বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মধুমতি নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর, রুইজানি ও ভোলানাথপুর গ্রাম। অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মানিকপুর বন বিহার থেকে বয়ে আসা খরস্রোতা মনু নদীর প্রায় ৩১ স্পটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে ১৪টি স্পট মারাত্মক ঝুুঁকিপূর্ণ রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হলে মনু নদীর তীরবর্তী মানুষের ভয়াবহ ভাঙনের কবলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে বন্যা শুরুর আগেই মেরামত কাজ শুরু করবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু হয়নি।
স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে জানান, গত দুই বছরে বর্ষা মৌসুমে মধুমতির ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এই উপজেলার ৪৫ টি পরিবারের শতাধিক ঘর-বাড়ি। এ বছর ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। চলতি বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৬টি গ্রামের ২-৩ কি.মি. এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে নদীর তীব্র ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, ইউএনও রামানন্দ পাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও এখনও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রুইজানি এলাকায় দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের ভাঙনে কাশিপুর গ্রামের ছোরন মিয়া, পান্নু মিয়া, ধনি মোল্যা, ইসলাম শেখ ও জাহাঙ্গীর মোল্যার বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আবার কেউ রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ভাঙন ভয়াল আকার ধারণ করায় নদী তীরবর্তী বসবাসকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর, চরপাচুড়িয়া ও রুইজানি নদী তীরবর্তী এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ,মন্দির, ঈদদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসত-বাড়ি বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর ভয়াবহ ভাঙন রোধে কার্যকারী পদক্ষেপের আবেদন জানালেও ভ‚মিকা রাখছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, গোপালনগর থেকে পাল্লা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কি.মি. নদীর মাঝ বরাবর বিশাল চর জেগে উঠায় স্রোতপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এতে প্রবল বেগে নদী তীরে ঢেউ আঁচড়ে পড়ে নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলো ক্রমেই ভাঙনের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারে তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন সুজন জানান, নদী ভাঙন রোধে কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করা হয়েছে বলে জানান। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানোর জন্য নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং দুই এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে জানান। তাছাড়া ভোলানাথপুর এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠান হয়েছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদতা জানান, গত ২০-২১ অর্থ বছরে ২১ জুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি(একনেক)’র বৈঠকে মনু নদী ভাঙন রোধে ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। কিন্তু বর্ষাকাল চলে আসলেও কাজের ধীরগতি দেখে হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই প্রকল্পের কাজ পর্যায়ক্রমে চলতি বছরের জুন মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজের অগ্রগতি তেমন নেই বললেই চলে।
জানা যায়, জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী প্রতিবছর প্রবল স্রোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লন্ডভন্ড করে দেয় জনপদ। প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল চলমান থাকে। ফলে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানি বাড়লেই মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
মনু নদী তীরের বাসিন্দা কাউকাপন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান চন্দ্র দে ও সাবেক মেম্বার মোশাহীদ আলী জানান, ২০১৮ সালের সৃষ্ট ভাঙনে প্রায় শতাধিক দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে ৪০ জন দোকান মালিক ভিটেমাটি হারান। তাছাড়া রাস্তার বেশির ভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন শিকদার জানান, বর্তমানে মনু নদী কুলাউড়া অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সাড়ে ৪৫০ মিটার স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীর গভীরে ফেলে ডাম্পিং কাজ শুরু করা হচ্ছে। ব্লক তৈরি এবং অন্যান্য কাজ বৃষ্টির জন্য ঠিকাদাররা আপাততো করতে চাচ্ছে না। সামনে শুষ্ক মৌসুম আসা মাত্র ডিজাইন অনুযায়ী ব্লক তৈরি করে নদীর বাঁধ রক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে মনু নদীর বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও ডাম্পিং এর কাজ এখনো মনু নদীতে শুরু হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়মের বাহিরে আমরা কাজ শুরু করতে পারি না। ঢাকা থেকে টাস্কফোর্সের সদস্যরা আসবে কমিটি করে কাজ শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।