মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ‘ফিক্সিং ফেইল্ড স্টেট্স’ এর লেখক কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী আশরাফ গনি তালেবানদের কাছে সঙ্ঘাতবিহীন ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করার আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে একটি মারাত্মক বিশৃঙ্খলা এবং ভীতিকর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে পালিয়েছেন। সমালোচকরা তাকে কাবুলের বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করে বলেছেন যে, তিনি তার জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আফগানিস্তানে তার ব্যর্থতা প্রায় ২০ বছর পর আবারও মৌলবাদী তালেবানদের ফিরিয়ে এনেছে।
দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম টোলো টিভির কর্নধার এবং তালেবানদের সাথে শান্তি আলোচনার সদস্য সাদ মোহসেনি বলেছেন, ‘তিনি একজন কাপুরুষ, এবং এই শূন্যতায় তার প্রস্থানই আজ আমাদের এই পরিস্থিতির কারণ।’ লন্ডন থেকে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের এবং মানুষ হত্যার দৃশ্যগুলো তার কর্মফল।’ গনি আফগানিস্তানের ক্ষমতার দালাল, জাতিগত বিভাজন এবং কর্ম সম্পাদনে ঘুষের উপর নির্ভরশীলতা ও আফগান রাজনীতির অন্তহীন তোষামোদী প্রতিরোধে খুব কমই কাজ করেছেন। তার বদমেজাজ এবং নসিহত দেওয়ার প্রবণতা বিষয়গুলিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। তিনি তার আমেরিকান সমর্থিত হাজার কোটি ডলার মূল্যের সেনাবাহিনীকে অবহেলা করেছেন, তার সৈন্যদের রসদ বিহীন করে ক্ষুধার্ত রেখেছেন, যার ফলে আফগান বাহিনী তালেবানদের চাপ প্রয়োগের সাথে সাথেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেসব নেতৃস্থানীয় যোদ্ধারা তার জন্য সম্মান এবং সমবেদনা সহকারে যুদ্ধ করতে পারতেন, তাদের সাথে গনি অসদাচরণ করেছেন। তাই তারাও আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে সামান্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গনির দুর্বব্যহার ক্রমাগত বেড়েই গেছে। মন্ত্রীরা মন্ত্রিপরিষদ মিটিংয়ের সময় বহুবার তাদের উপর গনির চিৎকার করার বর্ণনা করেছেন। যাদের সাথে তার কাজ করার প্রয়োজন ছিল, তিনি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে তাদের অপদস্থ করেছেন। ৮ দিন আগে দেশ ত্যাগ করা তার সাবেক অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা বলেন, ‘তার মনে একটি আফগানিস্তান ছিল, যার অস্তিত্ব তিনি ব্রিফিংয়ে পেতেন।’
গনি তার প্রশাসনের উপরের অংশের দুর্নীতির প্রতিবেদনগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একই ধরনের দুর্নীতির বিকাশের পথ করে দিয়েছিলেন, যা তিনি নিমূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি নিজেও এতে লিপ্ত ছিলেন। সোমবার কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে যে, আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে গনির সাথে ৪ গাড়ি ভর্তি টাকা ছিল।
তার দুটি নির্বাচনী বিজয়ই ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রকে গনির গণতান্ত্রিক বৈধতার মুখোশটি রক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তবুও গনি বরাবরই আত্ম-সচেতনতার একটি উল্লেখযোগ্য অভাব প্রদর্শন করেছেন। পায়েন্দা বললেন, ‘মানুষ তার মেজাজকে ভয় পেয়েছিল, উপহাসকে ভয় পেয়েছিল। তাই মানুষ সৎ মতামত দিতে ভয় পেত। ভালো মানুষগুলি চলে গেছে, যারা ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল, তারা হয় অতি অনুগত অথবা খুব দুর্নীতিগ্রস্ত।’
এমনকি শেষের দিকে যখন তার দেশ ভেঙে পড়ছিল, গনি আফগানিস্তানের আর্থিক ডিজিটালাইজেশন এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সংস্কারে মতো শৌখিন মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। গনির প্রাক্তন মন্ত্রীদের মধ্যে একজন একটি টেক্সট বার্তায় লেখেন, ‘আমি বিস্মিত হচ্ছি কিভাবে তিনি তার জনগণের প্রতি এমন বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে বাঁচতে পারেন।’
আশরা গনির পালিয়ে যাওয়ার এবং এটিকে আফগান জনগণের প্রতি আত্মত্যাগের উদাহরণ হিসেবে তার মন্তব্য আফগানীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে, তার ২০১৬ সালে বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করে। যেসব আফগানদের তখন ইউরোপে পালিয়ে আসছিল, সেই ক্লিপে যখন তাকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি বলেছিলেন যে, তারা তাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে এবং আফগানিস্তানের ভবিষ্যতকে ক্ষুন্ন করছে। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কোন সহানুভূতি নেই।’ সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।