মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার দুই দশক পর ফের দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। দীর্ঘ ২০ বছরের সামরিক অভিযান শেষে আমেরিকান এবং অন্যান্য বিদেশী সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগের সাথে সাথে কাবুল তথা আফগানিস্তানের দখল নিল দলটি।
মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে যে তালেবান আড়াই দশক আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিয়েছিল; বিদেশি সৈন্যদের আক্রমণে পাঁচ বছরের মধ্যে ক্ষমতা হারাতে হলেও নতুন নেতৃত্বের অধীনে দুই দশক পর আবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক শহর দখলের পর গতকাল রোববার তালেবান কাবুলের দখল করার পর কট্টর এই ইসলামী সংগঠনের বর্তমান নেতাদের নাম আসছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে।
এই নেতাদের মধ্যে প্রয়াত মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবের নাম আসছে; যদিও তালেবানের শীর্ষনেতারা বরাবরেই অপ্রকাশ্য থেকেই তৎপরতা চালান।
হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা : তালেবানের বর্তমান শীর্ষনেতা হিসেবে হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে মনে করা হয়। বাহিনীতে তার পরিচয় ‘বিশ্বাসীদের নেতা’। রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় যে কোনো বিষয়েই তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
২০১৬ সালে তৎকালীন নেতা মোল্লা মানসুর আখতার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর আখুন্দজাদা নেতৃত্বে আসেন। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। এর আগে আখুন্দজাদা বড় ধরনের নেতা ছিলেন না, মূলত ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবেই বাহিনীতে ছিলেন। ২০১৬ সালের আগে ১৫ বছর তাকে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের একটি মসজিদে তাকে ইমামতি করতে দেখেছেন অনেকে।
আল কায়দার শীর্ষনেতা আইমান জাওয়াহিরির আশীর্বাদই তাকে তালেবানের শীর্ষনেতার আসনে বসিয়েছে বলে মনে করা হয়। ন্যাটো বাহিনীর হামলা, মোল্লা ওমরের মৃত্যুর পর কোনঠাসা থাকা অবস্থায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলে তালেবানকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন আখুন্দজাদা। মোল্লা ওমরের মতো তার সম্পর্কেও খুব বেশি কিছু জানা যায় না। ইসলামী বিভিন্ন দিবসে বিবৃতি আর বার্তার খবরগুলোই কেবল আসে।
মোল্লা বারাদার : মোল্লা বারাদারমোল্লা বারাদারতালেবানের উৎসভূমি কান্দাহার রাজ্যের বাসিন্দা মোল্লা বারাদার। তালেবান বাহিনী প্রতিষ্ঠায় তারও রয়েছে অবদান। অন্য অনেক আফগানদের মতো গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারাদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি। জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন।
২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর দলটির যে ক্ষুদ্র দল তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর সঙ্গে সমঝোতা করতে চিঠি দিয়েছিল, সেই দলে বারাদারও ছিলেন বলে মনে করা হয়।
২০১০ সালে পাকিস্তানে আটক হয়ে কারাগারে ছিলেন বারাদার। কিন্তু ২০১৮ সালে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনা গতিশীল করতে ওয়াশিংটনের চাওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন বারাদার। চুক্তিপত্রে তালেবানের পক্ষে সইটিও তিনি করেন।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি : সিরাজউদ্দিন হাক্কানিসিরাজউদ্দিন হাক্কানিসোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ের ‘মুজাহিদ’ নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানীর ছেলে হলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। তিনি একইসঙ্গে তালেবানের উপপ্রধান, আবার হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান।
বলা হয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্রই এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল এবং সোভিয়েত বাহিনীর উপর দুর্র্ধষ নানা হামলায় জড়িয়ে আছে এই উপদলের নাম। পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনীর উপরও সমানে হামলা চালিয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক।
গত কয়েক বছরে কাবুলে যে কয়টি বড় ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে, তা হাক্কানি নেটওয়ার্কেরই চালানো বলে মনে করা হয়। আফগান কর্মকর্তাদের হত্যা, বিদেশি সৈন্যদের অপহরণের অভিযোগও রয়েছে এই দলটির বিরুদ্ধে।
মোল্লা ইয়াকুব : তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের উপপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। তিনি বাহিনীর সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্বও পালন করেন। যুদ্ধের কৌশল ঠিক করা, অভিযান পরিচালনা করা তার কাজের অংশ।
বাহিনীতে শ্রদ্ধার পাত্র মোল্লা ইয়াকুব, তা অনেকটা তার প্রয়াত বাবার কারণে। যে কারণে দলে বিভেদ কিংবা কোন্দলের সময় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান তিনি।
শের আব্বাস স্তানিকজাই : দুই দশক আগে তালেবানের সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। তিনি গত এক দশক ধরে কাতারের দোহায় থাকছেন। সেখানে তালেবানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনয় তালেবানের প্রতিনিধি দলে ছিলেন তিনি। তালেবানের হয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান তিনি।
আব্দুল হাকিম হাক্কানি : নানা আলোচনায় তালেবানের নেতৃত্ব দেন আব্দুল হাকিম হাক্কানি। দলের ধর্মীয় কাউন্সিলের প্রধান তিনি। বলা হয়, নিজের বাহিনীতে আখুন্দজাদা যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন, সে হলেন হাকিম হাক্কানি।
তালেবান নেতারা কোথায়-কীভাবে থাকেন, তা জানা যায় খুবই কম। তাদের নেতা মোল্লা ওমরের ক্ষেত্রেও তাই ছিল। ২০১৩ সালে মোল্লা ওমরের মৃত্যু হলেও তা দুই বছর গোপন ছিল।
তালেবানের জন্ম অর্ধ শতক আগে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। পশতু ভাষায়, তালেবান শব্দের অর্থ ছাত্ররা। বলা হয়, সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তালেবান গড়ে তোলায় ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, আর তাতে সহায়তা করে পাকিস্তান। তালেবানের প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী শহরে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।