পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে নিষিদ্ধ পলিথিনের রমরমা বাণিজ্য বেড়েই চলছে। রাজধানীতেই গড়ে উঠেছে ৭ শতাধিক পলিথিনের কারখানা। হাটে-মাঠে-ঘাটে, এমনকি সবার রান্না ঘরে এখন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন আর পলিথিন। অল্প পুঁজিতে পলিথিনের কারখানা করে অনেক লাভবান হওয়া যায় বলে অনেকেই এ অবৈধ ব্যবসায় ঝুঁকছেন। পলিথিন উৎপাদনের মেশিন দেশেই পাওয়া যায়। ফুলসেট মেশিনের দাম সর্বোচ্চ ১৪ লাখ। এসব অধিকাংশ কারখানাতেই ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুতের চোরাই লাইনও রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ লাখ টাকায় একটি পলিথিন উৎপাদনের কারখানা করে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা যায়। এ জন্য দিনে দিনে বাড়ছে পলিথিন কারখানা। গতবছর ঢাকায় ছিল ৫০০ শতাধিক কারখানা। এক বছরেই এ সংখ্যা বেড়ে ৭ শতাধিকে দাঁড়িয়েছে।
নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা দেয়া থেকে শুরু করে এর উৎপাদন ও বিপণনকে ঘিরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কাছ করছে। স্থানীয় মস্তান, রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্য ও পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই কারখানাগুলো পলিথিন উৎপাদন করছে। প্রতিটি কারখানা এই ম্যানেজ খাতে মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা চাঁদা দেয়। এতে মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। চাঁদা না দিলে ওই কারখানায় চলে অভিযান। পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরে, বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
পুরান ঢাকার ইসলামবাগের সূর্যমতির গলিতে ঢোকার পরই একটি ভবনের নিচতলায় দেখা যায় নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা। দু’টি মেশিনে পলিথিন তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। জনি নামের একজন কারখানাটির মালিক। তিনি তখন কারখানায় ছিলেন না। ভবনের দু’তলায় চারজন শ্রমিক পলিথিন ভাঁজ করতে ব্যস্ত।
মূলত প্যাকেজিংয়ের ব্যবসার আড়ালে অনেকে তৈরি করছেন নিষিদ্ধ পলিথিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, এসব কারখানায় দিনে নামমাত্র প্যাকেজিংয়ের কাজ হলেও রাতে চেহারা পাল্টে যায়। রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন। পরে ‘জরুরি রফতানি কাজে নিয়োজিত’ স্টিকারযুক্ত কাভার্ডভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, লকডাউনের সময়ও এসব কারখানা খোলা ছিল। তখন অনেকটা নির্ভাবনায় সারারাত কাজ চলেছে এবং গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।
ইসলামবাগের বাগানবাড়ি রোডে প্রথম ভবনের ২য় গেটের দ্বিতীয়তলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়, উল্টোপাশের ভবনেও রয়েছে পলিথিনের কারখানা। এরমধ্যে ফারুক নামের একজনের রয়েছে একাধিক কারখানা। ইসলামবাগ ক্লাবঘাট রোডে শাহীন বিরিয়ানির উল্টোপাশের গলিতে আছে পাঁচটি পলিথিনের কারখানা। গলির ডানদিকের দ্বিতীয় ভবনের নিচতলায় এবং দোতলায় রয়েছে কামালের কারখানা। এ কারখানায় কর্মরত একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
ইসলামবাগের গলির এক কারখানার ম্যানেজার জয়নাল বলেন, আমরা এই এলাকার নেতাকে (নেতার নাম জানতে চাইলেও বলেননি) টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। নেতাই তার লোকজন দিয়ে পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতরসহ সব কিছু ম্যানেজ করেন। যার একটি মেশিন আছে তাকে দিতে হয় মাসে পাঁচ হাজার, যার দুটি মেশিন তার চাঁদা মাসে দশ হাজার। বেশি মেশিন থাকলে মাসিক চাঁদা আরো বেশি দিতে হয়। এরকম করেই মাসিক চাঁদা নির্ধারিত। টাকা না দিলে ঝামেলা করে। যেসব কারখানা মালিক চাঁদা দেন না তারাই পলিথিনবিরোধী বিশেষ অভিযানের কবলে পড়েন।
বেশিরভাগ কারখানা পুরান ঢাকায় গড়ে উঠলেও লালবাগ, কামালবাগ, শহীদনগর, দেবীদাসঘাট, খাজে দেওয়ান, কিল্লারমোড়, বেগমবাজার, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, বড়কাটারা, ছোটকাটারা, রহমতগঞ্জ, ফরিদাবাদ, মিটফোর্ড এলাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও অবৈধভাবে অনেক পলিথিনের কারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও এবং টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশকিছু কারখানা আছে। আর যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ কারখানা।
ইসলামবাগের বাসিন্দা ফরিদ বলেন, এলাকার ৭০ ভাগ বাড়িতেই কারখানা আছে। বেশিরভাগ কারখানাতেই পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। প্রতিটি কারখানা থেকে রাতে পলিথিন যায় ইমামগঞ্জে। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় সারা দেশে। ইমামগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি কাভার্ডভ্যান নিষিদ্ধ পলিথিন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) গতবছর প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় ১২০০ কারখানা রয়েছে। যার বেশির ভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। এরমধ্যে ঢাকার অলিগলিতে আছে ৫ শতাধিক কারখানা। সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে অবৈধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে কমপক্ষে ১৫০০। এর মধ্যে পুরান ঢাকা এবং বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে রয়েছে ৭ শতাধিক কারখানা।
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতরের এক প্রজ্ঞাপনে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। প্রথমদিকে এ আইনের সফল প্রয়োগের ফলে পলিথিন বাজার থেকে প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আইন প্রয়োগে শিথিলতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে পলিথিনের ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। অবাধে চলছে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া। দৈনন্দিন জীবনের সব কাজে চলছে পলিথিনের ব্যবহার। নিত্যদিনের বাজার সদাই থেকে শুরু করে এক টাকা দামের চকলেট হোক বা লাখ টাকার সোফা সব কিছুর সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে পলিথিন। এসব পলিথিন ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অপচনশীল পলিথিনে ভরাট হচ্ছে পয়োনিষ্কাশনের নালা-নর্দমা। আর তাতে নগরীতে তৈরি হচ্ছে পানিবদ্ধতা। ধূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া চাপা পড়া পলিথিন নষ্ট করছে মাটির গুণাগুণ। পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্যে নদী থেকে সাগরের পানি পর্যন্ত দূষিত হচ্ছে। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে নিষিদ্ধ এ পলিথিনের উৎপাদন চলছে অনেকটা নির্বিঘেœ।
এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও তার পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা একেবারেই নেই। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়। পলিথিন বন্ধ করতে হলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু পরিবেশ অধিদফতর একা পলিথিন বন্ধ করতে পারবে না। তাদের সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পলিথিন আমাদের ভূমি, নদী সব কিছু গিলে খাচ্ছে, সাগর বিষাক্ত করছে। ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তা এবং গলি থেকে পলিথিন বাতাসে উড়ে এক পর্যায়ে জমা হয় ড্রেনে-নর্দমায়। রাস্তার মধ্যে থাকা ড্রেনের মুখে পলিথিনের স্তূপ সবসময়ই চোখে পড়ে। পলিথিন ৪০০ বছরেও পচে না। অর্থাৎ আজ কাজ শেষে যে পলিথিন গলিতে বা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে তা পরিবেশ ধ্বংস করার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পলিথিন একদিকে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে মাটির উর্বরতা কমাচ্ছে, আবার তলদেশে জমা হয়ে নদী ভরাট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।