Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তান নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকবে পাকিস্তান : কুরেশি

‘বিশৃঙ্খল’ সৈন্য প্রত্যাহারের সমর্থনে বাইডেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৮ এএম

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আফগানিস্তানের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঠিক ছিল বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান খুব সহজে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় দেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন তিনি। এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি গতকাল জোর দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের উন্নয়নে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøংকেনের সাথে টেলিফোনিক আলাপকালে কুরেশি এই সংকল্প ব্যক্ত করেন, যেখানে উভয় পক্ষ আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। সপ্তাহান্তে তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পরে প্রথম দেয়া ভাষণে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তালেবানদের অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হয়েছে। টেলিফোনে কথোপকথনের সময়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করেছেন যা স্বল্প সময়ের মধ্যে অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং সহিংসতা এড়ানোর কথা উল্লেখ করেছে।

কুরেশি বলেন, ‘আফগানিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি ক‚টনৈতিক মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, মিডিয়া এবং অন্যান্যদের কর্মী এবং কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার সুবিধার্থে পাকিস্তানের প্রচেষ্টার বিষয়ে সচিব বিøংকেনকে অবহিত করেন। পাকিস্তান-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বিস্তৃত, দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যাতে শান্তি, গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সংযোগে রয়েছে।

পরে একটি টুইটে কুরেশি বলেন, পাকিস্তান সবসময় আফগানিস্তানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে রয়েছে আফগান নেতৃত্বাধীন এবং আফগান-মালিকানাধীন শান্তি প্রক্রিয়াকে সহজতর করার প্রচেষ্টা এবং অন্যান্য অনেক অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, কাবুলে আমাদের মিশন ভিসা প্রদান, ক‚টনীতিক, এনজিও কর্মী এবং মিডিয়া কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

এদিকে, সেনা প্রত্যাহার ঘিরে বিশৃঙ্খলা সত্তে¡ও জো বাইডেন বলছেন, ‘আমেরিকান সেনারা এমন একটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা যেতে পারে না, নেয়া উচিৎও না, যেখানে আফগান সৈন্যরা নিজেরাই লড়াই করতে ইচ্ছুক না।’ এই সময়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশগ্রহণে ইতি টানার ‘সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্তির দিনটির মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সব আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করার জন্য গত এপ্রিল মাসে নির্দেশ দিয়েছিলেন বাইডেন। সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়ে তিনি বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সেখান থেকে আসার ব্যাপারে আসলেই কখনো কোন আদর্শ সময় ছিল না।’ ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সেখানে আর কত আমেরিকানকে জীবন দিতে হবে?’

তালেবান ক্ষমতা নেয়ায় আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর প্রায় ২০ বছরের উপস্থিতির অবসান ঘটেছে। প্রায় এক মাস আগে তালেবানের অভিযান শুরু হওয়ার পর কাবুল ছিল সর্বশেষ শহর, যেটি তাদের নিয়ন্ত্রণে গিয়েছে। সর্বশেষ কয়েকদিনে যেভাবে তারা দ্রুত একের পর এক এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, তা অনেক পর্যবেক্ষককে বিস্মিত করেছে।

রিপাবলিকান সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আফগানিস্তানে আমরা যা দেখছি, তা চরম একটা বিপর্যয়। বাইডেন প্রশাসনের এভাবে পিছু হটায় যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদায় একটা ক্ষত থেকে যাবে।’ তবে বাইডেন তার বক্তৃতায় বলেছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন কখনোই দেশ গঠন হওয়া উচিৎ ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে যখন তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ২০০৯ সালে তিনি আফগানিস্তানে নতুন সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেছিলেন। বাইডেন মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এই বছরের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ই শুরু হয়েছিল। তিনি বলছেন, তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট যিনি আমেরিকার দীর্ঘতম লড়াই চালিয়ে গেছেন, কিন্তু পঞ্চম প্রেসিডেন্টের কাঁধে তিনি সেটা দিতে চান না।

তবে গত মাসেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন যে, তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। অবশ্য সোমবার তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে ধারণা করেছিলাম, তার চেয়ে খুব দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটে গেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের মতামত জরিপে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকান আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার সমর্থন করছেন। অনেকে এই প্রত্যাহারকে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গন থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই সময় বাইডেন ছিলেন একজন কমবয়েসী সিনেটর। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস। সূত্র : ডন, ট্রিবিউন।



 

Show all comments
  • Md Mizan Rahman ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
    অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসেছে আফগানিস্তান। আফগানদের জীবন মানে শুরু হয়েছে আলোর বিচ্ছুরণ। তাই দেখে চামচিকাদের চেচামেচি বেড়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Usama Faizan ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
    InshaaAllah Asha kori Taleban islamic shoriyah proyuger maddhome deshe shanti firiye anbe shokol badha bipotti eriyee shamne egiye jabe
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Shikder ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
    বর্তমান বিশ্বে সব থেকে সক্ষম, শক্তিশালী ও কার্যক্ষম সংগঠন তালেবান, সোবিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা কে পরাজিত করা সংগঠন
    Total Reply(0) Reply
  • Hasanat Alimoon Nahin ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:১১ এএম says : 0
    একজন আদর্শ নেতার মত বক্তব্য। আলহামদুলিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • বাশীরুদ্দীন আদনান ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫৩ এএম says : 0
    মুসলমানদের সাথে যারাই লাগবে তারাই পরাজিত হবে এটাই স্বাভাবিক
    Total Reply(0) Reply
  • Manzoor Ahmad Tarafdar ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫৪ এএম says : 0
    জঙ্গি দমনের নামে আমেরিকার বিভিন্ন দেশ দখল করে লুটপাট চালানোর দিন মনে হয় শেষ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ