মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিদেশী সৈন্য প্রায় পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ায় আফগানিস্তান জুড়ে লড়াই ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে সরকার ও বিদ্রোহী তালেবান প্রতিনিধিরা গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠক করেছেন। দু’পক্ষই কয়েক মাস ধরে কাতারি রাজধানীতে বৈঠক করে চলেছে, কিন্তু বিদ্রোহীরা যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের ফলে আলোচনার গতি হ্রাস পেয়েছে।
আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গতকাল ফঝর সালাতের পর একটি বিলাসবহুল হোটেলে জড়ো হন। তারা দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের আলোচকদের সাথে যোগ দেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইরও দোহায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি কাবুলেই থেকে গেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
‘দোহায় আফগান সরকারের আলোচনা টিমের মুখপাত্র নাজিয়া আনোয়ারী বলেন, ‘উভয় পক্ষের সাথে কথা বলা, তাদেরকে গাইড করা এবং আলোচনার গতি বাড়ানো এবং অগ্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে আলোচনায় দল(সরকার)কে সমর্থন করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এখানে রয়েছেন।
তিনি আশাবাদী হয়ে এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি যে, এটি (বৈঠক) আলোচনার গতি বাড়িয়ে তুলবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই উভয় পক্ষই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবে এবং আমরা আফগানিস্তানে একটি টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ শান্তির সাক্ষী হব’।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে তালেবানরা দেশজুড়ে একের পর এক বিদ্যুঃ বিভ্রাট ঘটিয়ে চলেছে।
আলোচনার আগে আল জাজিরার স¤প্রচারকে তালেবান মুখপাত্র মুহাম্মাদ নাঈম বলেছেন, ‘আমরা সংলাপ, আলোচনা এবং সমঝোতার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের অগ্রাধিকার হ’ল সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান’।‘ সমস্যাগুলো শেষ করার জন্য অন্য পক্ষের অবশ্যই সত্য ও আন্তরিক ইচ্ছা থাকতে হবে’।
নাঈম গতকাল টুইট করে বলেছেন, মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে তালেবান ও সরকার পক্ষের মধ্যে আলোচনা কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
পাকিস্তান গতকাল আংশিকভাবে আফগানিস্তানের সাথে তার স্পিন বোলদাকের সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিয়েছে। দেশটি দক্ষিণাঞ্চলের এ ক্রসিং এলাকাটি গত সপ্তাহে তালেবানরা দখল করে নিলে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
স্থানীয় আধাসামরিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ তৈয়ব বলেন, ‘অন্যদিকে আপেক্ষিক শান্ত থাকার কারণে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে ক্রসিংটিতে বাণিজ্য বন্ধ থাকবে।
তুর্কমেনিস্তানের সীমান্তবর্তী যুদ্ধবাজ নেতা আবদুল রশিদ দোস্তামের দুর্গে গতকাল সংঘর্ষের পর তালেবানরাও উত্তরে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে তুলেছে। গতকাল ফরাসী সরকার নিরাপত্তা অবনতির কারণে রাজধানী থেকে দূতাবাসের জন্য কাজ করা প্রায় ১০০ আফগান নাগরিককে বের করে এনেছে বলে একটি ফরাসী ক‚টনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
ভারত, চীন, জার্মানি এবং কানাডাসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিককে বের করে নিয়ে গেছে বা সা¤প্রতিক দিনগুলোতে তাদের চলে যেতে বলেছে।
আফগানিস্তান জুড়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে, তালিবানরা একাধিক আক্রমণ চালিয়ে কয়েক ডজন জেলাকে তাদের করতলগত করেছে।
আফগানিস্তানের বিশাল অংশ জুড়ে লড়াই ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে কথার যুদ্ধ তীব্রতর হয় যখন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে ‘কিছু কিছু জায়গায় তালেবানদের ঘনিষ্ঠ বিমান সহায়তা প্রদান’ করার জন্য অভিযুক্ত করেন।
পাকিস্তান এ দাবি কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, দেশটি ‘আমাদের নিজস্ব সেনা ও জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তার ভ‚খÐের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে’। এতে যোগ করা হয়েছে, ‘আমরা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে কাজ করার আফগান সরকারের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছি’।
ইসলামাবাদ বর্ধমান সহিংসতা মোকাবেলায় আঞ্চলিক নেতাদের একটি সম্মেলনের আহŸান জানিয়েছিল। তবে পরে ঘোষণা করা হয়েছে যে, দোহার সমাবেশের অগ্রগতি পরিষ্কার এবং হজ ও ঈদুল আজহা শেষে আগামী সপ্তাহে সামিট করা হবে।
৯/১১-এর হামলার পর থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণাত্মক ফলাফল হিসাবে প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশি সেনারা আফগানিস্তানে রয়েছে।
সা¤প্রতিক মাসগুলোতে তারা চিত্র থেকে মূলত অদৃশ্য হয়ে গেছে, তবে তাদের যে উল্লেখযোগ্য বিমান সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, তাদের ছাড়াই আফগান বাহিনী পরাজিত হবে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
তালেবানদের আক্রমণগুলোর গতি এবং মাত্রা অনেককে অবাক করে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য শান্তির জন্য বিদ্রোহীদের বিচারের জন্য সরকারকে বাধ্য করা বা সম্পূর্ণ সামরিক পরাজয়ের মুখোমুখি করা।
আফগানিস্তানের সাথে সব সীমান্ত পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন
এদিকে গতকাল পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের সাথে তার সব সীমান্তে নিয়মিত সেনা মোতায়েন করেছে এবং সব অবৈধ ক্রসিং পয়েন্ট সিল করে দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তান আফগানিস্তানের সাথে তার ছিদ্রযুক্ত সীমান্তে সীমানা বেড়া তৈরি করে চলেছে। কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া এ উদ্যোগের কমপক্ষে ৮৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হ’ল আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসী উপাদান অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং চেকবিহীন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।
আইএসপিআর ডিজি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সা¤প্রতিক সন্ত্রাসবাদের ঘটনাটির আফগানিস্তান পরিস্থিতির সাথে সংযোগ রয়েছে’ তিনি আরো যোগ করেন যে, বেড়া তৈরি কাজ ‘সন্ত্রাসীদের হতাশ’ করেছে।
আরো বিশদ বর্ণনা করে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন যে, ১ মে থেকে ১৬৭টি সন্ত্রাসী ঘটনা সঙ্ঘটিত হয়েছিল, সুরক্ষা বাহিনী ৭ হাজারেরও বেশি আইবিও এবং কর্ডোন ও অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করেছে।
মেজর জেনারেল ইফতিখার বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের নিজস্ব স্টেকহোল্ডারদের তাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে হবে’। ‘আমরা আফগানিস্তান শান্তি প্রক্রিয়ার গ্যারান্টার নই’। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তানের শান্তি আফগানিস্তানের শান্তির সাথে জড়িত। এর আগে, দেশের পূর্ব প্রতিবেশীর সাথে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য আধাসামরিক বাহিনী এবং লেভি ব্যবহার করা হত। সূত্র : ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।