মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তানের গজনি নগরী দখল করে নিয়েছে তালেবান বাহিনী। এটা হলো এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া দশম প্রাদেশিক রাজধানী। এছাড়া কান্দাহারের কারাগারেও তারা ঢুকে পড়েছে। তালেবানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনি দখল করে নিয়েছে। তারা রাজধানীর ভেতরে তাদের অবস্থানের ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করেছে। তবে সরকারি বাহিনী বলছে, সেখানে এখনো তীব্র লড়াই চলছে। এলাকাটি আফগান রাজধানী কাবুল থেকে ৮০ মাইল দূরে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলেন, গজনিতে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে তীব্র লড়াই হচ্ছে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ের আশপাশে। বিশেষ বাহিনী ও সামরিক বাহিনী তালেবান বাহিনীকে সরিয়ে দিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে তালেবান বাহিনী কান্দাহারের কেন্দ্রীয় কারাগার দখল করে সেখানে আটক থাকা কয়েকশ’বন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছে।
লশকরগাহ আঞ্চলিক পুলিশ সদরদফতরও তালেবান বাহিনী দখল করে নিয়েছে। বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করছেন। অন্যরা সরকারি বাহিনীর দখলে থাকা কাছের গভর্নরের অফিসে সরে গেছেন। তালেবানকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব : তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে তালেবানের বিভিন্ন শহরে হামলা বন্ধের দাবি তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন একটি শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। তালেবান মিলিশিয়ারা এরইমধ্যে দেশের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর ১০টিই দখল করে নিয়েছে। মার্কিন সেনারা দেশটি ছেড়ে চলে গেছে। এ সুযোগে সম্ভাব্য সকল স্থান দখল করার চেষ্টা করছে তালেবান। আশঙ্কা রয়েছে কয়েক মাসের মধ্যেই কাবুলের পতন ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগান সরকার।
সেনাপ্রধান বরখাস্ত : সেনাপ্রধান ওয়ালি মোহাম্মাদ আহমাদজাইকে বরখাস্ত করেছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। মাত্র দুই মাস আগে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। জেনারেল হেবাতুল্লাহ আলীজাইকে নতুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এতদিন আফগান বিশেষ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা সরে যাওয়ায় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল দখলে নিয়েছে তালেবান। এ অবস্থায় দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভ‚মিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর জেনারেল আহমাদজাইকে সরিয়ে দেওয়া হলো। বিভিন্ন স্থানে তালেবানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রচন্ড সংষর্ষ চললেও সেনাপ্রধানকে কোনো ফ্রন্ট পরিদর্শন করতে দেখা যায়নি। এমন অভিযোগ ওঠার পর দেশটির একাধিক সংসদ সদস্য তাকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
যৌথ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে চীন ও রাশিয়া!
এদিকে আফগানিস্তানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে চীন এবং রাশিয়া মধ্যে। মধ্য এশিয়ায় এ দুটি দেশকে অর্থনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু তাদের দ্বোরগোড়ায় তালেবান গোষ্ঠীর পায়ের শব্দ। এ অবস্থায় তারা ক্রমশ কাছাকাছি চলে আসছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো একেবারে বিদায় নেয়ার পথে। তাদের পরে এখন এখানে যৌথভাবে অভিযান চালাতে পারে তালেবান। এ জন্য জোটও গঠন করতে পারে। এরই মধ্যে উভয় দেশের ১০ হাজার সেনা মহড়া চালাচ্ছে। অনলাইন নিক্কি এশিয়া’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, মধ্য এশিয়ায় নিরাপত্তার যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এ দুটি দেশ যৌথভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ চালাতে পারে। অন্যরা বলছেন, এমন অংশীদারিত্ব দ্রæততার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রূপ নেবে। উভয় দেশের কমপক্ষে ১০ হাজার সেনা এখন চীনের নিঙসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও সাঁজোয়া যান। সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে এরই মধ্যে তারা মহড়া শুরু করেছে। নিজেরা শত্রæ নিশানাকে টার্গেট করে হাজার হাজার সমরাস্ত্রের গোলা নিক্ষেপের মহড়া বা রিহার্সেল করছে। পাঠানো হচ্ছে যৌথ বোমা হামলা মিশনে যুদ্ধবিমান। শত্রæতাপূর্ণ অবস্থানে স্থলপথে চালানো হচ্ছে হামলার মহড়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই মহড়া নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংকল্প এবং সক্ষমতার মহড়া চলছে বলে বলা হয়েছে। তারা যৌথভাবে ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য এই মহড়া চালাচ্ছে। এখানে উল্লেখ করার বিষয় হলো, চীন এবং রাশিয়া এই মহড়া এমন এক সময়ে চালাচ্ছে, যখন তালেবানরা আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে।
কোনো কেনো হিসাবে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের ৪০০ জেলার অর্ধেকেরও বেশি এখন নিয়ন্ত্রণ করে তালেবান। দু’তিন মাস আগে তাদের দখলে যে পরিমাণ জায়গা ছিল, এ সংখ্যা তার দ্বিগুণের বেশি।
এ অবস্থায় বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, আফগানিস্তানের এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্য এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে। এ সপ্তাহে আরো উদ্বেগজনক বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। তা হলো, তাজিকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান। বুধবার রাশিয়ার মিডিয়া বলেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, মধ্য এশিয়ার এই দুটি দেশের সীমান্তগুলোর দখল বুধবার নিজেরা নিয়ে নিয়েছে তালেবানরা।
মধ্য এশিয়ায় চীন এবং রাশিয়া- উভয়েরই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন বাণিজ্যিক বøকের জন্য রাশিয়া এরই মধ্যে আঞ্চলিক দেশগুলোকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করছে। অন্যদিকে এ অঞ্চলে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। এ দুটি দেশই এ অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ফলে আফগানিস্তান নিয়ে তাদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অব ফার ইস্টার্ন স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ভাসিলি কাশিন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অভিন্ন স্বার্থ আছে রাশিয়া ও চীনের। এক্ষেত্রে কোনো দেশটিই চাইবে না মধ্য এশিয়া অস্থিতিশীল হয়ে উঠুক বা সেখানে মার্কিন উপস্থিতি প্রতিষ্ঠিত হোক।
যদি আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে অবনতি হতে থাকে, তাহলে কাশিনের মতে- বেইজিং এবং মস্কো আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান যদি মধ্য এশিয়ায় হামলার লঞ্চিং প্যাড হয়ে ওঠে, তাহলে ওই হুমকি নির্মূল করতে চীন ও রাশিয়া যৌথ সামরিক হস্তক্ষেপ করবে। তিনি পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, যদি আফগানিস্তান বা আশপাশের অঞ্চলকে স্থিতিশীল করা প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে আমরা চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি জোট গঠন হওয়া দেখতে পাব। ওই দেশে এত জটিল অবস্থার মধ্যে কোন দেশই একা ব্যবস্থা নিতে চাইবে না। সূত্র : আল-জাজিরা, নিক্কি এশিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।