পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন কার্যকর ছিল। আগে লকডাউনের বিধিবিধান ঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে ১৪ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়। এই কঠোর লকডাউনেও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেনি; বরং বেড়েছে। কঠোর লকডাউন কাজে আসেনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, যেভাবে তা বাস্তবায়ন করার কথা, সেভাবে করা হয়নি। প্রথম কয়েকদিন কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও পরে আর সেটা বহাল থাকেনি। এরমধ্যেই সরকার ঈদুল আজহার কারণে লকডাউন ৮ দিনের জন্য শিথিল করেছে। এতে পর্যবেক্ষক মহল এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিল বা আলগা করে দেওয়ায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে তাদের আশংকা। সরকার অবশ্য বলে রেখেছে, ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ফের কঠোর লকডাউন কার্যকর হবে এবং ১৪ দিন একনাগাড়ে অব্যাহত থাকবে। তখন তৈরি পোশাকসহ সকল কলকারখানা বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে অন্য সবকিছুই। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত শনিবার সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সরকার কেন কঠোর লকডাউন শিথিল করেছে সে ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, কোরবানিকে ঘিরে পরিচালিত হয় আমাদের বিশাল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। অনেকে গরু প্রতিপালন করেছে। এই সবকিছু বিবেচনা করে চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করতে হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঈদের পর ১৪ দিন যে-লকডাউন আসছে, তা কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
ঢিলেঢালা লকডাউন বা শিথিল লকডাউনের পরিণাম ভালো হয় না। যে উদ্দেশ্যে লকডাউন, তা অর্জিত হয় না। তাই কোনো দেশেই নামকাওয়াস্তে লকডাউন করা হয় না। সর্বোচ্চ কঠোরতায় সেখানে লকডাউন কার্যকর করা হয়। আমাদের দেশেই কেবল ব্যতিক্রম দেখা যায়, যার ফল হয় অত্যন্ত নেতিবাচক। গত ঈদুল ফিতরে লকডাউন শিথিল করে গণযাতায়াত উন্মুক্ত করে দেওয়ায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বেড়েছিল। এবারও তেমন অভিজ্ঞতারই পুনরাবৃত্তি হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এনিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। ঈদপরবর্তী কঠোর লকডাউনের ব্যাপারে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন দ্বিমত প্রকাশ করেছে। তারা রফতানি আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা জানিয়ে পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে। এর আগেও পোশাক কারখানা এ সুবিধা পেয়েছে। অন্যান্য শিল্পকারখানা পায়নি। এক যাত্রায় এই পৃথক ফল নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন যখন সবচেয়ে কার্যকর উপায়, তখন কারখানা খোলা রাখলে সংক্রমণ বাড়ার আশংকা থাকেই। যে সব শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করে, তাদের করোনা পরীক্ষা, পজিটিভ হলে চিকিৎসা এবং টিকার অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। কথা উঠতে পারে, পোশাক কারখানার মালিকরা কি শ্রমিকদের পরীক্ষা, চিকিৎসা ও টিকার জন্য কোনো ব্যয়ভার বহন করেন? অতি ঝুঁকির মধ্যে কাজ করার জন্য তারা কি শ্রমিকদের কোনো আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে থাকেন? যা কিছু করার, সরকারই করছে। আর মালিকরা পয়সা কামানোর জন্য ধান্ধা করে যাচ্ছেন। তাদেরও শ্রমিকদের জন্য, জনসাধারণের জন্য কিছু করা উচিৎ। গত কয়েক দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে ভয়াবহ চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে এবং ঈদপরবর্তীতে পরিস্থিতির অবনতির যে আশংকা করা হচ্ছে, তাতে ১৪ দিন সকল কারখানা বন্ধ রাখলে এমন বড় কোনো ক্ষতি হবে না। তারপরও যদি শ্রমিকদের আনা-নেওয়া, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধির মান্যতা নিশ্চিত করা যায় তবে কারখানা চালু রাখার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে বৈকি! মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কোনো কিছু নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু ঈদ উপলক্ষে যাতায়াত ও জনচলাচল উন্মুক্ত করা হয়েছে, সুতরাং করোনা পরীক্ষার বিষয়ে জোর দিতে হবে এবং অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসবে, তাদের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেই কেবল তাদের কর্মস্থলে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। পজিটিভ হলে, দ্রæত আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে। এভাবে ব্যাপক পরীক্ষা ও আইসোলেশনের মাধ্যমে করোনার আশংকিত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। একই সাথে টিকাদানের ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। টিকা করোনার কোনো প্রতিষেধক নয়, তবে কোরোনা মোকাবিলায় এর চেয়ে কার্যকর আর কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধিও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের দেশে খুব কম লোকই কাজ করে। তাদের বাধ্য করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটা করতে হবে। টিকার ব্যাপারে স্বস্তিকর খবর আছে। বিশেষ ও গণটিকাদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভারত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না দেওয়ার কারণে। সরকার ভারত থেকে টিকা না পেয়ে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের জোর চেষ্টা চালায়। এ চেষ্টায় ইতোমধ্যে লক্ষণীয় সাফল্য এসেছে। গণটিকাদান ফের শুরু হয়েছে। জানা গেছে, আগামী দু’মাসের মধ্যে প্রায় দু’ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে। এর মধ্যে আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে ৫০ লাখ ডোজ। আমাদের আরো বহু কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে। কোনো দেশের জনগণের ৮০ শতাংশ টিকার আওতায় এলে সে দেশকে নিরাপদ বলে ধরা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের টিকা সংগ্রহ বাড়ানো কিংবা উৎপাদনে যাওয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো মূল্যে পরীক্ষা ও টিকা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে শহর ও গ্রামে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সকল উপায় ও উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।