মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তালেবান বাহিনী। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। বর্তমানে কাবুল থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে রয়েছে তারা। শুক্রবার লগার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই আলম দখলের মধ্য দিয়ে তারা এই মাইলফলক অর্জন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারা কাবুলে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।
দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টেনে মার্কিন ও ন্যাটোর সেনা যখন প্রত্যাহার চলছে, তখন থেকেই তালেবান গোষ্ঠী নিজেদের শক্তির সর্বোচ্চটা জানান দিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের মধ্যেই দেশটির নিরাপত্তা নজিরবিহীনভাবে ভেঙে পড়েছে। মার্কিন বাহিনী থেকে প্রশিক্ষিত হয়েও প্রতিরোধ ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর। অনেক আফগান নিরাপত্তা সদস্য পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গতকাল জাতির উদ্দেশে এক টেলিভিশন ভাষণে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ও সেনাদের তালেবানের বিরুদ্ধে এক্যবদ্ধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এবং সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, যে কোনো মুহূর্তে তালেবানদের হাতে পতন ঘটতে পারে আশরাফ গনির সরকারের।
গত সপ্তাহে কান্দাহারের উত্তর ফ্রন্ট লাইন ধরে থাকা পুলিশ প্রধান ৪৫ বছর বয়সী আব্দুল হাই বলেছেন, ‘তারা কেবল আমাদের শেষ করার চেষ্টা করছে।’ কিন্তু আবদুল হাই তালেবানদের প্রসঙ্গে নয়, বরং আফগান সরকারের প্রসঙ্গে একথা বলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, গনির সরকার এতটাই অযোগ্য যে, তারা তালেবানদের হাতে ভূখন্ডটি তুলে দেয়ার বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশে পরিণত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন সুদীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রশিক্ষিত নয় হাজার কোটি ডলারের সুসজ্জিত আফগান বাহিনী তালেবানদের বিরুদ্ধে দিশেহারা হয়ে পড়েছে? ইসলামাবাদে সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ হোসেন, যিনি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর একজন সুপরিচিত বিশ্লেষক, বিবিসিকে বলেন, ‘এটা ঠিক তারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে, বিশেষ করে তাদের স্পেশাল ফোর্স ইউনিট বিভিন্ন সময়ে তালেবানের বিরুদ্ধে ভালোই লড়াই করেছে। কিন্তু সেগুলো তারা করেছে যখন আমেরিকানরা তাদের সাথে ছিল। কিন্তু আমেরিকানরা চলে যাবার পর যে নতুন পরিস্থিতি তাদের সামনে তৈরি হয়েছে তার জন্য আফগান সৈন্যরা প্রস্তুত ছিল না।’
জাহিদ বলেন, ‘তালেবানের মত একটা অত্যন্ত পটু, অভিজ্ঞ একটি লড়াকু গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধের জন্য যে সরঞ্জাম, রসদ, মনোবল প্রয়োজন তা আফগান সেনাবাহিনীর নেই। সেই সাথে রয়েছে জাতিগত বিভেদের সমস্যা। সিংহভাগ সিপাহী পশতুন জাতিগোষ্ঠীর, কিন্তু সিনিয়র অফিসারদের সিংহভাগ জাতিগত তাজিক। এ নিয়ে একটা রেষারেষি, মনোমালিন্য সবসময় রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আফগানিস্তানের শাসক এলিটদের মধ্যে যে অব্যাহত বিভেদ সেটি বিশ্বের কোনো জাতীয় সেনাবাহিনীর মনোবলের জন্য নেতিবাচক।’
জাহিদ আরও বলেন, ‘পাশাপাশি রয়েছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব পর্যায়ে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। এটা প্রায় ওপেন সিক্রেট যে, কাগজে কলমে সেনাবাহিনীর যে সংখ্যা দেখানো হয়, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে কম।’ আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে আসছে মার্কিন সরকার। সেনাদের জন্য রাখা বরাদ্দ অর্থ অবৈধভাবে আফগান কমান্ডাররা নিয়মিত নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছে। কালো বাজারে বেঁচে দিয়েছে ভারী অস্ত্র। এমনকি সেনা সংখ্যা নিয়ে ভুলভাল তথ্য প্রকাশ করেছে।
এমন খবরও দেশ-বিদেশের গণ্যমাধ্যমে বেরিয়েছে যে, অনেক জখম সেনা সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসা বা এমনকি খাবারের অভাবে মারা গেছে। অনেক সময় লড়াইয়ে নিহত এবং জখম সহযোদ্ধাদের হাসপাতালে নেওয়ার যানবাহন পর্যন্ত সৈন্যরা পায় না। এসব নিয়ে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সেইসাথে, এটাও সত্যি যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে মাত্রায় প্রাণহানির শিকার আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশ হয়েছে তা যে কোনো দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মনোবলের জন্য খারাপ। ২০০১ সাল থেকে তালেবানের সাথে লড়াইতে যেখানে ৭ হাজার ন্যাটো সৈন্য মারা গেছে, সেখানে ২০০৭ সাল থেকে আফগান পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ৭৩ হাজার। এই মৃত্যুভীতি তাদের আত্মসমর্পণের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, দূরবর্তী বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়মিত রসদ সরবরাহের জন্য এবং মোতায়েন সৈনিকদের মনোবল ধরে রাখার জন্য দক্ষ একটি বিমান বাহিনী আফগানিস্তানের জন্য এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে তালেবান এখন বিমান এবং হেলিকপ্টার টার্গেট করছে। কজন বিমান ও হেলিকপ্টার চালককে তারা হত্যাও করেছে। তাছাড়া, এসব হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান সচল রাখার জন্য যেসব বিদেশি টেকনিশিয়ান আফগানিস্তানে কাজ করে তারা আর থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফলে, আফগান বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, উপায়ান্তর না দেখে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার এখন তালেবানবিরোধী বিভিন্ন উপজাতীয় মিলিশিয়াদের সাহায্য চাইছে। অথচ গত বছর পর্যন্ত এসব মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নিরস্ত্র করার কথা ভাবছিলেন তিনি। আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে কয়েক বছর আফগানিস্তানে ছিলেন, এমন একজন মার্কিন জেনারেল সম্প্রতি মার্কিন রেডিও এনপিআরের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যেটা দুঃখজনক তা হলো কেক পুরোপুরি বেক হওয়ার আগেই ওভেন থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলতে চেয়েছেন যে, আফগান সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি একটি পেশাদার বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার আগেই তাদের ওপর লড়াইয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে ফিরে আসছে আমেরিকানরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক এবং আফগান রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আসিম ইউসুফজাই বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমেরিকানদের কৌশল ছিল আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলোকে কব্জায় রাখা। কিন্তু শহরের বাইরে গ্রাম-গঞ্জ তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব তা স্বীকার করতে চাননি।’
ওয়াশিংটন পোস্ট দৈনিকে সাংবাদিক-বিশ্লেষক ইশান থারুর মতে, ২০০১ সালে তালেবান যখন ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে এখনই তারা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘তালেবানের আক্রমণের মুখে আফগানিস্তান যেভাবে এত দ্রুতগতিতে ভেঙে পড়ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের এক দীর্ঘ ও ধীরগতির পরাজয়।’ সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স, বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।