Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাক্কারজনক পরাজয়

আমেরিকার অবিশ্বস্ততায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ভারত

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৪ পিএম | আপডেট : ৯:৪৯ পিএম, ১৬ আগস্ট, ২০২১

তালেবানরা রবিবার আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে। একাধিক প্রদেশে দুই সপ্তাহের লড়াইয়ের পর কোন প্রতিরোধ ছাড়াই কাবুলের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে তারা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে তালেবান হামলা এবং প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাকারজনক পরাজয় ও প্রস্থানের পর আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার ২০ তম বার্ষিকীতে আফগানিস্তানে তালেবানের পতাকা উড়তে যাচ্ছে।

‘শান্তি, অগ্রগতি এবং নিরাপত্তার বিশ্বস্ত অংশীদার’ যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের নির্মূল করতে সুদীর্ঘ ২০ ধরে ২৩শ’ এরও বেশি সৈন্য হারিয়েছে। এই যুদ্ধে ২০ হাজারেও বেশি সৈন্য আহত এবং লাখ লাখ আফগান নিখোঁজ ও নিহত হয়েছে। দেশটিতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে গড়ে তোলা সামরিক সম্পদ এখন তালেবানদের দখলে। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি রোববার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান পতাকাটি অর্ধনমিত, মার্কিন কর্মী এবং অন্যান্য আফগান কর্মকর্তারা নিরাপত্তার আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ করতে কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন।

তালেবানদের প্রত্যাবর্তন মানে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত মৌলবাদী আইন এবং আদিম উপজাতীয় সংস্কৃতির পুনরুত্থান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের অগ্রগতির বছরগুলোকে পিছনে ঠেলে দেয়া। তারপরেও গত বছর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিলেন। সেসময় আফগান সরকারকে কেবল এ চুক্তির বাইরেই রাখা হয়নি, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি কাবুলকে তালেবানদের শর্ত পূরণের জন্য ৫ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দিতে বলেছিল।

বিশ্বের কাছে ট্রাম্পের বার্তাটি বেশ পরিষ্কার ছিল: যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারকে চলন্ত গাড়ির নিচে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ২০ বছর আগে যাদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ শুরু করেছিল, তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করেছে। তবে, উদ্বিগ্ন বিশ্বকে পরবর্তী নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের ক্ষমতার উদাহরণ দিয়ে নয়, আমাদের উদাহরণের শক্তিতে নেতৃত্ব দেব। আমরা শান্তি, অগ্রগতি এবং নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত অংশীদার হব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প নামক রোলার কোস্টারের পর আরও একবার বিশ^কে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করে তার উদ্বোধনী ভাষণে বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের জোটগুলি মেরামত করব এবং আবার বিশ্বের সাথে যুক্ত হব।’

বাইডেন বিশ্ব আধিপত্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে ঠেকানোর জন্য যখন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারত নিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোয়াড নামক একটি অনানুষ্ঠানিক জোট গড়ে তুলেছেন, তিনি তখন একই সাথে ট্রাম্পের আফগান নীতি, যেটিকে আমেরিকানরা ‘চিরন্তন যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে, সেটিকে সমুন্নত রেখে আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য কাজ করেছেন।

মার্কিন নীতিনির্ধারকরা বিশ্ব মানচিত্রকে কিভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তা কারোর বোধগম্য নয়, তবে এশিয়ার দেশগুলো এবং যাদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন মিত্র, তারা এখন নিজেদেরকে অনেক বেশি সহিংস মৌলবাদের ঝুঁকির সম্মুখীন বলে মনে করছে। কারণ পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র যা শুরু করেছিল, তা শেষ করার মতো শক্তি দেখাতে পারেনি।
এখন আফগানিস্তান তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরো অঞ্চলের জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে সহিংস মৌলবাদের একটি শক্তিশালী নতুন আস্তানা তৈরির লগ্ন, যা পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মৌলবাদী যোদ্ধাদের টেনে এনেছে, এমনকি আইএসআইএস-এর পুনর্গঠনের আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলেছে, যারা ২০১১ সালে ইরাকে আরেকটি বিপর্যয়কর মার্কিন প্রস্থান অনুসরণ করেছিল।

আফগানিস্তানে মৌলবাদী তৎপরতা বৃদ্ধির বিপদ আফগান-সীমান্তবর্তী ৬টি দেশের পাশাপাশি ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী অঞ্চলগুলির জন্য বহুগুণ বেশি, বিশেষ করে যেখানে বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যা, অসন্তুষ্ট মুসলিম তারুণ্য এবং মিন্দানাও ও কাশ্মীরের মতো বিদ্রোহ চলমান। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন, যেখান থেকে হাজার হাজার যুবক আইএসআইএসে যোগ দিয়েছে, দেশগুলির সরকার সিরিয়া থেকে তাদের প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কায় রয়েছে।

চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক শত্রুতায় জড়িত ভারত এই অঞ্চলে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র এবং এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নীতির ঝুঁকির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। সীমান্তের আশেপাশে একটি মৌলবাদী সহিংস মুসলিম রাষ্ট্রের উত্থান এখন ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদির সরকারের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি ডেকে এনেছে, যারা দেশটির মুসলিম জনসংখ্যার প্রতি চরম বৈষম্যের একটি সুস্পষ্ট রেকর্ড তৈরি করেছে।

মার্কিন তৎপরতা যে তার মিত্রদের জন্য বিপদ তৈরি করে, এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি দ্রুত মোড় নেওয়ার সময় তাদের সম্পূর্ণ ক্ষয়-ক্ষতি সেই উদাহরণ তুলে ধরেছে। ভিয়েতনাম এবং ইরাকের মতো আফগানিস্তানও আমেরিকার অসৎ চিন্তাধারা প্রসূত হস্তক্ষেপ এবং তার বেপরোয়া পশ্চাদপসরণসহ ধ্বংসযজ্ঞের আরও একটি স্মারকে পরিণত হয়েছে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রস্থান এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন সে এশিয়ায় তার নেতৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে এবং চীনের সাথে তার পরাক্রমশীলতার প্রতিযোগিতায় এই অঞ্চলের দেশগুলিকে যে কোনও একটি পক্ষ বেছে নিতে চাপ দিচ্ছে।

অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবিশ্বস্ততাকে তুলে ধরতে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক হু জিজিন টুইট করেছেন, ‘জনাব ব্লিঙ্কেন, আপনার প্রিয় বুলিটি কোথায় গেল? আপনি আফগান জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না? শক্তির খেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করতে বেইজিংয়ের সম্ভবত আর কঠোর চেষ্টার প্রয়োজন নেই। বাইডেনের শক্তির আফগান উদাহরণ প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করে দিয়েছে। তথ্য সূত্র: টাইম, ফাইনান্সিয়াল টাইম্স, আল জাজিরা।

 



 

Show all comments
  • Md Jahid ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:০৯ পিএম says : 0
    আফগানের ক্ষমতা লোভী রা অন্য দেশের উপর ভর করে অন্যায় ভাবে তালেবানদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল অনেক আফগানদের হত্যা করেছিল জুলুম নির্যাতন করেছিল কারাগারে বন্দি করেছিল যখন অন্য দেশগুলো এখন তাদের একা ছেড়ে চলে গেল এখন তারা পালানোর পথ খুঁজছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদুললাহ চৌধুরী ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:১০ পিএম says : 0
    যারা দখলদার পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের পক্ষে এতোদিন রাজাকারের ভূমিকা পালন করেছে - তারা পালিয়ে যাচ্ছে । খুনী ডালীম এবং মোস্তাকের মতো দেশ দ্রোহী মীর জাফররা পালিয়ে যাচ্ছে । এতে তাদের মিত্ররা খুব টেনশনে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Arfat ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:১০ পিএম says : 0
    পশ্চিমাদের পা চাটা দালালদের আফগান থেকে পালানোর দৃশ্য... এ যেন ঈদের সময় বাংলাদেশের সদরঘাট ও মাওয়াঘাটের দৃশ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Alim Sorkar ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:১১ পিএম says : 0
    যারা যারা তালেবানের বিরুদ্ধে অবস্হান নিছিল তারাই এখন পলায়ন করতাছে।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Sa Mansoor Bahadur ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:১১ পিএম says : 0
    বিশবছর যারা হানাদারদের সাহায্য করে হাজার-হাজার নিরহ ছাত্র আর সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল তারা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা পালাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Ahmad ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:২২ পিএম says : 0
    আমি ইনকিলাব পত্রিকাকে ঘৃনা করি। ...
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Ahmad ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:২৮ পিএম says : 0
    ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কে বাদ, ২০ বছরের কারবালা প্রান্তরের পর আজ ইসলাম জিন্দা হলো, শয়তান গুলোর গায়ে চুলকানি শুরু হলো।
    Total Reply(0) Reply
  • Ibn Abdur Rahman Official ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১০:৪৭ পিএম says : 0
    তালেবান জিন্দাবাদ যুক্তরাষ্ট্র মুর্দাবাদ দখলদার মুক্ত আফগানিস্তান জিন্দাবাদ কবে যে লিখতে পারব, ভারতীয় দালাল মুক্ত বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Akkas ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১১:০২ পিএম says : 0
    তালেবানদের উচিত আমেরিকার সৈন্যদের কবর রচনা করা। এবং এর সাথে ভারতের দালালদের শায়েস্তা করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ