির ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করবে।
নারীর অধিকারের প্রশ্নে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আমরা নারীদের বাইরে কাজ করার এবং পড়াশোনার অনুমতি দেব, তবে সেটা হতে হবে আমাদের কাঠামোর মধ্যে। আমাদের সমাজে নারীরা খুবই সক্রিয় থাকবেন, সেটা আমাদের কাঠামো ও ব্যবস্থার মধ্যে থেকে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, কারোর ক্ষতি করা হবে না। আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চলার অধিকার আমাদের আছে। অন্য দেশের অন্য দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন নিয়ম, ভিন্ন বিধান থাকবে... আফগানদের মূল্যবোধের নিরীখে তাদের নিজস্ব আইন এবং বিধান আছে। শরিয়া আইনের অধীনে নারীর অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তিনি বলেন। নারীরা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়েকে আমরা এই আশ্বাস দিতে চাই যে, নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না, জানান জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
আফগানিস্তান আল-কায়দা যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ঝুঁকি আছে কিনা সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করলে জনাব মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তান কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘাঁটি হবে না। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আমরা এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অপহরণ ও হত্যার ঘটনা খবর প্রসঙ্গে তালেবানকে প্রশ্ন করা হলে তালেবান মুখপাত্র বলেন: সারা দেশে পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রয়েছে। কেউ কাউকে অপহরণ করতে পারবে না। প্রত্যেকদিন আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করব। তিনি বলেন, আমরা চাই না কেউ দেশ ছেড়ে যাক। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কোনরকম শত্রুতা বা প্রতিশোধ নেয়া হবে না। যারা বিদেশিদের জন্য অনুবাদকের কাজ করেছে বা বিদেশিদের সাথে চুক্তিতে কাজ করেছে তাদের প্রতি ভবিষ্যত আচরণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জনাব মুজাহিদ বলেন: কারোর প্রতি প্রতিশোধ নেয়া হবে না। যারা এদেশে বড় হয়ে উঠেছেন তারা এদেশেরই সন্তান। আমরা চাই না তারা চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ। তিনি আরও বলেন: কেউ কারোর বাসার দরজায় টোকা মেরে জিজ্ঞেস করবে না আপনি কাদের সাথে কাজ করতেন? তিনি আশ্বাস দেন, তারা নিরাপদ থাকবে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, কাউকে হয়রানি করা হবে না।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছে, বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বিশ বছর আগের তালেবানের সাথে আজকের তালেবানের বিশাল তফাত রয়েছে, বলেন মি. মুজাহিদ। আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেব তার সাথে সেসময়কার তফাত রয়েছে। এটা বিবর্তনের ফসল।
কান্দাহারে মোল্লা বারাদারসহ শীর্ষ নেতারা : তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান মোল্লা বারাদার তালেবান শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আফগানিস্তানের কান্দাহারে পৌঁছেছেন। মি. বারাদার তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতাদের একজন। তারা কোথা থেকে সেখানে পৌঁছেছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে বেশিরভাগ নেতাই কাতারের দোহায় ছিলেন এবং মার্কির বাহিনী প্রত্যাহারের পর দেশ শাসনের রূপরেখা নিয়ে আমেরিকানদের সাথে আলোচনা করছিলেন।
তালেবানের যোদ্ধাদের কারোর বাড়িতে প্রবেশ না করার নির্দেশ : তালেবান তাদের যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা কারও বাড়িতে প্রবেশ না করে এবং রাস্তায় কোন দূতাবাসের গাড়ি চলাচলে বাধা না দেয়, বিশেষ করে রাজধানী কাবুলে। এ নির্দেশ জারি করেছেন তালেবানের উপনেতা মোলাভি ইয়াকুব। তিনি নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করা এক বার্তা জারি করেছেন। তালেবান আফগানিস্তানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা শুরু করেছে। সব সরকারি কর্মচারীদের তারা কাজে ফিরতে বলেছে এবং তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। যারা লুটপাটের সাথে জড়াবে ধরা পড়লে তাদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। কাবুলের অনেক জায়গায় গতকাল রুটির এবং ওষুধের দোকান খুলেছে এবং রাস্তা ঘাটে আরও বেশি গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
কাবুলে একটি টিভি অনুষ্ঠানে দেখা গেছে একজন নারী উপস্থাপক একজন তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। তালেবান বিশ বছর আগে যখন ক্ষমতায় ছিল তখন এটা অকল্পনীয় ছিল। প্রথম সারির টিভি চ্যানেল, টোলো নিউজ তাদের এক নারী সংবাদদাতার ছবি টুইট করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রিপোর্টিং করছেন। তবে ক্যাফে, দোকানে বা গাড়িতে এখন আর কোন গান বাজতে শোনা যাচ্ছে না। বড় বড় পোস্টারে বা বিজ্ঞাপনে যেসব নারীর মুখ আছে, সেগুলো রঙ দিয়ে মুছে দেয়া হচ্ছে।
এ যুদ্ধ পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য রেখে যেতে চাই না : বাইডেন
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঠিক ছিল বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান খুব সহজে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় দেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। সেনা প্রত্যাহার ঘিরে বিশৃঙ্খলা সত্তে¡ও জো বাইডেন বলছেন, 'আমেরিকান সেনারা এমন একটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা যেতে পারে না, নেয়া উচিৎও না, যেখানে আফগান সৈন্যরা নিজেরাই লড়াই করতে ইচ্ছুক না। এই সময়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশগ্রহণে ইতি টানার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে উল্লেখ করেন জো বাইডেন।
১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্তির দিনটির আগেই আফগানিস্তান থেকে সব আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করার জন্য গত এপ্রিল মাসে নির্দেশ দিয়েছিলেন মি. বাইডেন।
সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়ে তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সেখান থেকে আসার ব্যাপারে আসলেই কখনো কোন আদর্শ সময় ছিল না। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন তুলেছেন, 'সেখানে আর কত আমেরিকানকে জীবন দিতে হবে?
রিপাবলিকান সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন, আফগানিস্তানে আমরা যা দেখছি, তা চরম একটা বিপর্যয়। বাইডেন প্রশাসনের এভাবে পিছু হটায় যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদায় একটা ক্ষত থেকে যাবে। তবে মি. বাইডেন তার বক্তৃতায় বলেছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন কখনোই দেশ গঠন হওয়া উচিৎ ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে যখন তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ২০০৯ সালে তিনি আফগানিস্তানে নতুন সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেছিলেন। মি. বাইডেন মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এই বছরের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ই শুরু হয়েছিল। তিনি বলছেন, তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট যিনি আমেরিকার দীর্ঘতম লড়াই চালিয়ে গেছেন, কিন্তু পঞ্চম প্রেসিডেন্টের কাঁধে তিনি সেটা দিতে চান না। আফগানিস্তানে আরও কিছুটা সময় দিলে বিশাল কোন পরিবর্তন আসবে, এমন দাবি করে আমেরিকান জনগণকে আমি বিভ্রান্ত করতে চাই না। তবে গত মাসেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন যে, তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। অবশ্য সোমবার তিনি বলেছেন, আমরা যেভাবে ধারণা করেছিলাম, তার চেয়ে খুব দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতামত জরিপে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকান আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার সমর্থন করছেন। অনেকে এই প্রত্যাহারকে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গন থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই সময় মি. বাইডেন ছিলেন একজন কমবয়েসী সিনেটর।
কাবুলে নতুন গভর্নর নিয়োগ
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর রাজধানী কাবুলে নতুন গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে তালেবান প্রশাসন। নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরের নাম মৌলভি আবদুর রহমান মনসুর। কাতারে থাকা তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল তারা আফগানিস্তানে একটি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা ও নারীদেরকে তাদের সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, রাশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক এবং চীন তালেবান কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
কাবুলের নতুন গভর্নরের পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি শাহিকোট যুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী মৌলভি সাইফুর রহমান মনসুরের ভাই। তার বাবা মৌলভি নাসরুল্লাহ মনসুরও আফগানিস্তানে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর মৌলভি মনসুর বলেছেন, রাজধানী কাবুলের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেসব দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট করছে, তাদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া কাবুলের বাসিন্দাদের জন্য একটি সমন্বিত হটলাইন নম্বর চালুর কথা জানিয়েছে তালেবান প্রশাসন। তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামঙ্গানি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা ও নারীদেরকে তাদের সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তালেবানরা রাজধানী কাবুলে সৃষ্ট উদ্বেগ ও উত্তেজনা প্রশমন করার চেষ্টা করছে। ঘোষণা দিয়েছেন। এটিই হচ্ছে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে আসা প্রথম ঘোষণা। তালেবানরা কাবুল দখল করার পর থেকেই রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সোমবার কাবুলের বিমানবন্দরে প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়, যখন মানুষ তালেবান শাসন থেকে পালানোর চেষ্টা করে।
কাবুলে সংঘাত বা মারামারির কোন বড় খবর না থাকলেও, বিদ্রোহীদের দখলে কারাগার খালি করা এবং অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর অনেক বাসিন্দা বাড়িতে রয়ে গেছে এবং আতঙ্কিত রয়েছে। সামঙ্গানি বলেন, ‘ইসলামিক আমিরাত (তালেবানরা নিজেদের এই নামে ডাকে) নারীদের বঞ্চিত করতে চায় না। তাদের শরীয়াহ আইন অনুযায়ী সরকারি কাঠামোতে থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের কাঠামো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, একটি সম্পূর্ণ ইসলামী নেতৃত্ব থাকা উচিত এবং সব পক্ষের যোগদান করা উচিত।’ সামানগানি বলেন, আমাদের জনগণ মুসলমান এবং আমরা এখানে তাদের জোর করে ইসলামের জন্য আসিনি।
এদিকে, তড়িঘড়ি ও বিশৃঙ্খলভাবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ২০ বছর পর তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসায় আফগানিস্তানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর প্রভাব নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে। কারণ, রাশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক এবং চীন সকলেই বিভিন্ন মাত্রার উৎসাহের সাথে তালেবান কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু তালেবানের প্রত্যাবর্তন সেই দেশগুলোতে আশঙ্কাও জাগিয়েছে যে, আফগানিস্তান আবার বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে যা তাদের দেশেও হামলা চালাতে পারে। পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে আফগান তালেবানকে সহায়তা করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, তালেবানরা ‘আফগানিস্তানে মানসিক দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলেছে’। একটি প্রধান ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, ‘তালেবান তাদের দেশকে পরাশক্তি থেকে মুক্ত করেছে।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, চীন ‘আফগানিস্তানের সাথে ভাল-প্রতিবেশী, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক’ গড়ে তুলতে প্রস্তুত। পাশাপাশি তালেবানও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, আফগানিস্তান ‘চীনের জন্য ক্ষতিকারক কাজের’ মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে না। এবং রাশিয়া, যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে ঘিরে তার বেশিরভাগ পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছে, তারা তালেবানদের ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে সতর্কতার সাথে ও রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আফগানিস্তানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দূত জমির কাবুলভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘যদি আমরা সহকর্মী এবং অংশীদারদের আলোচনার তুলনা করি, আমি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তালেবানরা কাবুলের পুতুল সরকারের চেয়ে চুক্তিতে পৌঁছতে অনেক বেশি সক্ষম।’ সূত্র : বিবিস, দ্য গার্ডিয়ান। সূত্র : ডন।



 

Show all comments
  • H M Harunur Rashid ১৮ আগস্ট, ২০২১, ২:৫৭ এএম says : 0
    আল্লাহর বিধানকে মেনে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে উভয় জগতে কল্যাণ ও শান্তি এটা চিরন্তন সত্য, এতে কারো ভাল লাগা আর খারপ লাগা ও যৌক্তিকতার কোন প্রশ্নই আসেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahid M S Zaman ১৮ আগস্ট, ২০২১, ২:৫৭ এএম says : 0
    এখন দেশটা সুন্দর করে ইসলামিক আইন অনুসারে চালান তাহলে শুধু আফগানিস্তান নয় সারা বিশ্বই আপনাদের নিয়ে গর্ব করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Rakib Hasan ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
    হে বীর মুজাহিদ সালাম তোমাদের,,,আল্লাহ তোমাদের কে সঠিক ভাবে রাষ্ট্রকে ইসলামীক আইনে পরিচালনার করার তৌফিক দিক
    Total Reply(0) Reply
  • MD Akram Prodhan ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
    দাসত্ব থেকে মুক্ত আফগানিস্তানের জনগন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম উদ্দীন আহমেদ ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
    তালেবান মুজাহিদদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা হযরত ওমরের যুদ্ধনীতি অনুসরণ করেছে! এখন দেখার বিষয় তারা কতটুকু হযরত ওমরের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করে! তাদের স্বাধীনতার লড়াই সফল হওয়ায় অভিনন্দন জানাই! পরবর্তী কর্মকান্ডের জন্য শুভ কামনা রইল!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ishak ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৯ এএম says : 0
    তালেবান জয় পায়নি জয় পেয়েছে মুসলিম উম্মাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
    মাশাআল্লাহ্। শুভ কামনা রইল।
    Total Reply(0) Reply
  • FAHMEE ZAMAN ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৫:২০ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ইসলামের বিজয় দান করেছে। শয়তান পরাজিত হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন ইসলামের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হোক এটাই আমাদের দোয়া এবং কামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mojibur Rahman ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৭:৩৮ এএম says : 0
    Congratulations new Government.All the best
    Total Reply(0) Reply
  • Moktar ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৯:৫৮ এএম says : 0
    মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে আমি হাজারো সালাম জানাই তালেবান নেতাদের
    Total Reply(0) Reply
  • Mofizul Islam ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৯:৫৮ এএম says : 0
    তালেবান বিশেষ করে আফগানিস্তানের জনগণের জন্য গর্বের বিষয়
    Total Reply(0) Reply
  • Mawlana Alauddin Kademul Kuran ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:১০ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে সেই তৌফিক দান করুক৷
    Total Reply(0) Reply
  • তাজউদ্দীন আহমদ ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:১০ এএম says : 0
    কথাতো ভালোই, কাজে মিল থাকলেই হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ