পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতির অন্যতম উপকরণ পলিথিন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন, বিপনন এবং ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করেই এর দেদার উৎপাদন চলছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর নির্বিকার বসে আছে। অধিদফতরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই পলিথিন উৎপাদন অব্যাহত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে পলিথিন আগ্রাসণের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছর শুধু রাজধানীতেই পলিথিন কারখানা ছিল ৫০০। এক বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭০০। অন্যদিকে সারাদেশে রয়েছে ১৫০০ পলিথিন কারখানা। রাজধানীর সিংহভাগ পলিথিন কারখানা পুরনো ঢাকার অলিগলিতে। এসব কারখানা চলছে পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। কারখানার মেশিন প্রতি পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে মাসে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে তারা। অভিযোগ রয়েছে, মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলিথিনবিরোধী যে অভিযান চালায় তাতে চাঁদা না দেয়ার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। যেসব কারখানা চাঁদা দেয় না শুধু তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। দেখা যাচ্ছে, পলিথিনের রমরমা কারবার চলছে পরিবেশ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের যোগসাজসে।
উন্নত বিশ্বের কোথাও এভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এ উপকরণ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। আমাদের দেশে আইন করে নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই পলিথিনের শত শত কারখানা বহাল তবিয়তে রয়েছে। আইন অমান্যের এমন নজির কোথাও আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। পলিথিন এমনই এক উপকরণ যে, তা পচে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের তৈরি একটি ব্যাগ পচতে বা নিঃশেষ হতে ৪০০ বছর লাগবে। এই পলিথিন যেখানে পড়ে থাকে সেখানের মাটির উর্বরতা থাকে না। কোনো গাছপালা ও ফসল উৎপাদিত হয় না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন এক রাজধানীতেই দেড় কোটি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া হয়। বড় বড় শপিং সেন্টার, মার্কেট, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে পাড়ামহল্লার মুদি দোকান ও রেস্টুরেন্টে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ব্যাগ যত্রতত্র ফেলার ফলে তা নর্দমা ও ড্রেনে পড়ে পুরো ড্রেনেজ সিস্টেম অকেজো করে দিচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে, ভয়াবহ পানিবদ্ধতা। পলিথিন গিয়ে পড়ছে নদী-নালা, খাল-বিলে। এতে নদীদূষণের পাশাপাশি সাগরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষিত করছে। রাজধানীর প্রাণ হিসেবে খ্যাত বুড়িগঙ্গার দূষণ ও নাব্য হারানোর অন্যতম মূল কারণ এই পলিথিন। কয়েক বছর আগে নাব্য ফেরাতে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েও তা সফল হয়নি শুধু পলিথিনের কারণে। তখন বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ছয় ফুট পলিথিনের স্তর রয়েছে। এই স্তর সরিয়ে ড্রেজিং করা সম্ভব নয়। ফলে ড্রেজিং অসমাপ্ত রয়ে যায়। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, রাজধানীর চারপাশের নদী-নালা এবং জেলা শহরের আশপাশের নদ-নদী অচল হয়ে পড়ছে পলিথিনের কারণে। অক্ষয় এই উপকরণটি পুরো পরিবেশকে এক বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। হাটে-মাঠে, ঘাটে, পর্যটন কেন্দ্রসহ এমন কোনো স্থান নেই যেখানে পলিথিন পরিবেশ দূষণ করছে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পরিবেশ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্ঞাতসারে শত শত পলিথিন কারখানা গড়ে উঠলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং এসব অবৈধ কারখানাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাণিজ্য এবং উদাসীনতার কারণে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে পলিথিন কারখানা। পলিথিন যে পরিবেশ দূষণ করছে তা নয়, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জ্বালানিও হয়ে রয়েছে। পুরনো ঢাকায় যেসব ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে সেগুলোর আগুন ছড়িয়ে দিতে পলিথিনের ভূমিকাও রয়েছে।
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতর এক প্রজ্ঞাপনে পলিথিনের সবধরনের ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করেছিল। শুরুতে আইনটির প্রয়োগ হওয়ায় বাজার থেকে পলিথিন প্রায় উঠে গিয়েছিল। পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে তদারকি না থাকায় ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, পলিথিন পুরো পরিবেশকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবেশ দূষণ যেমন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, তেমনি দেশ পলিথিনের ভাগাড়ে পরিণত হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিন নিষিদ্ধের বিধান কার্যকর করা ছাড়া এখন আর উপায় নেই। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও পচনশীল উপকরণের ব্যাগ উৎপাদন করতে হবে। পাটশিল্প গতিশীল করতে পাটের ব্যাগ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাটের ব্যাগ যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি দীর্ঘদিন তা ব্যবহারও করা যায়। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য এবং ব্যাগের চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। ফলে পাটপণ্য বিদেশে রফতানি করে অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমরা মনে করি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন উৎপাদন এবং বিপণন চিরতরে বন্ধ করতে হবে। যেসব কারখানায় পলিথিন উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পলিথিন কারখানাকে ছাড় দেয়া যাবে না। জনসাধারণকেও পলিথিন ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। পলিথিনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।